কমিউনিটি নিউজনিউজবাংলাদেশ

লণ্ডনে সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে জেরবার মান্নান

  • তড়িঘড়ি অনুষ্ঠান সম্পন্ন।
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া।

।। সুরমা প্রতিবেদন।।

লণ্ডন, ২৮ সেপ্টেম্বর: লণ্ডনে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে নাকাল হলেন বাংলাদেশের অনৈতিক সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী ও নৈশ ভোটের এমপি এম এ মান্নান।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৬:৩০ টায় লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘ইনভেস্ট ইন ইউর রুটস’ নামের একটি সংগঠনের সৌজন্যে প্রবাসী সাংবাদিকদের সাথে পরিকল্পনা মন্ত্রীর এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

কবি ও ছড়াকার দিলু নাসেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বরাবরের মতই তিনি শেখ হাসিনা বন্দনা দিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। শেখ হাসিনা বন্দনা শেষে যথারীতি তিনি তাঁর দলের বন্দনা করে বলেন- আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে সংগ্রামের মধ্যদিয়ে, আওয়ামী লীগ এ দেশকে এবং দেশের মানুষকে যা দিয়েছে আর কেউ দিতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য ও ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে আপনি যাতে ঘরে বসে জমি সক্রান্ত কাজ সম্পাদন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সারাবিশ্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করছে। বিশ্বনেত্রী বলে সবাই তাকে মেনে নিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোন তুলনা নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্ব নাই।

তিনি আরও বলেন, এটা ঠিক ঔপনিবেশিক আইনের কারণে গরীব মানুষ যা পাওয়ার তা পাচ্ছে না। তারপরেও যেটুকু পাচ্ছে শেখ হাসিনার জন্য পাচ্ছে। শেখ হাসিনা তাদের দিচ্ছে। আর কেউ এর চেয়ে বেশি তাদেরকে দিবে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদীরা ক্ষমতায় আসবে। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসবে। দেশ থেকে টাকা পাচার হবে। দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে যাবে। বর্তমানে দেশে কোন অস্থিতিশীল পরিবেশ নেই। এরপর তিনি মানুষের ভোটধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধীকারের দাবীতে আন্দোলনরত বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কটাক্ষ করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘নির্বাচন যেভাবে হচ্ছে, সেভাবেই হবে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে’। পেছন থেকে আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন- ‘নির্বাচন যেভাবে হচ্ছে, সেভাবেই হবে বলতে আপনি কি বুঝিয়েছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মত নির্বাচন হবে’? তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকেন। শোনেও তিনি না শোনার ভান করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশ আছে, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের মত স্যাংশন দিবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘আমি শুনেছিলাম প্রথমে আরও দুই-চারটি রাষ্ট্রের ওপর নাকি আছে। আই অ্যাম নট ভেরি ক্লিয়ার (আমি খুব বেশি পরিষ্কার নই)। প্রত্যেক রাষ্ট্রের একটি কৌশল আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটা…, নামই বলে ফেললাম। তারা হয়তো অন্যদিকে করবে। নট নেসেসারি আমেরিকান ওয়ে (যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়)। যার যার মতো।’

বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে আরেকজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘উনার জেলে থাকার কথা, উনি ঘরে বসে সুযোগ ভোগ করছেন। সরকার তাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। সরকার তাকে অনুকম্পা দেখিয়েছে। কিন্তু সরকারেরও লিমিটেশন আছে। এরপর তিনি আইনের দোহাই দেন’।

‘Q News’ এর পরিচালক সাংবাদিক আবদুল কাইয়ুম প্রশ্ন করেন- ‘আপনি স্বীকার করেন আর না-ই করেন বিএনপি বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল। বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য আপনাদের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা? দেশ-বিদেশে এ নিয়ে অনেক আলোচনা আছে। এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি’? আবদুল কাইয়ুমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- ‘আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। বিএনপিকে আপনি অন্যতম বৃহত্তম দল বলতে পারেন। কিন্তু যদি মাথা গুনতির দিকে যান তাহলে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বৃহত্তম পার্টি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা না আনা আমাদের কাজ না। উই আর নট দিয়ার গার্ডিয়ান (আমরা তাদের অভিভাবক না)। আমরা তাদের দল সৃষ্টি করিনি। তাঁরা নিজেরাই তাদের দল সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পিছনে তাদের অংশীদারিত্ব ছিলো। এটা প্রতিষ্ঠিত বাই ল, বাই উচ্চ আদালত। সুতরাং আমার এখানে বলার কি আছে! তাঁরা অতীতে সরকার গঠন করেছে আবার করুক। কিন্তু সংবিধানকে অবজ্ঞা করে, আইন-কানুন না মেনে, নির্বাচন কমিশনকে অস্বীকার করে এবং বলে এ থাকলে নির্বাচন করবো না, অমুক প্রধানমন্ত্রী থাকলে আমরা নাই, এই ধরণের হঠকারী কথা শুনে নির্বাচন তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। উই ডু আওয়ার জব, দে আর ডু দেয়ার জব (আমরা আমাদের কাজ করব, তারা তাদের কাজ করবে)। এরপর তিনি ইংল্যান্ডের নির্বাচনের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনের তুলনা করেন’। পেছনে বসা সাংবাদিকরা হেসে দেন।

‘TV One’ এর সিনিয়র রিপোর্টার জাকির হোসেন কয়েছ মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন- ‘যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তার তালিকা আপনাদের কাছে আছে কি না। তাতে আপনার নাম আছে কি না? আপনি স্যাংশন পেয়েছেন কি না’? এসময় মিলনায়তনে আবারও হাসির রোল ওঠে। জাকির হোসেন কয়েছের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন- ‘আই হ্যাভ নো আইডিয়া (আমার কোনো ধারণা নাই)। আমেরিকান স্যাংশনের ভয়ে আমরা ভীত নই’। 

‘2A News’ এর পরিচালক সাংবাদিক আবদুল হান্নান প্রশ্ন করেন- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পদ যদি বাজেয়াপ্ত করে কিছু আসে যায় না। এটা বলার আসলে কারণটা কি? যুক্তরাজ্যের ভিসানীতি নির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবে কিনা’? জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন- ‘আমার প্রধানমন্ত্রী, আমার দলের প্রধান, আমার নমস্য নেতা, ডিসিপ্লনড পলিটিশিয়ান উনার মন্তব্যে অ্যাড করা বা মাইনাস করার কিছু নাই। ঠিক আছে? ভিসানীতি আমাদেরকে কিছু করতে পারবে না। তাদের পলিসি তাদের আমাদের পলিসি আমাদের। উই আর অন দ্যা রাইট ট্র্যাক (আমরা সঠিক পথে আছি)’।

এরপর ‘সাপ্তাহিক সুরমা’র চিফ রিপোর্টার হাসনাত আরিয়ান খানসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকরা পরিকল্পনা মন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাইলেও, কাউকে আর কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজকদের পক্ষে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি মুহিব চৌধুরী তড়িঘড়ি অনুষ্ঠান শেষ করেন।

এসময় লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও জৈষ্ঠ সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি রহমত আলী, কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমদ, ১ নং নির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু, নির্বাহী সদস্য সারওয়ার হোসেন, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী, সাংবাদিক সৈয়দ মনসুর উদ্দিন, সাংবাদিক আকবর হোসেন, সাংবাদিক আজিজুল হক কায়েস, সাংবাদিক রেজাউল করিম মৃধা, সাংবাদিক খালেদ মাসুদ রনি, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম ও আমিরুল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে যতজন না সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন, তারচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে মিলনায়তনের বাইরে এসে সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন- ‘সুনামগন্জের যে আসন থেকে তিনি এমপি হয়েছেন সেখানে ভোট হলে তিনি এমপি তো দুরের কথা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারও হতে পারতেন না। শেখ হাসিনা তাঁকে বিনা ভোটে এমপি বানিয়েছেন, পরিকল্পনামন্ত্রী বানিয়েছেন। কাজেই তিনি শেখ হাসিনার বন্দনা করবেন, প্রশংসায় বিগলিত হবেন, শেখ হাসিনার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে পরিকল্পনা মন্ত্রাণালয়ের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রাণালয়ের মন্ত্রী হয়ে তৃতীয় শ্রেণীর নেতাদের মত নির্লজ্জের মত কথা বলবেন, জঘণ্য মিথ্যাচার করবেন, দেশ ও জাতিকে নিয়ে তামাশা করবেন, শেখ হাসিনার সকল অপকর্মের বৈধতা দিবেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি বলে জাতিকে বিভক্ত করবেন, জাতিকে জুজুর ভয় দেখাবেন- এসব মেনে নেয়া যায় না। আমেরিকান স্যাংশনে গোটা জাতিকে তাঁরা লজ্জায় ফেলেছেন’।

লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের একজন মেম্বার বলেন- ‘এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান সাহেব প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে আমার এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, এরপর তিনি যখন লণ্ডনে আসবেন তাঁর আগেই যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও ভোটাধিকার পেয়ে যাবেন। মান্নান সাহেবের কথার সাথে কাজের কোন মিল নাই।’

একজন জুনিয়র সাংবাদিক বলেন- ‘পরিকল্পনা মন্ত্রী যখন কথা বলছিলেন, তখন তাকে  ভীত-সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছিল। তাঁর চোঁখ বলছিলো এক কথা, মুখ বলছিলো আরেক কথা। জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে এরা এখন আমেরিকান স্যাংশনের ভয়ে নিজেরাই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন’।

দর্শক হিসেবে দেখতে আসা একজন বলেন- ‘পরিকল্পনা মন্ত্রী যে বললেন প্রধানমন্ত্রী দেন। প্রধানমন্ত্রী কোথা থেকে দেন? তাঁর ইনকাম সোর্স কী? এই প্রশ্নের তিনি কোন উত্তর দিতে পারবেন?

সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া

‘London Bangla Voice’- এর ফেইসবুক পেইজে আমেরিকান ভিসানীতি, জয়ের সম্পত্তি, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ শেয়ার করলে সেখানে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এমডি নুরুল হক নামে একজন জোড়া জুতার ছবি দিয়েছেন। সরকার ছোটন নামে একজন হাসির ইমো দিয়ে মন্তব্য করেছেন- ‘এতকিছুর পরেও ভোট চুরি চালাইয়া যাওয়ার নিয়ত করতাছে’। বারী মোহাম্মদ নামে একজন মন্তব্য করেছেন- ‘আমেরিকা গিয়ে দৌড়ানি খেয়েছিল এই মন্ত্রী’। তাজ মুরাদ নামে একজন মন্তব্য করেছেন- ‘না বুজে কথা বলছেন সুতরাং অপেক্ষা করুন’। এমডি আবদুল হাই নামে একজন হাসির সাথে কান্নার ইমো দিয়ে মন্তব্য করেছেন- ‘আসলে এদের মাথা এখন ঠিক নাই, তো যাই মুখে আসে তাই বলে দেয়’। কষ্টে ভড়া জীবন ছদ্মনামে একজন মন্তব্য করেছেন- ‘তুমি অনেক বিচার করেছ। এখন তোমার বিচার করবে জনগণ’। হাসান শাহরিয়ার নামে একজন মন্তব্য করেছেন- ‘দেশের এই দুর্বিষহ অবস্থা জেনে শুনে বুঝেও, এতো কিছুর পরেও… এই সমস্ত ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করে রাখুন, এদের বিচার জনতার আদালতে হবে। এরাও রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়েছে’। এমডি ওমর ফারুক নামে একজন মন্তব্য করেছেন-  ‘আওয়ামী লীগের সংগঠনে কোন ভদ্রলোক রাজনীতিবিদ ও নেতাকর্মী নেই। সাধারণ জনগণের ভোটাধিকারের পক্ষে কথা বলার মতো একটি নেতা কর্মীও নেই। বর্তমানে আওয়ামী লীগে যারা রাজনীতি করতেছে তারা সবাই হচ্ছে শেখ হাসিনার পা চাটা দালাল’।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close