নিউজ

জাতিকে খারাপ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে- বিদায়ী প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবের পরিণতি সম্পর্কে শেষ কর্ম দিবসে উপলব্ধি

সুরমা প্রতিবেদন।। আওয়ামী দলবাজির মাধ্যমে বিচার বিভাগকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়া প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিদায়ী বক্তব্যে জানিয়ে গেছেন, বিচার বিভাগে দলীয় প্রভাবে জাতির জন্য কি পরিণতি বয়ে আনবে।

শেখ কর্মদিবসে (৩০ আগস্ট , বৃহস্পতিবার) আওয়ামী আইনজীবীদের দেওয়া সম্বর্ধনার জবাবে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নিজেই বলেছেন, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে ব্যর্থ হলে জাতিকে খারাপ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড উল্লেখ করে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এরপরই সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে তিনি কি দলীয় প্রভাবের উর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন? হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দলীয় প্রভাবের ফলেই খাদিজার মত একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে ফেইসবুকে সরকারের সমালোচনামূলক প্রশ্ন রাখায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে দিয়েছেন। তাঁর মুখ থেকেই বিদায় বেলায় উচ্চারিত হয়েছে বিচার বিভাগ দলীয় প্রভাবে জাতির জন্য খারাপ পরিণতি বয়ে আনে। এছাড়া শেষ কর্মদিবসের আগের দিন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতির মুখে শপথবদ্ধ রাজনৈতিক উক্তির প্রতিবাদ করায়।

বৃহস্পতিবার জীবনের শেষ কর্মদিবসে আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে আওয়ামী অনুগত আইনজীবীরা তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়। অপর দিকে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের একটি বড় অংশ সুপ্রিমকোর্ট বারের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা বর্জন করেছে।

দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে যাচ্ছেন আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে সময় সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি চলবে। সে জন্য আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস।

আওয়ামী আইনজীবীদের দেওয়া বিদায়ী সংবর্ধনা জবাবে তাদের প্রতি নসিহত করেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। নসিহায় বলেন, মানুষ শাসন বিভাগ, আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারাতে পারে। কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে ওই জাতিকে খারাপ সময়ের জন্য, খারাপ দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সংবিধানের রক্ষক। তাই বিচারকদের সাহসী ও সুবিচারক হতে হবে।

এর আগে প্রধান বিচারপতিকে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হয়।

২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ শপথ বাক্য পাঠ করান।

এদিকে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বিদায়ী সংবর্ধনা বর্জন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের  একটি বড় অংশ। বৃহস্পতিবার সকালে আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির বিদায়ী সংবর্ধনায় অংশ না নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে বিদায়ী সংবর্ধনা বর্জন সভা করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সুব্রত চৌধুরী বলেন, আপনারা যখন আইনজীবী ছিলেন তখন এই সুপ্রিম কোর্টে কী করেছেন? তা আইনজীবী সমাজ জানে। প্রধান বিচারপতির দরজায় একজন বিচারপতি লাথি মেরেছেন যা মিডিয়ার প্রকাশিত হয়েছে। আদালত অঙ্গনে মিছিল সমাবেশ নিয়ে যে রায় এখন আমাদের মানতে বলা হচ্ছে, একসময় সেই রায়ই আপনারা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পুড়িয়েছেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে কলুষযুক্ত করতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।  

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, মুক্তমনা বিচারপতি দরকার আছে কিন্তু আওয়ামী লীগের বিচারপতি দরকার নেই। তিনি বলেন, বিচারপতিরা শপথ নিয়ে আইন অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। কিন্তু কিছু বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেন। সংবিধান লঙ্ঘন করছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদলের সভাপতিত্বে ও ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের যুগ্ম কনভেনর মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের সদস্য সচিব সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গিয়াস উদ্দিন আহমদ, আইনজীবী আবেদ রাজা, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব, গোলাম নবী প্রমুখ। এতে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার রাগীব রউফ চৌধুরী, মো. কামাল হোসেন, আইনজীবী মো. আক্তারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক মোরশেদ আল মামুন লিটন, আইনজীবী রেজাউল করীম রেজা,  হুমায়ুন কবীর মনজু, সৈয়দ মো. তাজরুল হোসেন,  মাহমুদ হাসান, মাহবুবুর রহমান খান, সগীর হোসেন লিওন, আবদুল্লাহ আল মাহবুব, শরীফ ইউ আহমেদ, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, মো. জহিরুল ইসলাম সুমন, শহিদুল ইসলাম সপু, মাহফুজুর রহমান মিলন, মিজানুর রহমান, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, সালমা সুলতানা, ফাতেমা আক্তার, আনিসুর রহমান রায়হান, মো. মাসুদুল আলম দোহা, মো. মাকসুদ উল্লাহ, এ কে এম এহসানুর রহমান, মু. কাইয়ুম ইশাসহ শতাধিক আইনজীবী।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close