নিউজ

নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়: নির্বাচন টানছে জাতীয় বেঈমানদের

।। শামসুল আলম লিটন ।।
সম্পাদক, সাপ্তাহিক সুরমা

পুরনো একটি কথা আছে, শয়তানের নাকি সাগরেদের অভাব হয় না। নির্বাচন এলেই নানা রকমের বক্তব্য বিবৃতি আর নানাজনের নানা ভূমিকায় এই পুরনো ধারণা বাস্তব হয়ে ঘুরে ফিরে আসে।

সরাসরি মূল প্রসঙ্গে আসি। এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে চরম এক ক্রান্তিকালে ঘোষণা করা হয়েছে। দশ বছর যাবত ভোটাধিকার বঞ্চিত জাতির কাছে ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার চূড়ান্ত আয়োজন হতে চলেছে এই নির্বাচন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনকে তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনা করছে। ওবায়দুল কাদের বারবার বলেছেন, তারা হেরে গেলে কয়েক লক্ষ নেতাকর্মী একদিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ১৫ বছরের টানা কথিত “উন্নয়নে”র পর এই যখন অবস্থা তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে সরকারি দল কেন অস্তিত্ব বিনাশের আশঙ্কায় আছে।

এদিকে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি, ও আন্দোলনরত জামায়াতে ইসলাম, বাম ও মধ্যপন্থী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় সকলেই একাট্টা হয়েছে‌। শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে এক দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন চলমান। তারা এই অবৈধ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষের সকল দেশ ও শক্তি বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকারের দাবির প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরম সমালোচক ও তার একটা ব্যাপারে প্রশংসা করবেন। সেটা হলো, তিনি নিজের অজান্তে সত্য কথা বলে ফেলেন। স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে আপোষ করে নির্বাচন করলে তারা হবে জাতীয় বেইমান। ৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালে তিনি একথা জনসভায় স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেন। কিন্তু ২৪ ঘন্টা না যেতেই তিনি নির্বাচনে যাবার ঘোষণা দেন। সেই যে তিনি আত্মস্বীকৃত জাতীয় বেইমানের খাতায় নাম লেখালেন, তা তিন যুগ পরেও আর বুঝতে পারলেন না। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায়ই তার এই আত্মস্বীকৃত বিশেষণ বিশেষভাবে আলোচিত হয়।

এখন যখন স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে, সেই নির্বাচনী প্রহসনে যারা যোগ দেবে তারা শেখ হাসিনার ভাষায় জাতীয় বেইমান তথা জাতীয় বেঈমানের অনুসারী হিসেবে ইতিহাসের আরেকটি অধ্যায়ে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করবেন। এটাই স্বাভাবিক। তাফসিল ঘোষণার পর এই বিশেষ কলাম লেখা পর্যন্ত জাতীয় বেইমানের তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি যাদের নাম যুক্ত হয়েছে তার উপর আপনারা চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

এ বছরের জাতীয় বেইমানের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা::
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর প্রতীক) ও মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান অ্যাড. জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বিএনএম’এর এডভোকেট মোহাম্মদ শাজাহান, শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির এমপি আবেদিন, কথিত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, তৃণমূল বিএনপি’র শমসের মোবিন চৌধুরী ও সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকার ইত্যাদি ইত্যাদি।

নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত এই তালিকা হয়তো আরো দীর্ঘ হবে। নির্বাচনের সঙ্গে যেখানে শত বা হাজার কোটি টাকার লেনদেনের কথা আলোচিত হচ্ছে, পাশের দেশের নীরব অথবা সরব সমর্থনের কথা শোনা যাচ্ছে আর গোয়েন্দা সংস্থা আর সশস্ত্র বিভিন্ন বাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই তালিকা কত দীর্ঘ হয় তা দেখার জন্য ভোটাধিকার হারা জনগণ নিশ্চয়ই অপেক্ষা করবেন। তবে এই তালিকা যত দীর্ঘই হোক ভোটের অধিকার বঞ্চিত মানুষের তালিকা ওই একই সঙখ্যায় নির্ধারিত থাকবে। গুটিকয়েক জাতীয় বেঈমান বনাম ১৪কোটি ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষের দীর্ঘ তালিকা। ইতিহাসে যেমন নির্ধারিত হয়ে আছে সিরাজ আর বীর সহযোগীদের উজ্জ্বল অবস্থান। আর অন্যদিকে মীর জাফর আলী খান আর ঘসেটি বেগমদের ঘৃণ্য তালিকা। ইতিহাসের এই বেঈমানদের নাম মানুষ দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করে। একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, সবার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close