ফিচার

লণ্ডনে পাঠক, শুভাকাঙক্ষীদের সাথে আড্ডায় পিনাকী ভট্টাচার্য: শাহবাগের গ্লানি মুছতে এই জীবন বেছে নেয়া

।। কাইয়ূম আবদুল্লাহ ।।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
বার্তা সম্পাদক সাপ্তাহিক সুরমা

লণ্ডন, ২৭ মে : পিনাকী ভট্টাচার্য। মিডিয়া (সাধারণ ও স্যোশাল) জগতের এক আলোচিত নাম। যিনি স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও রাজনৈতিক অনাচার বিরোধী দুর্দান্ত এক্টিভিস্ট, লেখক-ব্লগার হিসেবে সুপরিচিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জেঁকে বসা আওয়ামী স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লেখালেখি তথা সোচ্চার হওয়ার খেসারত হিসেবে যাকে শেষ পর্যন্ত দেশান্তরী হতে হয়েছে। মাতৃভূমিতে জন্মগতভাবে পাওয়া যথেষ্ট পৈতৃক সুবিধাদি ও উন্নত পেশাগত প্রাপ্তিসহ সবধরনের মোহ-মায়া ত্যাগ করে বাধ্য হয়ে ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। তবুও থেমে নেই তাঁর উদ্দিষ্ট তৎপরতা। অথচ তিনি যে রাজনৈতিক বলয়ে জড়িয়ে ছিলেন সেপথে চললে ভালোই থাকা হতো। কিংবা বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালেও অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারতেন। আর না হলেও ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি দৈহিক উচ্চতা, সিক্সপ্যাক শারীরিক গড়নের এই সুদর্শন ও সুপুরুষ শোবিচ কাঁপানো সেলিব্রেটি অভিনেতা হতে পারতেন (যদিও আড্ডার অনেকে মন্তব্য করেছিলেন ঢাকাই সিনেমায় তাঁর উচ্চতার সমান নায়িকা পাওয়া দুষ্কর হতো)।
কিন্তু শাহবাগের গ্লানি মুছতে তথা প্রায়শ্চিত্ত করতেই যে তাঁর নির্বাসিত জীবন বেছে নেওয়া – তেমনটিই জানালেন লণ্ডনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদের সাথে অনুষ্ঠিত এক তাৎক্ষণিক আড্ডায়। নিরাপত্তার জন্য গানম্যানসহ পকেটে ব্যক্তিগত পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে অভ্যস্থ পিনাকী কয়েক বছর থেকে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি ফ্রান্স থেকে লণ্ডনে আসেন সপ্তাহ দু’একের জন্য। সেই সুযোগে তাঁর বহুল আলোচিত সদ্য প্রকাশিত “স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ” গ্রন্থের প্রকাশনা সংস্থা হরপ্পা আয়োজন করে লেখকের সাথে পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের এক সংক্ষিপ্ত আড্ডার। আর এই কম সময়ের আড্ডায় বিভিন্নজনের প্রশ্নের উত্তরে বর্তমান ফেরারি জীবনের চড়াইউৎরাইয়ের অনেকটাই খোলামেলা তুলে ধরেন ভার্চুয়াল জগতের সেলিব্রেটি পিনাকী ভট্টাচার্য।
আড্ডায় কথা বলার এক পর্যায়ে প্রসঙ্গক্রমে আস্তে করে এও বললেন, ব্যক্তিগত আয় ও পারিবারিক যথেষ্ট স্বচ্ছলতার সুবাদে বেশ ভালোই ছিলেন। দেশে থাকতে তাকে মাসে শুধু ইনকাম ট্যাক্সই দিতে হতো বেশ বড় একটি অঙ্কের; সেই তিনি অন্তত বিক্রিযোগ্য ‘মাল’ নন। এখনকার যাপিত জীবন কষ্টের, খুবই স্ট্রাগলের; তবু জীবনের প্রায়শ্চিত্ত করতেই এমন জীবন বেছে নেওয়া। এই প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়েই অনেককিছু হারাতে হয়েছে তাকে আবার অনেক প্রাপ্তিযোগও যে হয়েছে – এমনটিই জানালেন তিনি। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় হার – পিতৃবিয়োগ। প্রাণপ্রিয় বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে না পারার ব্যথার কথা জানালেন তিনি। আর প্রাপ্তির বিষয়টি ভেঙে না বললেও এটা বুঝতে অসুবিধা নেই যে, স্যোশাল মিডিয়ায় লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার এবং যে কোনো পোস্টে মুহূর্তেই মিলিয়ন লাইক, কমেন্ট তাকে অঘোষিত এক বিপ্লবী বীরের আসনে আসীন করে রেখেছে।
তবু তাঁর মাঝে কোনো অহংবোধ নেই বললেই চলে। যাবার আগে দোয়া চেয়ে বললেন, এই দোয়ার অনেক শক্তি আছে। আরো বললেন, কোনো অসংগতি থাকলে ধরিয়ে দিলে খুশী হবো।

কথায় কথায় শুরু:
১৪ মে, শুক্রবার। বিকেল প্রায় চারটা। একথা সেকথার মধ্যদিয়ে আড্ডার শুরু। যার মধ্যমনি লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য। আড্ডায় বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক ও প্রবীণ প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমানের উপস্থিতি সবার জন্য ছিলো বাড়তি পাওয়া। বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের সঞ্চালনার মাধ‍্যমে আড্ডা শুরু হয়। প্রারম্ভিক কথায় হরপ্পা থেকে ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’ গ্রন্থ প্রকাশের সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট এবং উপস্থিত সবার পরিচিতি তুলে ধরেন তুলে ধরেন শামসুল আলম লিটন।
উপস্থিত ছিলেন লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও পত্রিকা সম্পাদক মুহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, লেখক ও রাজনীতিবিদ ড. মুজিবুর রহমান, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, সলিসিটর বিপ্লব পোদ্দার, এক্টিভিস্ট ডলার বিশ্বাস, লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট নাজমুল হাসান, ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন, ড. কামরুল হাসান, অনলাইন এক্টিভিস্ট নূরুন্নবী, কবি ও লেখক ব্যারিস্টার সায়েম খন্দকার, সুরমার সাহিত্য সম্পাদক কবি সৈয়দ রুম্মান, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও লেখক শাহ আলম, পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক গবেষক মেহবুব ও তার স্ত্রী সানজিদা, সুরমার এমডি এমাদুর রহমান, আলোকচিত্র শিল্পী জি আর সোহেল ও সাংস্কৃতিক এক্টিভিস্ট মো. হায়দার খান।
যেহেতু কোনো ধরণের আনুষ্ঠানিকতা নয়, আড্ডা; তাই স্বভাবতই সবাই ছিলেন রিলাক্সড। কিন্তু ধরণে আড্ডা হলেও জাতীয় ও বৈশ্বিক ভারবাহী বিষয় বৈচিত্রে তা ছিলো অনেকটা ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণও। কথার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে একের পর এক ফ্লাস করছিলো আলোকচিত্রী জি আজ সোহেলের ক্যামেরা। অতিথিরা কথা বলেছেন কয়েক পর্বে এবং ইচ্ছেমতো প্রশ্ন ও অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রায় সবাই। আর ঈদের ঠিক পরের দিনের এই আড্ডায় সুস্বাদু পাস্তা ও পায়েসে রসনা বিলাসও মন্দ ছিলো না।

শামসুল আলম লিটন সঞ্চালনার ফাঁকে ফাঁকে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট তথা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তিপরায়নতাসহ সামাজিক অধঃপতনের বিষয়গুলোও টাচ করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশর ভয়াবহ মাফিয়াতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়। আর সে কারণে ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’ প্রকাশের কারণে এখানকার মাফিয়াতন্ত্রের ধারকদের পক্ষ থেকে নানা হুমকি-ধামকির বিষয়টিও স্থান পায় তাঁর কথায়। তিনি জানান, করোনা ও লকডাউনের কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বড় ধরনের একটি প্রকাশনা উৎসব সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে গ্রন্থটি প্রকাশের পর এর লেখকের তুমুল জনপ্রিয়তা এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশী অনেকের লেখকের সাথে সাক্ষাৎ আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করে করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে অদূর ভবিষ্যতে আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা উৎসব আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন হরপ্পা পাবলিকেশন্স ইউকের কর্ণধার ও সুরমার সাবেক সম্পাদক কবি আহমদ ময়েজ। তিনি তাঁর বক্তব্যে ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’ গ্রন্থটি প্রকাশের আগ্রহ সৃষ্টির কারণ প্রসঙ্গে বলেন, একটি প্রজন্ম বিশেষ করে মাদ্রাসা পড়ুয়াদের আত্মপরিচয় সংকটে ভুগতে দেখা যায়। রাজধানী ঢাকার বেইলি রোড থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত মফস্বল পর্যন্ত এই সংকট প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। এই লেখকের বই তাদের সেই পরিচয় সংকট দূর করতে সহায়ক বলে হবে মনে হয়েছে তাঁর। বিশেষ করে ইতোপূর্বে প্রকাশিত ওই লেখকের ‘মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম’ গ্রন্থে এসব সংকটের অনেক উত্তর তিনি খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান।
এছাড়া উপস্থিতদের মধ্যে অনেকে পিনাকী ভট্টাচার্যের কাছে তাঁর জীবনযাপন ও লেখালেখি বিষয়ে অনেক প্রশ্নের পাশাপাশি বাংলাদেশের চলমান সংকট উত্তরণ সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী ও মতামত জানতে চান। পিনাকী যুক্তি ও উদাহরণসহ সবার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন।
তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিলো যে, আদতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে আওয়ামী রেজিম দিন দিন শক্তিশালীই হচ্ছে। জবাবে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, রেজিম দুর্বল হলে নির্মম হয়। সে হিসেবে তারা দুর্বল হচ্ছে বলা যায়। তাঁর মতে, তাদের যে কোনো বিষয়ে নির্মমতার পথ বেছে নেয়াই তাদের দুর্বলতার প্রমাণ। শক্তিশালী কোনো রেজিমই সহজে তস্তসন্ত্রস্থ হতে পারে না। তাছাড়া ভার্চুয়াল স্যোশাল মিডিয়া তথা ভার্চুয়াল জগত এই সরকারের বেদখলেই চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’ এবং প্রকাশনা বিড়ম্বনা
যতটুকু পড়েছি তাতে মনে হয়েছে বইটি নির্মোহ বাস্তবচিত্রের এক অনুপম স্মারক। গল্পের আদলে লেখা বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তর সময়ের ইতিহাস। পড়তে পড়তে মনে হবে, এ যেন চোখের সামনেই ঘটে যাচ্ছে সবকিছু। অনন্য যাদুকরি লেখনস্টাইল ছাড়া সেটি যে সম্ভব নয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বইটি প্রকাশমাত্রই তা পাবার জন্য বৃটেনসহ ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার পাঠকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। বইটির প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য অনেকে প্রকাশের আগেই অনলাইনে অগ্রীম পেইড বুকিং দিয়ে রাখেন। এই বইটি প্রকাশনার সূত্র ধরেই মূলতঃ এর লেখক পিনাকী ভট্টাচার্যের লণ্ডনে আসা।
দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে প্রকাশে বাঁধা দেওয়ায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে বৃটেন থেকে। আর প্রকাশ করেছে হরপ্পা ইউকে। মনোরম প্রচ্ছদ, হার্ডবোর্ডের বাধাইসহ প্রকাশনার সামগ্রিক বিন্যাস অনন্য ও মানসম্পন্ন। কিন্তু এই সভ্য, মুক্তচিন্তার যুগেও স্বাধীন মতামত প্রদান, লেখা কিংবা গ্রন্থ প্রকাশে বাঁধা দেওয়ার অসভ্যাচারও যে ঘটতে পারে – তা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়।
বইটি প্রকাশ করায় প্রকাশক কবি আহমদ ময়েজকেও কম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়নি। আর তা করেছেন এখানকার তথাকথিত মুক্তচিন্তার ধারক হিসেবে পরিচয়ধারীরাই। তাদের কাছ থেকে ‘নব্য রাজাকার’ এর তকমা পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই বই প্রকাশ এবং আল জাজিরার আলোড়ন সৃষ্টিকারী ডক্যুমেন্টারি ‘অল প্রাইমমিনিস্টার‘স মেন’ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশ এবং স্যোশাল মিডিয়ায় লেখালেখি করায় বাংলাদেশের র‌্যাব-ডিবি-পুলিশের লিস্টে নাম দিয়ে শায়েস্তা করারও হুমকি দেওয়া হয়। আর আরেকজন প্রবাসী লেখক পুলিশি হয়রানির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে আরেকটু বাড়িয়ে বলেন, বাংলাদেশে তাদের (আওয়ামী সরকারের সমালোচনাকারীদের) আত্মীয়-স্বজনকে কি একটু আদরযতœ করা যায় না, নাকি তাও আমাদেরকে বলে দিতে হবে?

পিনাকীর বয়ানে আওয়ামী ‘ফ্যাসিবাদ’, সিপিবি’র চারিত্রিক স্খলন এবং স্বীয় নির্বাসন প্রসঙ্গ:
‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’ গ্রন্থের পরেই যে গ্রন্থটির জন্য দেশে-বিদেশের বাংলাভাষী পাঠকের কাছে লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য আলোচিত ও সমাদৃত সেটি সম্ভবত ‘মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম’। এই ‘বয়ান’ শব্দটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারো বক্তব্য বিদ্রুপ বা হালকা করার জন্য ব্যবহৃত হলেও এই শব্দটি আসলেই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট প্রান্তিক জনপদের মানুষের ঠোঁটের ভাষা। ওয়াজ মাহফিলে আমরা আলেমগণের মুখে ইসলামের বয়ানই শুনে অভ্যস্থ। আর আড্ডায় পরিচিতি পর্বের পরেই এলো তাঁর বয়ানের পালা। বিভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি বললেনও অনেককিছু। তাতে অজানা অনেক চেপে যাওয়া ঐতিহাসিক বিষয়ও ছিলো।
পিনাকী বলেন, আওয়ামী বললেও এর মধ্যে ফ্যাসিজম আছে। তাঁর ভাষায় আওয়ামী শাসন দাঁড়িয়ে আছে ইউটোপিয়ান ব্যবস্থার উপর। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা শান্তি সেনের কথা স্মরণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই রক্ষীবাহিনী যা করেছে তা পাক হানাদারবাহিনীও করেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর এধরনের ঐতিহাসিক সত্য বিষয়-আশয় তাঁর ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’-এ সাহস করে তিনি তুলে ধরেছেন বলেই এই বইটির এতো কাটতি। সেই কাটতি প্রসঙ্গে বলেন, বইটির জন্য প্রায় প্রতিদিনই ইনবক্সে অনুরোধ আসছে, ইতোমধ্যে হাজারের উপরে অনুরোধ আছে এবং অনেককেই তিনি রিপ্লাই দিতে পারছেন না।
বইটির তত্ত্ব-উপাত্ত্ব যোগাড় করতে তাকে যে কতো শ্রম দিতে হয়েছে তা একটি উদাহরণেই বোঝা যায়, অনেকের আগ্রহে তিনি বইয়ের একটি আলোকচিত্র দেখিয়ে বলেন, জানেন এটি কীভাবে কতো দামে সংগ্রহ করা হয়েছে? তখন উপস্থিতদের মধ্যে একজন অবশ্য বলেছিলেন ৫শ’ ডলার। অতঃপর তিনিই জানিয়ে দেন, বিদেশী একটি মিডিয়া সংস্থার কাছ থেকে তিনি সেটি সাড়ে ৫শ’ ডলার ব্যয়ে সংগ্রহ করেন। এছাড়া বেশকিছু ঐতিহাসিক ছবি দৃক লাইব্রেরী থেকেও চড়া মূল্যে সংগ্রহের কথা জানান।
পিনাকী তাঁর বর্তমান নির্বাসিত জীবন প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে থেকে জীবন নিরাপদ ও সম্পদশালী রাখার সুযোগ ছিলো। কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যই এই বই প্রকাশ করেছেন এবং নির্বাসিত জীবন বেছে নিয়েছেন তিনি। একই সাথে স্মরণ করলেন সুপরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সদ্য প্রয়াত তাঁর স্কুল টিচার বাবা শ্যামল ভট্টাচার্যের কথা। তিনি বলেন, কোনোও প্রতাপশালী রাজনৈতিক ছিলেন না তাঁর বাবা । তবু মারা যাবার দিন তাঁর বাবার প্রতি সম্মান জানিয়ে সব দোকানপাট বন্ধ রাখেন বগুড়া শহরের ব্যবসায়ীরা। তাঁর এই বক্তব্য থেকে একটি পরিবারের সামাজিক সম্মান ও সম্ভ্রম সহজেই অনুমেয়।
পারিবারিকভাবে তথাকথিত প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পিনাকী। কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের (সিপিবি) অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। কিন্তু সিপিবি’র আদর্শের সাথে সাম্প্রতিক আচরণের অমিল ও স্খলনের কারণে মোহভঙ্গ ঘটতে শুরু করে তাঁর। ক্ষমতাসীন পার্টির আক্রমণের শিকার হয়েও স্বস্থিবোধ দেখে হতবাক হন তিনি। অবাক হন পার্টির ভেতরে ইসলাম বিশ্বাসের বিরোধীতা দেখেও।
নিজ দলের আপোষকামীতার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার পরপরই ছাত্র ইউনিয়নের একটি বিক্ষোভ মিছিলে মুজিব সরকারের পুলিশবাহিনীর গুলিতে নিহতদের স্মরণে প্রতিবছর সভা করে থাকে তাদের দল। ২০১৩ সালে এমনই এক প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করতে যাচ্ছিলেন তিনি এবং তাঁর বক্তব্যে তৎকালীন মুজিব সরকারের পুলিশবাহিনীকে সরাসরি দায়ী করেছিলেন। তাদের দলের নিয়ম ছিলো নেতাকর্মীদের বক্তৃতা দেয়ার আগে তা দলীয় কমিটিকে দেখিয়ে পাশ করে নেয়া। সেই হিসেবে তিনি যখন তাঁর বক্তৃতার স্ক্রিপ্ট জমা দিলেন তখন দলের নেতৃস্থানীয়রা তা দেখে এডিটের পরামর্শ দিয়ে বলেন — মুজিবের পুলিশবাহিনীর স্থলে বলতে হবে – সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্রাজ্যবাদীদের কাজ। বিষয়টি শুনেই আড্ডার উপস্থিত সবাই হেসে উঠেন।
বাম রাজনীতিক হিসেবে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ সবধরণের প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তাঁর মতে, বর্তমান আওয়ামী সরকার যতো না স্বৈরাচারী তারচেয়েও বেশী ফ্যাসিবাদী। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর এই উপলব্ধি হয়েছে যে, স্বৈরাচার মোকাবেলা সহজ হলেও ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা করা অনেক কঠিন।ফ্যাসিবাদ হঠাতে ইউরোপকে যুদ্ধ করতে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া, তিনি শাহবাগ আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলেন এবং ছিলেন সেসবের খুব কাছের প্রত্যক্ষদর্শী। আর সেই জড়ানোর গ্লানিমুক্ত ও প্রায়শ্চিত্ত করতেই তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান।
তাঁর দেশ ছাড়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে উপস্থিত অনেকের আগ্রহ ও প্রশ্নের জবাবে বলেন, অফিসে থাকার সময় একদিন বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে একজন তাকে ফোন করেন। ওই কর্মকর্তা তাকে বলেন, আপনি আমাদের এখানে আসতে পারবেন? আপনার সাথে কিছু কথা আছে। তখন তিনি জবাব দেন যে, আপনারাই বরং আমার অফিসে চলে আসেন আমি ফ্রি আছি। ওই কর্মকর্তা তাঁর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আবার জানান যে – না, তাকেই যেতে হবে। বিষয়টি তিনি তাঁর এক শুভাকাঙক্ষীকে জানালে তিনি তাকে না যাবার পরামর্শ দেন এবং ওই ব্যক্তির পরামর্শেই তৎক্ষণাত অফিস থেকে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। আর ডিজিএফআই‘র কর্মকর্তারা তার খুঁজে অফিস ও বাড়িতে গিয়ে ব্যর্থ হন। এভাবে কয়েক মাস দেশেই আত্মগোপনে থাকার পর দেশ ছেড়ে চলে আসতে সক্ষম হন পিনাকী।

শফিক রেহমানের জেলজীবনের স্মৃতি:
বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রবর্তক, যায়যায়দিন ও মৌচাকে ঢিলের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী লেখক সৃষ্টি ও সাংবাদিকতার কারিগর শফিক রেহমানকেও ছাড় দেয়নি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। বয়সের ভারে অনেকটা ন্যুজ হলেও মনের দিক থেকে এখনও যথেষ্ট তারুণ্যের প্রকাশ ছিলো তাঁর চেহারায়। টিভি আর্ট শো ‘লাল গোলাপ’ এর এই নির্মাতা ও উপস্থাপক সেদিনও এসেছিলেন ফুলেল প্রিন্টের শার্ট পড়ে। পিনাকী ভট্টাচার্যের ন্যায় বাংলাদেশের এই বিশিষ্ট ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বকেও বলা যায় বিলেতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সমালোচক হিসেবে তাকে একটি সাজানো খুনের হুকুমদাতা হিসেবে মামলায় জড়িয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। দেশ-বিদেশের নানামুখী চাপ এবং তাঁর স্ত্রীর ক্যানসার ধরা পড়ায় জরুরীভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজনে অবশেষ তাকে জামিনে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সরকার। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি লণ্ডনে ফিরে আসতে সক্ষম হন। তাঁর মুক্তিতে বৃটিশ সরকারসহ এখানকার বাংলা মিডিয়া এবং কমিউনিটির অবদানের কথা স্মরণ করে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করেন তিনি। তিনি এখনো সবকিছু ফেইস করতে চান, কিন্তু তাঁর শুভাকাঙক্ষীরা দেশে আর না যাবারই পরামর্শ দেন। শফিক রেহমানের বাংলাদেশে গিয়ে গ্রেফতার হওয়ার বিবরণ শুনে আড্ডার সঞ্চালক শামসুল আলম লিটন সবাইকে মনে করিয়ে দেন যে, একসময় জনমত সম্পাদকসহ ৫ জনের পাসপোর্টও বাজেয়াপ্ত হয়েছিলো।
শফিক রেহমান বলেন, দেশে বর্তমানে আইনের শাসনের নামে অপশাসন চলছে। কেইস-ফেইস করতে গেলে তাঁরও মীর কাশেম, সাকা চৌধুরীর মতো অবস্থা হতো। তিনি বলেন, অনেকে জেলে যাচ্ছে অথচ তারা জানে না তাদের অপরাধ কী? এখনকার ডিজিটাল আইনে কতো লোক যে কারান্তরীণ আছে তাও কেউ জানে না। মৃত্যুরও কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। মৃত্যু; যুদ্ধমরণ (৭১) কিংবা মহামারিতে হোক সবকিছুই সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।
আড্ডার সঞ্চালক শামসুল আলম লিটনের অনুরোধে তিনি পিনাকী ভট্টাচার্যের ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’ গ্রন্থের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বইটি লেখা জরুরী ছিলো। বইটির প্রশংসা করে বলেন, লেখক এখানে মনগড়া কোনো তথ্য দেননি। সবকিছুর দালিলিক টিকাটিপ্পনি দেয়া আছে দেখে আমি ইমপ্রেস্ড আর তা রিয়েল তথ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো দ্বিমত নেই উল্লেখ করে কিছু বিষয়ে ভিন্ন অবজারভেশন নিয়ে ইতোপূর্বে লেখকের সাথে তাঁর কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
‘মৃত্যুদণ্ড’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থের এই লেখক গ্রন্থটি প্রকাশের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসিতে দণ্ডিত মীর কাশেম আলীর পাশের সেলেই ছিলেন। মাত্র ৫শ’ গজের দূরত্বে থেকে তিনি অনেককিছুই দেখেছেন। স্মৃতিচারণ করে বলেন, মীর কাশেম অনেক জনহিতকর কাজ করেছেন। বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে তার অপরাধ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলো এবং পাশের সেলে থাকাবস্থায় তিনি সেই প্রতিবেদনটি তখন রেডিওতে শুনতে পেয়েছিলেন। আর কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে গিয়ে দেহ থেকে মাথা যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো সেই তথ্যও তিনি সেখানকার ডাক্তারদের সূত্রে জানতে পেরেছিলেন।
জেলজীবনের আরো স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সেখানে আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সাথেও দেখা হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের আইন এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানের প্রশংসা করে বলেন, লোকটি অনেক পড়াশোনা করেন, আধুনিক মনস্ক। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রচুর গানও শোনেন, অনেক সময় হেডফোনে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তেন। জেলে তিনি ইমামতিও করতেন। কিন্তু কাশেমপুর জেলে আসার পর একবার সেখানে নারাগঞ্জের আলোচিত ৭ মার্ডারের আসামী (আসলে ৯ মার্ডার, এখানেও ভুল সংখ্যা) থাকায় ইমামতি করতে অস্বীকার করেন।
শফিক রেহমান বাংলাদেশের বর্তমান আর্ত-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের জীবন থেকে মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, সাহিত্যে আদর্শের ছোঁয়া থাকা জরুরী বলেও মন্তব্য করেন এই প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব।

রাজাকারদের চেহারা সুরত:
সাবালক হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের টিভি সিরিজ, মঞ্চ নাটকে যে রাজাকার চরিত্র দেখে আসছি আমরা, তা হলো — ঢোলা পাঞ্জাবী, মাথায় বেঢপ টুপি এবং মুখে ছাগলা দাঁড়ি। রাজাকারের এই সুরত চেহারা শুধু আমারই নয় বাংলাদেশের প্রায় সব বয়সের মানুষের মানসপটে সেই ছবিই আঁকা রয়েছে। ‘চেতনা’র রঙ-তুলিতে আঁকা এই ছবির খুঁত ধরে সাধ্যইবা কার? কিন্তু স্রোত যতোই শক্তিশালী হোক না কেন বিরুদ্ধে সাঁতার কাটার মতো হিম্মতধারী মানুষেরও জন্ম দেয় সময়। পিনাকী ভট্টাচার্য এসময়ের সেই আলোচিত আলোকিত মানুষ যিনি তাঁর ব্যতিক্রমী গবেষণালব্ধ গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম’-এ দেশের বৃহৎ জনশক্তি আলেম সমাজ তথা একটি বিশেষ ধর্মীয়গোষ্ঠীকে নিয়ে ঐতিহাসিক বিভ্রান্তির অনেকটাই অপনোদন করতে সক্ষম হয়েছেন। সেই তিনিই আড্ডায় প্রসঙ্গক্রমে জানালেন – সমাজে রাজাকারদের যে চেহারাসুরত প্রতিষ্ঠিত সেরকম কোনকিছু ছিলো না। আসল সত্য হলো যে, তখন সামরিক আদলে রাজাকারদের আলাদা পোষাক ছিলো।

পিনাকী এবং ইতিহাসখ্যাত নির্বাসিতদের জীবন:
পুরো আড্ডাজুড়ে চুপচাপ শুনেই যাচ্ছিলাম। একবার মনে হয়েছিলো জিজ্ঞেস করবো যে, যারা সাহস করে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন, লেখালেখি বা কথা বলছেন তারাই আবার একসময় দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, চলে যাচ্ছেন। এভাবে দেশ ছাড়লে তাদের চাওয়া পাওয়া বা কাঙিক্ষত বিপ্লব সাধিত হবে কীভাবে? কিন্তু বক্তব্যের একপর্যায়ে সেই উত্তর আমি পেয়ে গেলাম। পিনাকী রুশ বিপ্লবের উদাহরণ দিতে গিয়ে বললেন, রুশ বিপ্লবের নায়ক লেলিনকেও নির্বাসনে যেতে হয়েছিলো। তিনি নিজেই জানতেন না, শেষ পর্যন্ত তিনি বিপ্লবের নায়ক হবেন।
এভাবে প্রাক-ঐতিহাসিক যুগ থেকে শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বিরোধী মতের মানুষদের দেশান্তরী হওয়ার ভুরি ভুরি নজির রয়েছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইমাম খামেনীকেও দীর্ঘদিন ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে।
আর ধর্ম প্রচারের কারণে আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মাতৃভূমি থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে যাওয়ার ইতিহাসতো এক অনন্য নজির।

সমাপ্তি এবং একটি ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্বের পোস্টমোর্টেম
আওয়ামী দুঃশাসন বা বর্তমান অনির্বাচিত ও অগণতান্ত্রিক সরকার বিরোধী যে কারো কোথাও আগমনকে ওই দল ও সরকারের সমর্থকরা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের লেবেল এঁটে দিতে কালক্ষেপন করেন না। পিনাকী ভট্টাচার্যের বৃটেন সফরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেখা গেলো যে, তাঁর বৃটেন ছাড়তে না ছাড়তেই একজন ফেইসবুকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আবিষ্কার করে বললেন – তিনি পিনাকীর লণ্ডন সফরে নতুন ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন।
দীর্ঘ আড্ডায় পিনাকী যা বলেছেন তাতে কোনো রাখঢাক বা লুকোচুরি ছিলো না। সেখানে অনেক বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বও ছিলেন যারা কারোরই অন্ধ ভক্ত নন। তারা কেউই কোনো ষড়যন্ত্র দেখলেন না, কিন্তু ওই বেচারা দূর থেকে ঠিকই গন্ধ পেলেন!
সেই যাই হোক আড্ডা শেষ হতে হতে প্রায় দশটা বেজে গেলো। লেখালেখি ও পারিবারিক কাজে আবার লণ্ডন আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে উঠে গেলেন আড্ডার মধ্যমনি পিনাকী ভট্টাচার্য। লণ্ডন থেকে ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’ গ্রন্থের প্রকাশক কবি আহমদ ময়েজ ও আমি লেখককে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম। গাড়িতে ওঠেও অনেকক্ষণ কথা বলছিলেন পিনাকী তাঁর সহযাত্রীর সঙ্গে। আমরা আড্ডায় শামসুল আলম লিটনের স্মরণ করিয়ে দেওয়া লণ্ডনে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার কথা ভেবে তাদের গাড়ি ছাড়তে অনেকটা তাড়াই দিলাম। কিন্তু পিনাকীর ডেমকেয়ার ভাবে আমরা কোনো পরিবর্তনই দেখতে পেলাম না।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close