নিউজ

ইতালিতে শ্রমিক আমদানি এ মাসেই

।। পলাশ রহমান ।।

ইতালিয় সরকার ২০২৩ সালে ৮২ হাজার ৭০৫ জন নতুন শ্রমিক আমদানির ঘোষনা দিয়েছে। অফিসিয়াল গেজেটও প্রকাশ করেছে। 

প্রধানত দুই শ্রেণীতে শ্রমিক আমদানি করা হবে। সিজন্যাল এবং নন সিজন্যাল। সিজন্যাল শ্রেণীতে ৪৪ হাজার শ্রমিক আমদানি করা হবে। বাংলাদেশসহ মোট ৩৩ দেশ থেকে এসব শ্রমিকরা আসতে পারবেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র কৃষিকাজের জন্য ২২ হাজার নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যারা কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজ করতে আগ্রহী তাদের জন্য এই কোটায় আবেদন করতে হবে। বাকিরা অন্যান্য মৌসুমি কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

সিজন্যাল শ্রমিকদের সাধারণত ৯ মাসের জন্য ভিসা দেয়া হয়। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে নিজ দেশে ফিরে যেতে হয়। যদি কেউ ফিরে না যায়, তাকে অবৈধ অভিবাসী হিসাবে কঠিন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়।

উল্লেখ্য, সিজন্যাল ভিসায় ইতালি এসে অধিকাংশ শ্রমিক সঠিক সময়ে ফেরত না যাওয়ার অপরাধে, ইতালিয় সরকার বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রায় আট বছর নিষিদ্ধ করে রেখেছিলো। যা গত বছর থেকে তুলে নেয়া হয়েছে।
সিজন্যাল ভিসায় ইতালি এসে যারা নিয়মিত কাজ করেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে নিজ দেশে ফিরে যান, পরবর্তি শ্রমিক আমদানির ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং এক সময়ে তারা স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করার সুযোগ পান। 

এ বছর ৬ হাজার ৬শ জন এই শ্রেণীতে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করতে পারবেন। গ্রীষ্ম মৌসুমে ইতালির কৃষি কাজের জন্য প্রচুর শ্রমিক দরকার হয়। এছাড়া পর্যটন এলাকায় হোটেল, রেষ্ট্ররেন্টসহ অন্যান্য অনেক সেক্টরে শ্রমিক প্রয়োজন হয়। সিজন্যাল ভিসায় আসা শ্রমিকরা সাধারণত এসব সেক্টরে কাজ করেন।  একটু পরিশ্রমি হলে এসব খাতে কাজ করে একজন অভিবাসী গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করতে পারেন প্রতি মাসে।
বাংলাদেশি শ্রমিকরা সিজন্যাল ভিসায় ইতালি এসে ফেরত যায় না কেনো?

বাংলাদেশ থেকে একজন শ্রমিক ইতালি আসতে মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। যা মাত্র ৯ মাস কাজ করে পোষানো যায় না। এ ছাড়া অনেক শ্রমিক আসেন যাদের কাছে সঠিক তথ্য থাকে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের ভুল তথ্য দেয় এবং ইতালি এসে তারা বাধ্য হন অবৈধ হয়ে যেতে।

তখন তারা অথৈ পানিতে হাবুডুবু খান। বড় খরচের কথা মাথায় রেখে তাদের আর ফেরা হয় না। দুর্বিষহ জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন।

ফেরত না যাওয়া শ্রমিকরা কী করেন?
সাধারণত ইতালিয় নিয়োগদাতারা কোনো অবৈধ শ্রমিককে চাকরি দেন না। তখন তারা হকারি জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন। বিভিন্ন বড় শহর বা পর্যটন এলাকায় ফুলসহ নানা জিনিস ফেরি করেন এবং সারাক্ষণ চোর পুলিশ খেলায় লিপ্ত থাকেন। 

দুই।
নন সিজন্যাল কোটায় ৩৮,৭০৫ জন শ্রমিক আদানি করা হবে। এ ক্ষেত্রেও মোট ৩৩টি দেশের নাগরিকরা আবেদন করতে পারবেন। তবে সাধারণ ভাবে এই শ্রেণীতে দক্ষ শ্রমিকদের আমদানি করা হয়। যেমন, ভারি যানবহনের চালক, অবকাঠামো নির্মান শ্রমিক, জাহাজ নির্মান শ্রমিক, টেলিযোগাযোগ শ্রমিক, খাদ্য সরবরাহ এবং ব্যবস্থাপনা শ্রমিক, ইত্যাদী।

কারা আবেদন করতে পারবেন? 
ইতালিয় নাগরিক বা অভিবাসী যে কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগদাতা শ্রমিক আমদানির জন্য আবেদন করতে পারবেন, যদি সরকারের বেধে দেয়া শর্তের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠান পড়ে।

বাংলাদেশ থেকে কী কেউ সরাসরি আবেদন করতে পারবেন? 
শ্রমিক আমদানির আবেদন করতে পারবেন শুধুমাত্র নিয়োগদাতারা। শ্রমিক নিজে আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই।

আবেদনের জন্য কী কী প্রয়োজন হয়?
নিয়োগদাতার বার্ষিক আয় ব্যায়, ট্যাক্স প্রদান, ক্রয় ভাউচার, শ্রমিকের থাকার জায়গাসহ অনেক কিছু দরকার হয়।  তবে সাধারণ শ্রমিকদের জন্য শুধুমাত্র পাসপোর্টের ফটোকপি এবং দক্ষ শ্রমিকের দক্ষতার সনদ দরকার হয়।
আবেদন করতে কতো ইউরো খরচ হয়? প্রতিজন শ্রমিকের জন্য ১৬ ইউরো খরচ হয়। এর বাইরে কেউ যদি আবেদন ফর্ম পুরণ করতে হেল্প ডেস্কের সাহায্য নেয়, তাতে আরো এক থেকে দেড়শ ইউরো খরচ হতে পারে।

কবে থেকে আবেদন করা যাবে?
আগামী ২৭ মার্চ থেকে অনলাইনে আবেদন জমা নেয়া শুরু হবে। চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

বাংলাদেশের জন্য কোনো কোটা আছে?
বিগত বছরে দেশ প্রতি নির্দিষ্ট কোটা বেধে দেয়া হলেও এ বছর তা করা হয়নি। অর্থাৎ কোন দেশ থেকে কতোজন শ্রমিক আসতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এ বছর আবেদন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার নতুন একটা শর্ত বেধে দিয়েছে, যা অতীতে কখনো ছিলো না। নতুন শর্ত হলো নিয়োগদাতাকে প্রথমে শ্রমিকের চাহিদা জানিয়ে কর্মসংস্থান দপ্তরে আবেদন করতে হবে। তারা শ্রমিক সরবরাহ করতে অপারগ হলে একটা সনদ দেবে, যার ভিত্তিতে বিদেশ থেকে শ্রমিক আমদানির আবেদন করা যাবে।

আবেদনের পরে ভিসা পেতে কতো দিন লাগবে?
আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে জনপ্রশাসন অফিস থেকে নুল্লা ওয়াস্তা বা ভিসার অনুমোদন পত্র দেয়া হবে। যা নিজ দেশের ইতালিয় দূতাবাসে জমা দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় আবেদনের যাচাই বাছাই পর্ব সেরে নুল্লা ওয়াস্তা আসতে ৬ মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। যদিও গেজেট বলে মাত্র কুড়ি দিনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close