কমিউনিটি নিউজ

শিশুদের পর্নোগ্রাফি থেকে সুরক্ষিত রাখতে অফকমের নতুন নীতিমালা

  • এআই দিয়ে বয়স যাচাইয়ের প্রস্তাব

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।

লণ্ডন, ০৭ ডিসেম্বর- অনলাইনে শিশুদেরকে পর্নোগ্রাফি থেকে দূরে রাখতে এআই প্রযুক্তি দিয়ে বয়স যাচাইকরণ ব্যবস্থা’সহ নতুন নীতিমালা করছে ব্রিটিশ মিডিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম। ২০২৫ সাল নাগাদ এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা যাবে বলে আশা করছে অফকম।

২০২১-২০২২ সালে ইংল্যান্ডের শিশুবিষয়ক কমিশনারের দপ্তরের এক গবেষণায় দেখা যায়, সেখানে শিশুরা গড়ে ১৩ বছর বয়সেই প্রথমবার পর্নোগ্রাফি দেখে ফেলে। এর মধ্যে এক চতুর্থাংশের পর্নোগ্রাফির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে ১১ বছর বয়সে। আর ১০ শতাংশ পর্নোগ্রাফি দেখে মাত্র নয় বছর বয়সেই। ফলে শিশুদের পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট প্রচারকারী ওয়েবসাইটগুলো থেকে দূরে রাখতে ও বিভিন্ন অ্যাপে গ্রাহকের বয়স যাচাইকরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ‘অনলাইন সেইফটি অ্যাক্ট’ নামে নতুন যে আইন যুক্তরাজ্য সরকার পাস করেছে, সেখানে পর্নোগ্রাফি দেখার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর।

শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে অফকমের নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইন্টারনেটে কোনো ব্যবহারকারী পর্নোগ্রাফির সাইটে ঢুকতে হলে বয়স ১৮ বছরের ওপরে তা প্রমাণ করতে তাকে নিজের আইডি আপলোড করতে হবে। এখানেই শেষ না, তার ব্যাংক সম্পর্কে বা মোবাইল সেবা দানকারী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। যে ছবি আপলোড করা হবে তা ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বয়স নির্ধারণের প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। ইন্টারনেটে নজরদারিকারী সংস্থা অফকম সোমবার এই গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট বা অনলাইন নিরাপত্তা আইনের অধীনে যৌনতা বিষয়ক কন্টেন্ট থেকে যুব সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ওয়েবসাইট কিভাবে কাজ করবে তার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে এতে। এতে আরও বলা হয়েছে, শিশুদের মধ্যে যারা প্রথম অবাধ যৌনাচার দেখে অনলাইনে তাদের গড় বয়স মাত্র ১৩ বছর। অফকম বলেছে, তারা এসব কম বয়সীদের এক্ষেত্রে সাইটগুলো ব্যবহার বন্ধ করতে চায়।

অফকম বলেছে, ব্রিটেনে প্রাইভেসি আইনের অধীনে সব বয়সীদের নিশ্চয়তা বিষয়ক মেথড ব্যবহার করা হয়। তা তদারক করে ইনফরমেশন কমিশনারের অফিস। ২০২৫ সাল নাগাদ প্রাপ্তবয়স্কদের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ কিভাবে পর্নোগ্রাফি থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখছে সে বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হবে। তা রেকর্ড হয়ে থাকবে। যদি তা না করা হয় তাহলে তারা বিশ্বজুড়ে যে আয় করবে তার শতকরা ১০ ভাগ জরিমানা করা হবে। নিয়ন্ত্রকরা বলছেন, তারা আশা করেন পর্নোগ্রাফিক সাইটগুলো তাদের সঙ্গে কাজ করবে। বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে গৃহীত ব্যবস্থা উচ্চ মাত্রায় কার্যকর থাকবে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী যে প্রাপ্তবয়স্ক তা প্রমাণ দিতে তার ব্যাংক অথবা মোবাইল ফোন সরবরাহকারীদের নিশ্চয়তা দিতে বলতে হবে। ওয়েবসাইটের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইন্সে অথবা এমন একটি কোম্পানিতে তার একটি ছবি আপলোড করতে হবে- যা সেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বয়স বলে দেবে। প্রস্তাবিত নির্দেশিকায় ছবি যাচাইকরণ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এতে ব্যবহারকারীকে নিজের বয়স প্রমাণ করতে পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মত ছবিযুক্ত আইডি ও ক্রেডিট কার্ড দেখাতে হবে।

বর্তমানে এক্ষেত্রে শুধু বয়সসীমা ১৮ বছরের ওপরে কিনা তা জানতে চাওয়া হয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে, তাতে সম্মতি দিয়ে যেকেউ ঢুকে যেতে পারে ওয়েবসাইটে। অথবা শুধু ঘোষণা বা সতর্কতা দেয়া হয় ওই সাইটের উপাদানগুলো যৌনতা সম্পর্কিত। এক জরিপে দেখা গেছে, এক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে বৃটেনের বেশির ভাগ মানুষ। তবে জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অর্ধেকই তাদের ব্যক্তিগত পরিচয় ও তথ্য ওয়েবসাইটের সঙ্গে শেয়ার করা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

মিডিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকমের সিইও মেলানি ডাওয়েস বলেন, “আমরা আশা করছি, অনলাইনে সকল কনটেন্টভিত্তিক সেবা শিশুদেরকে অনলাইন পর্নোগ্রাফি থেকে দূরে রাখতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রাইভেসি সুরক্ষিত রাখার বিষয়টিও মাথায় রাখবে।”

ইনস্টিটিউট অফ ইকোনোমিক অ্যাফেয়ার্স বলছে, বয়স যাচাই বাধ্যতামূলক করলে গ্রাহকের প্রাইভেসি ও অন্যান্য স্পর্শকাতর তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। অন্যদিকে অফকম বলেছে, বয়স যাচাইকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত টিক চিহ্ন বা অনলাইন কেনাকাটা গ্রাহকের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে না। আর নতুন নীতিমালার মানদণ্ড অনুসারে, কেবল সতর্ক বার্তাই যথেষ্ট নয়।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close