নিউজবাংলাদেশ

গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন

লণ্ডন, ০৭ ডিসেম্বর- পাতানো নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ প্রায় ৬০টি দলকে আনতে না পেরে দেশে আবারও এক তরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পাঁয়তারা করছে শেখ হাসিনার অনৈতিক সরকার। এতে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ সকল দেশের গণতান্ত্রিক অবকাঠামো আজ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে।

বিরোধী দলগুলোকে প্রহসনের নির্বাচনে আনতে না পেরে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যেক আসনে ডামি প্রার্থী দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ডামি প্রার্থী দেয়ার নির্দেশনাই বলে দিচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি কেমন হতে যাচ্ছে! ডামি প্রার্থী দেওয়ার নির্দেশনা ও একইসাথে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার অপবাদ থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনা সরকার দেশের মানুষের সাথে নতুন খেলা শুরু করেছে। ২০১৪ সালের মতো কোনো প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও দলের প্রধান ও অবৈধ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার তরফ থেকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। ফলে সরকারি দলের প্রার্থীরা কেউ তার স্ত্রীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বানিয়ে নিজের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। কেউ নিজের কাজের বুয়াকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। কেউ তার ছেলেকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে বলে বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘ভাইরাল ইস্যু এখন ডামি প্রার্থী। ডামি অর্থ কৃত্রিম, সাক্ষিগোপাল, মূর্তি, কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর নকল যা আসল ব্যক্তি বা বস্তুর উপস্থিতির উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে, সাক্ষিগোপাল, সাজানো, পুতুল এক কথায় ভোটারের সঙ্গে ছলনা! শেখ হাসিনার এই ষড়যন্ত্রের সাথে সরাসরি যুক্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশন। ফলে পৃথিবীর আর কোন দেশে এমন নির্বাচন হয় কিনা তা নিয়ে দেশে-বিদেশে গবেষণা শুরু হয়েছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

বিরোধী দলের উপর দমন পীড়ন

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির উপর চরম দমন পীড়ন চলছে। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে গত ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার পর থেকে দলটির নেতাকর্মীদের মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।  ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফেনী, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মারধর করে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একদফার চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করতে সরকার নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। গ্রেপ্তার অভিযানের নামে চালাচ্ছে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি। নেতাকর্মীদের না পেলে তাদের বাবা, ভাই, আত্মীয়-স্বজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ২৮ অক্টোবরের আগে বা পরে এতো গায়েবি মামলা হয়েছে। যারা মারা গেছে তাদেরকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। হাসিনা সরকার আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে বিএনপিকে শিকার করছে। গত দুই মাসে অস্বাভাবিকভাবে সাক্ষ্য নিয়ে দিনে রাতে শুনানি করে মামলার রায় দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মীসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনায় এসেছে নির্বাচনকালীন সময়ে সব দলের সমান রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়টিও। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক অধীকার ক্ষুন্ন করে। আর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও বলছে, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডই কমিশন সমর্থন করে না।’

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপি’সমাবেশ

১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ওই দিন ঢাকায় সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলছেন, সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে ক্ষমতাসীন দল। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের দিন থেকে তালাবদ্ধ। গুলশান চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় তালাবদ্ধ না হলেও সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায় না। মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতির কারণে দেশের প্রায় সব জেলার অফিসগুলোও নেতাকর্মী শূন্য। সে কারণে পেশাজীবী ও কারাবন্দি নেতাকর্মীর স্বজনদের রাস্তায় নামিয়ে প্রকাশ্যে মাঠের রাজনীতিতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। পাশাপাশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে যোগাযোগও বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাড়া গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে দেশের সব মানুষ ও দল। এসব রাজনৈতিক দল ও মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করবে। এ লড়াই হবে গণতন্ত্র উদ্ধারের লড়াই। মানুষের বাঁচার লড়াই, ভোটাধিকারের লড়াই। এ লড়াইয়ে দেশের মানুষের জয় হবেই।

বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী বিওপি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- হরিপুর উপজেলার গেরুয়াডাঙ্গী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মকলেছ (২৮)। অন্যজন হলেন একই এলাকার বাসেদ আলীর ছেলে জহিরুল ইসলাম (২৫)। সুরমাকে মকলেছের বিষয়টি নিশ্চিত করেন হরিপুর থানার ওসি এ বি এম ফিরোজ ওয়াহিদ ও জহিরুল ইসলামের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিবির হরিপুর কাঠালডাঙ্গী বিওপির কোম্পানি কমান্ডার এন্তাজুল হক। একই সময়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রত্নাই বিওপি এলাকায় একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ওসি ফিরোজ ওয়াহিদ জানান, সোমবার ভোরে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ নাগর নদীর উপশাখা শিরানী নদীতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিজিবির কাঁঠালডাঙ্গী বিওপির কোম্পানি কমান্ডার এন্তাজুল হক বলেন, ভারত সীমান্তের ভেতরে এক বাংলাদেশিকে গুলি করে বিএসএফ। পরে তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তার লাশ এখনও বিএসএফের কাছে আছে। তবে কী কারণে গুলি চালিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয় বিজিবি ও পুলিশ।

বিজিবির ঠাকুরগাঁও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম এইচ হাফিজুর রহমান জানান, বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে দুই বাংলাদেশির নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক হয়েছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভারতে থাকা লাশ বিএসএফ দ্রুত ফেরত দেবে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close