নিউজ

এনফিল্ডে পেশাজীবী বাঙালি যুবক খুন, ঘাতক গ্রেফতার, নতুন চাকুরীতে যোগ দেয়া হলো না নাহিদের

সুরমা প্রতিবেদন
লণ্ডন, ১৫ সেপ্টেম্বর – এনফিল্ডে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মকর্তা ব্রিটিশ-বাঙালি যুবক নাহিদ আহমদ। মাত্র ২৬ বছর বয়সী নাহিদের আগামী সপ্তাহেই ডিফেন্স মিনিস্ট্রিতে নতুন কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিলো। সেটি আর হলো না। এর আগেই বসত বিল্ডিংয়ের কাছেই ঘাতকের ছুরি প্রাণ কেড়ে নিলো। নাহিদের সন্দেহভাজন ঘাতক ৪৩ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ ১ ব্যক্তিকে ঘটনার সাথে সাথেই আটক করেছে পুলিশ। নাহিদদের পরিবার যেখানে বাস করেন সেই একই টাওয়ার বিল্ডিংয়ের ৯ম তলার একটি ঘর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নাহিদরা থাকেন ওই টাওয়ারের ১২ তলায়। গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তি ছাড়া হত্যাকাণ্ডের সাথে আর কারো সম্পৃক্ততা আছে বলে মনে করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার হাইবারি কর্ণার ম্যাজিস্ট্রেইটস কোর্টে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হাজির করা হয়।

ঘটনাটি ঘটে ১৩ সেপ্টেম্বর, রোববার রাতের প্রথম প্রহর ১টার দিকে। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ওইদিন রাতে মামার ঘর থেকে মা ও ছোট বোনকে নিয়ে ঘরে ফিরেন নাহিদ। মা ও বোনকে ঘরে তুলে দিয়ে গাড়ি পার্ক করতে যান। আর তখনই ঘটে যায় সেই নির্মম ঘটনা। দুর্বৃত্তের নির্মম ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নাহিদ।
নাহিদের মামা ফরহাদ হোসেন সুরমাকে বলেন, নাহিদ গাড়ি পার্ক করতে যেয়ে প্রথমে তার এক বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। এরপর তার মামাতো এক ভাইয়ের সাথেও কথা বলছিলেন। আলাপের সময় নাহিদ তার বন্ধুকে তখন বলেছিলেন একজন তাকে ডিস্টার্ব করতেছে, হুমকি দিচ্ছে এবং গাড়ির ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর নাহিদ তার এক মামাতো ভাইয়ের সাথে আলাপ করছিলেন ততক্ষণে ওই ব্যক্তি আবার ফিরে আসে এবং নাহিদের মামাতো ভাই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে গাড়ির দরজা ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পান এবং পরক্ষণেই গোঙ্গানীর মতো শব্দ হওয়ার পর নাহিদের আর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি নাহিদের মামাকে ফোন দিয়ে ঘটনার বিববরণ জানান। সঙ্গে সঙ্গে নাহিদের মামাসহ আত্মীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা গিয়ে দেখেন দু’জন পথচারী নাহিদকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন এবং ততক্ষণে পুলিশ ও এম্বুলেন্সও চলে আসে। কিন্তু কোনো চেষ্টায়ই আর কাজ হয়নি। নাহিদ ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ঘটনার কিছুক্ষণ পর আর্মড পুলিশ এসে নাহিদদের টাওয়ার ব্লকের ৯ম তলা থেকে সন্দেহভাজন ঘাতককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।


ফরহাদ হোসেন আরো জানান, নাহিদ তাঁর মা ও বোনসহ পরিবারের সাথে একই ফ্লাটে থাকতেন। ঘটনার দিন রাতে নানার ঘর থেকে নাহিদ মা ও বোনকে নিয়ে আসেন। সাধারণতঃ অন্যদিন নাহিদ খেতে চান না। কিন্তু ওইদিন খুব খিদে লেগেছে বলে খাওয়া দাওয়া করে আসেন। পুরো পরিবারিক বিষয়ের বর্ণণা দিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, নাহিদ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কাজ করতেন। কিছুদিন আগে ব্রিটিশ সরকারের ডিফেন্স মিনিস্ট্রিতে ইন্টারভিউ দিয়ে তিনি কাজের জন্য মনোনীত হন। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে তা আর শুরু করা হয়নি। আগামী সপ্তাহেই এই নতুন কাজে তার যোগ দেওয়ার কথা ছিলো। তিনি আরো বলেন, নাহিদ ছোট থাকতে বাবার সাথে তার মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। নাহিদের দিকে চেয়ে তার মা আর কখনো বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু নাহিদ বড় হওয়ার পর মাকে জোরাজুরি করে বিয়ে দেন এবং সেই তরফে তার এক বোন রয়েছে।
নাহিদদের সাথে পারিবারিক সূত্রে বহুদিন থেকে পরিচয় রয়েছে সাংবাদিক ও লেখক আনোয়ার শাহজাহানের পরিবারের। ঘটনার নির্মমতায় হতবাক আনোয়ার শাহজাহান সুরমাকে জানান, নিহত নাহিদ একাধারে একজন মেধাবী, কর্মট এবং স্মার্ট ও বিনয়ী স্বভাবের যুবক ছিলেন। বলা যায়, অন্যতম একটি সুখী পরিবার ছিলো তাদের। নাহিদের সফলতায় তাদের পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনরা ছিলেন গর্বিত। তিনি নাহিদের রুহের মাগফেরাতা কমনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ইএন১ পোস্ট কোডের হলব্রুক ক্লোজে এক ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকার ফোন কল পেয়ে পুলিশ ও এম্বুলেন্স জরুরীভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে ২৬ বছর বয়সী ব্যক্তিকে জরুরী সেবার বিভিন্ন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত ঘোষণা করা হয়। কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলের কাছ থেকেই হত্যাকারী সন্দেহে ৪৩ বছর বয়সী একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মেট পুলিশের ক্রাইম কমা-ের ইন্সফেক্টর ক্যাথরিন গুডউইনের নেতৃত্বে ঘটনাটির তদন্ত চলছে।
এদিকে, বিবিসির একটি প্রতিবেদনে পুলিশ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয় যে, গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তির কাছ থেকে পুলিশ ঘটনার ২০ মিনিট আগে একটি আক্রমণজনিত ফোন কল পেয়েছিলো।
ধারণা করা হচ্ছে গাড়ি পার্কিং করার সময় ওই ব্যক্তির সাথে কোনো কারণে নাহিদ আহমদের কথা কাটাকাটি বা ঝগড়া হয়ে থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, নাহিদের নানা বাড়ি বিয়ানীবাজারে এবং দাদার বাড়ি নবীগঞ্জে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close