বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে লণ্ডনে ‘জিবিএএইচআর’ এর সমাবেশ
- বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের আশংকা।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা।
- বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ।
লণ্ডন, ০৮ ডিসেম্বর: ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) লণ্ডনে ব্রিটিশ ফরেন অফিসের সামনে ‘গ্লোবাল বাংলাদেশীজ এলায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস’ এর উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সমাবেশে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশকে গুম-খুন ও একনায়কতন্ত্রের এক ভয়াল জনপদে পরিণত করেছে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা আওয়ামীলীগ। মায়ের চোখের সামনে থেকে সন্তানকে, বোনের সামনে থেকে ভাইকে, স্ত্রীর সামন থেকে স্বামীকে, সন্তানের সামন থেকে বাবাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুম-খুন করা হচ্ছে। শত শত পরিবারের বেঁচে থাকার অবলম্বন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সরকারী বাহিনীর পরিচয়ে প্রতিদিন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও মত প্রকাশকারীদের তুলে নিয়ে শুধু নির্যাতনই করছে না, খুন করতেও দ্বিধা করছে না ! বক্তারা বাংলাদেশকে একটি অঘোষিত বৃহৎ কারাগার উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো রাষ্ট্র নেই যেখানে বিরোধী দল অথবা মতপ্রকাশের বিরোধিতার কারণে হাজার হাজার মামলা হয় ! বাবা’র সরকার বিরোধী দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকা অথবা মতপ্রকাশের কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সন্তানকে তুলে নিয়ে যায়, ভাইয়ের কারণে ভাইকে, মায়ের কারণে ছেলেকে আটকে রাখা হয়!
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘গ্লোবাল বাংলাদেশীজ এলায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস (জিবিএএইচআর)’-এর উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক মানবাধিকার সংগঠক সাংবাদিক শামসুল আলম লিটন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে গুমের শিকার বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, জিবিএহেইচ আর-এর যুগ্ম আহবায়ক মেজর (অব) সৈয়দ সিদ্দিক, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’র সভাপতি মুসলিম খান, ব্রিটবাংলা নিউজ-এর সম্পাদক ও নিরাপদ বাংলাদেশ চাই ইউকের প্রেস সেক্রেটারী রোকসানা হক তারিন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুফিয়া পারভীন ময়না ফাইট ফর রাইট্স-এর সভাপতি রায়হান উদ্দিন, সেন্টার ফর দ্যা ডেমোক্রেটিক অ্যাণ্ড গুড গভর্নেন্স-এর সেক্রেটারি আব্দুল কাইয়ুম, ইকুয়াল রাইট্স ইন্টার ন্যাশনালের সেক্রেটারী নওশিন মোস্তারি মিয়া প্রমুখ।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক।
গুমের শিকার নির্যাতিত সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল সমাবেশে তাকে অপহরণ ও গুম থাকাকালীন এক বছর নিরাপত্তা বাহিনীর অমানবিক আচরণ,নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি ও পাপিয়া কাণ্ডের মতো দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণেই শেখ হাসিনা সরকার ও তার মাফিয়ারা আমাকে গুম ও হত্যাপ্রচেষ্টা চালায়। গুম থাকা অবস্থায় বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, মাফিয়ারা তাদের স্বার্থে দেশকে বিদেশিদের কাছে বিকিয়ে দিয়েছে। তিনি দেশী-বিদেশী সকলের প্রতি বাংলাদেশে গুমের মতো মানবতাবিরোধী সকল অপরাধের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হবার আহবান জানান।
বাংলাদেশে সরকারী বাহিনী স্বাধীন মত প্রকাশের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, পনেরো বছর থেকে বিনা ভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা আওয়ামী লীগের হয়ে জনগণের টেক্সের টাকায় পরিচালিত পুলিশ,র্যাব’সহ অন্যান্য অনেক বাহিনী ভোটে হস্তক্ষেপ করছে। বক্তারা বিরোধী দলের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীকে জেলে আটক এবং প্রহসনের বিচারে সাজা দিয়ে আগামী জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আরেকটি একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলো দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের মত পরিস্থিতির আশংকা রয়েছে।
পরে গ্লোবাল বাংলাদেশীজ এলায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস নেতৃবৃন্দ বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ করেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি