কমিউনিটি নিউজনিউজ

পাঁচটি গুরুতর অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হলেন আনোয়ারুজ্জামান

  • সম্পদের তথ্য গোপন
  • বিদেশী নাগরিকত্ব
  • হলফনামায় মিথ্যা তথ্য
  • জন্ম তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি
  • প্রিসাইডিং অফিসারদের অর্থ বিতরণ

।। সুরমা প্রতিবেদন।।

লণ্ডন, ২৬ জুন: পাঁচটি গুরুতর অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হলেন শেখ রেহানার প্রার্থী বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের কাছে পরিচিত যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে তিনি কোনো জবাব দেননি। তথ্য প্রমাণ দিয়ে জনগণের কাছে নিজের অবস্থান তিনি পরিস্কার করতে পারেননি।

তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাঁচটি হলো:-

১। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে যুক্তরাজ্যে থাকা তাঁর সম্পত্তির তথ্য তিনি উল্লেখ করেননি। অথচ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বলা আছে, প্রার্থীর সম্পদের হিসাব হলফনামায় দেখাতে হবে। নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রার্থীর দেশে–বিদেশে যেখানেই সম্পদ থাকুক, তা হলফনামায় দেখাতে হবে। কিন্তু তিনি এই আইন ভঙ্গ করে বিদেশে থাকা তাঁর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। প্রশ্ন হলো- বৈধ সম্পদ হলে তিনি কেন তাঁর বৈধ সম্পদের তথ্য লুকাবেন? এটা তো লুকানোর কোনো বিষয় নয়। সাধারণত নির্বাচন কমিশন প্রার্থীর হলফনামার তথ্য যাচাই–বাছাই করে না। তবে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে তথ্য–উপাত্ত দিলে নির্বাচন কমিশন তা খতিয়ে দেখে। এ ধরনের ঘটনায় যদি কোনো তথ্য গোপন করেন এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে তাঁর প্রার্থীতা বাতিল হতে পারে। প্রার্থীতা বাতিলের নজির আছে।

২। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী একজন দ্বৈত নাগরিক। যুক্তরাজ্যের সরকারি সংস্থা কোম্পানী হাউজের ওয়েবসাইটে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে তাকে সাতটি কোম্পানীর ডিরেক্টর হিসেবে দেখানো হয়েছে। সবকয়টিতে তাঁর জাতীয়তা ব্রিটিশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলে কোন ঘোষণা দেননি এবং এই মর্মে কোন প্রমাণও পাওয়া যায়নি। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বা নির্বাচন বিধি অনুসারে কোন বিদেশি নাগরিক অথবা দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী ব্যাক্তি বাংলাদেশে নির্বাচনের অযোগ্য বলে ঘোষিত হবেন। সেক্ষেত্রে একটি নাগরিকত্ব (অর্থাৎ বিদেশী নাগরিকত্ব) তাকে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই পরিত্যাগ করার কথা। অথচ তিনি তা করেননি। এ নিয়ে অতীতে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলার দৃষ্টান্ত রয়েছে।

৩। নির্বাচনী হলফনামায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার স্থলে “বিএ (অনার্স) ব্যবসা” উল্লেখ করেছেন। অথচ এমন কোনো ডিগ্রি তাঁর নেই বলে জানা গেছে। একারণে এই সনদের সত্যায়িত অনুলিপি তিনি হলফনামায় সংযুক্ত করেননি। অথচ স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) বিধিমালা অনুসারে সর্বোচ্চ শিক্ষগত যোগ্যতার সত্যায়িত অনুলিপি হলফনামার সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। আর হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে তদন্ত করে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীতা বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

৪। ভোটের আগের দিন মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের প্রার্থীতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তাঁর হলফনামায় জন্মতারিখ ১৯৭০ সালের ১ জুন উল্লেখ করেছেন। অথচ তাঁর এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্রে জন্মতারিখ ১৯৭২ সালের ১ জুন। এসএসসির সনদে উল্লেখিত জন্ম তারিখে ও হলফনামায় দেওয়া জন্মতারিখে গরমিল আছে। শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে এসব দিক তুলে ধরে রিটটি করা হয়েছে।

৫। মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান ও তাঁর অনুগত কর্মীদের বিরুদ্ধে রাতের আধাঁরে নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসারদের বাসায় গিয়ে নগদ অর্থ বিতরণের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যেক প্রিসাইডিং অফিসারকে ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রিসাইডিং অফিসার নিজে ৫০,০০০ টাকা পেয়েছেন বলে সুরমাকে জানিয়েছেন।

এতগুলো গুরুতর অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তিনি কিভাবে বাংলাদেশে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন এবং বিজয়ী হলেন সেটা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনী মনোনয়নপত্রে সম্পদের তথ্য গোপন সম্পর্ক ঢাকার শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে যোগাযোগ করলে তিনি নির্বাচনী ব্যস্ততার কথা বলে জবাবদিহিতা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু নির্বাচনের পরেও গণমাধ্যমকে এসব অনিয়মের বিষয়ে তার বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা যায়নি।

এছাড়া সুনির্দিষ্ট অনিয়ম এবং নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের দায়ে নির্বাচন কমিশন কোন তদন্ত করবে কিনা, কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা কিংবা প্রতারণা অথবা তথ্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নির্বাচিত হওয়া মেয়রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা এ সম্পর্কে জানতে চেয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে সাপ্তাহিক সুরমা তথ্য অধিকার আইন অনুসারে সুনির্দিষ্ট অফিসিয়াল চ্যানেলে জানতে চেয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন সাপ্তাহিক সুরমা’র পক্ষ থেকে পাঠানো এই সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলোর ব্যাপারে কি ব্যবস্থা বা সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় আছে। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে লিখিত যে জবাব দিবে তা সুরমায় প্রকাশ করা হবে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close