নিউজ

অধিকারের আদিলুর-এলানের ২ বছরের কারাদণ্ড- পুলিশ ভ্যানে উঠানোর সময় অসদাচরণ

সুরমা নিউজ।। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গণহত্যা নিয়ে অনুসন্ধানে নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করায় অধিকার সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে তাদেরকে। রায়ের পর তাদের দুজনকে জেলহাজতে নিয়ে যায়। পুলিশ ভ্যানে উঠানোর সময় আদিলুর রহমানের সঙ্গে অসদাচরণ করে। আদালত প্রাঙ্গনে অপেক্ষমাণ সহকর্মীদের প্রতি হাত নাড়তে গেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য জোরপূর্বক তাঁর হাত নামিয়ে দেন। পুলিশ জোরপূর্বক তাঁর হাত আটকে রাখে। এসময় আদিলুর পুলিশের প্রতি অসহায় ও ক্ষুব্দ দৃষ্টিতে প্রতিবাদ জানান।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় দেন। রায় ঘোষণার পর আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদিলুর রহমানের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, বিচারিক আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাননি আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।

২০১৩ সালের ৫ মে রাতে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমন্ত এবং জিকিররত হেফাজত নেতাকর্মীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন কওে গোটা এলাকাকে অন্ধকার বানিয়ে চালানো হয়েছিল গণহত্যা। এই গণহত্যায় কতজন মানুষ জীবন দিয়েছিলেন তাঁর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। গ্রহণযোগ্য কোন তদন্ত হয়নি এই গণহত্যা নিয়ে। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি পাওয়া মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এনিয়ে নিজেদের একটি অনুসন্ধান চালিয়েছিল। অধিকারের অনুসন্ধানে উঠে এসেছিল গণহত্যায় ৬১জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের নাম, ঠিকানা এবং পরিচয় খুজে বের করেছিল অধিকার। এরপরই আগে থেকে সরকারের রোষানলে থাকা অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছিল। এই মামলায় আসামী করা হয়েছিল সংস্থাটির পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে। তাদের দুইজনকেই তখন কারাগারে থাকতে হয়েছিল। পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত ছিলেন তারা। রায় ঘোষণার পর আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের। ওই মামলায় ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার রায়ের মাধ্যমে অধিকারের প্রতি সরকারি ক্ষোভের চুড়ান্ত বহি:প্রকাশ ঘটানো হয়েছে। তারপরও, রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, সাজা বৃদ্ধির জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।

৭২ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ডের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক ৭২টি সংস্থা। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকারসংস্থা রবার্ট এফ কেনেডির ওয়েবসাইটে এই সম্মলিত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে মুক্তি দিতে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নথিভুক্ত করার জন্য প্রতিশোধ হিসেবে আদিলুর রহমান খান এবং এলানকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। স্বাক্ষরিত ৭২টি সংস্থা মনে করে, আদিলুর এবং এলানের বিরুদ্ধে সমস্ত ‘প্রতিশোধ মূলক কাজ’ বন্ধ করা উচিত।  বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সেক্রেটারি ও পরিচালক যথাক্রমে খান ও এলানের বিরুদ্ধে অবিরাম শ্লীলতাহানিমূলক প্রচারণা শুরু করেছে। অধিকার বাংলাদেশে একটি আন্দোলনের সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নথিভুক্ত করে। প্রতিবেদনটি ২০১৩ সালে প্রকাশের পর তাদের আটক করা হয়েছিল। সে সময় আদিলুর রহমান খানকে ৬২ এবং এলানকে ২৫ দিনের জন্য আটক রাখা হয়। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর, ২০১৩ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ‘ভুয়া, বিকৃত এবং মানহানিকর’ ছিল অভিযোগ তুলে তাদের ‘মিথ্যা’ অভিযোগে বিচারিক হয়রানির সম্মুখীন করতে থাকে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ তাদের মামলার শুনানি ত্বরান্বিত করেছে। যার জন্য অধিকারের মতো মানবাধিকার সংস্থাকে দায়ী করেছে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close