আন্তর্জাতিক

পাতানো নির্বাচন: জিম্বাবুয়ে ও উগান্ডার উপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা

  • বাংলাদেশে আরও বিস্তৃত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।

লণ্ডন, ০৮ ডিসেম্বর- দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন; নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি; ভোটারদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা; বিরোধী দলের সদস্যদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া; মানবাধিকার সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলোর (সিএসও) ক্ষমতা সীমিত করা ও ঘুষ প্রদানসহ বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক কাজে জড়িত থাকার এবং দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে দমনের অভিযোগে জিম্বাবুয়ের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একই কারণে উগান্ডার ওপর আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি আরও বিস্তৃত করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত করায় আমি জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে নতুন মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি ঘোষণা করছি। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারা ২১২(এ)(৩)(সি) অনুসারে, জিম্বাবুয়েতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করায় জড়িত বা দায়ী ব্যক্তিদের ওপর এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

এ ধরনের কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি; ভোটারদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা বা ভোটদানে বাধা দেওয়া; রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্যদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া; গণতান্ত্রিক, শাসন বা মানবাধিকার সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলোর (সিএসও) ক্ষমতা সীমিত করা; ভোটার, নির্বাচন পর্যবেক্ষক বা সিএসওগুলোকে হুমকি বা শারীরিক সহিংসতার মাধ্যমে ভয় দেখানো। এছাড়াও রয়েছে ঘুষ প্রদানসহ দুর্নীতিমূলক কাজে জড়িত থাকা, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে; নির্বাচনী মামলার বিচারের সময় বিচার বিভাগের স্বাধীন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করা; জিম্বাবুয়েতে মানবাধিকারের অপব্যবহার বা লঙ্ঘন করা।এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন।

এ সময় তিনি উগান্ডায় এলজিবিটি সম্প্রদায় এবং জিম্বাবুয়েতে সুশীল সমাজের মতো গোষ্ঠীগুলোকে প্রান্তিককরণের কথা উল্লেখ করেন। গত মে মাসে এলজিবিটিকিউ-বিরোধী আইন প্রণীত হয় উগান্ডায়। আইনে সমকামিতার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়। গেল জুনে আইনটি পাস হওয়ার পর উগান্ডার কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এর আগে, ২০২১ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগেও উগান্ডার কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

গেল আগস্টে এক বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগওয়া। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা ও ভোটে কারচুপি হয়েছে– বিরোধীদের এমন অভিযোগের মধ্যেই পুনরায় ক্ষমতায় আসেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেদেশের কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি কেবল জিম্বাবুয়েতে ২০২৩ সালের আগস্টের নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, দেশটির সর্বসাধারণ নাগরিকদের জন্য নয়।

গত আগস্টে এক বিতর্কিত নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেন জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগওয়া। তবে তার বিরোধীরা ওই নির্বাচনে ‘বিশাল জালিয়াতি’র অভিযোগ করেছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষকরাও বলেছেন, জিম্বাবুয়ের নির্বাচন আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশে আরও বিস্তৃত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা

গত ২৫ জুলাই মাসে নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন,‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে এমন যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।’

তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আমরা মানবাধিকারের ওপর যে কোনো বিধিনিষেধের বিরোধিতা করি। যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক সমাজে অবাধে নিজেদের ভূমিকা পালনে সবার অধিকারকে সমর্থন করে। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে এমন যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত।’

ফলে বলা বাহুল্য শেখ হাসিনা সরকার যে পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করেছে তাতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত হবে। রেব, পুলিশ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত এটা সেনাবাহিনী, নির্বাচন কমিশন, ডিসি, ইউএনওসহ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়াবে।

ইতোমধ্যে কম্বোডিয়ায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ায় এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং কিছু বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দিয়েছে। কম্বোডিয়ার কর্তৃপক্ষ দেশটির রাজনৈতিক বিরোধী দল, মিডিয়া এবং সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে হুমকি ও হয়রানিতে নিয়োজিত। এটি দেশটির সংবিধান এবং কম্বোডিয়ার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার চেতনাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close