নিউজ

বাকশাল সরকার ব্যবস্থায় ঝুকছে আওয়ামী লীগ!

  • সংসদের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়ার প্রস্তাব!
  • অস্ত্র হাতে প্রকাশ্য এমপি মোস্তাফিজুরের মিছিল!
  • একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম, তাপসের হুমকি!

সুরমা প্রতিবেদন: আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ আর শাসন ক্ষমতায় দেখতে চায় না। যে কারণে দেশের যেখানেই আওয়ামী লীগ বিরোধী সভা-সমাবেশ হচ্ছে, সেখানেই মানুষের ঢল নামছে। একারণে জনরোষে ভীত হয়ে জনবিরোধী আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন ছাড়াই সংসদের মেয়াদ ৫ বছর বাড়িয়ে নিয়ে দেশে বাকশাল কায়েম করার স্বপ্ন দেখছে। অবৈধ অস্ত্র হাতে প্রকাশ্য আওয়ামী লীগের এমপিরা মিছিল করছে! গণতন্ত্রকামী দেশের সুশীল সমাজের লোকদের বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গণবিরোধী বাকশাল সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দিকেই ঝুঁকছে আওয়ামী লীগ সরকার। সুরমা পাঠকদের মনে থাকবার কথা, বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচিত সংসদের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়ার ঘটনা আগে ঘটেছে। ১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন জাতীয় সংসদে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী, যা দেশে একদলীয় প্রেসিডেন্ট শাসিত বাকশাল ব্যবস্থা চালু করেছিলো, সেই সংশোধনীতে ঐ সংসদের মেয়াদ  ২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫ তারিখ থেকে আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ইতিমধ্যেই প্রায় দুই বছর পার করে ফেলেছিলো। তার অর্থ হচ্ছে জনগণের রায়ের বিষয়ে তোয়াক্কা না করে সংসদ সদস্যরা নিজেদের মেয়াদ নিজেরাই ঠিক করেছিলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেতরে এই ধরণের চিন্তাই এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এই লক্ষেই গত এক দশকে নির্বাচনকে হাসি-তামাশার বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

নির্বাচন ছাড়াই সংসদের মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব ঢাবি শিক্ষকের

করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট স্থবিরতা ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী চাইলে বর্তমান সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধি করতে পারেন বলে প্রস্তাব করেছেন আওয়ামী লীগপন্থী নীল দলের প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী অঙ্গ সংগঠন  মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’র একাংশের সভাপতি ও মুখপাত্র তথাকথিত অধ্যাপক আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও পরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন জামাল উদ্দীন। ২২ মে (সোমবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক মানববন্ধনে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, করোনা মহামারির কারণে দেশ যে কঠিন সময় পার করেছে, অর্থনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে যে সংকটময় মুহূর্ত আমরা অতিক্রম করেছি সেটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে আমি মনে করি, এই সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো দরকার নাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, করোনার দুর্যোগের কারণে এ সরকার দুই বছর ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি। তাই মহাদুর্যোগের বিষয়টি বিবেচনায় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী চাইলেই বর্তমান সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধি করতে পারেন। অন্তত দুই বছর মেয়াদ তো বৃদ্ধি করাই যায়। প্রস্তাবটি বাস্তাবায়নে সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনিক সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি আহ্বান জানান। বর্তমান ‘হানাহানির’ রাজনৈতিক পরিবেশে সরকারের নির্বাচন দেওয়ার কোনো বাধাবাধ্যকতা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগ ক্যাডার ও তথাকথিত শিক্ষক আ ক ম মোজাম্মেল হকের এই কথাগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। সুরমা পাঠকদের মনে থাকবার কথা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরপরই দেশে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ‘গণতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছিলেন। এরপরের ইতিহাস আমাদের সকলের জ্ঞাত বলে পুনরুল্লেখ বাহুল্যমাত্র।

একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম, মেয়র তাপসের হুমকি

মনটা চায় আবার ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসি। যেখানে মুগুর দেয়ার সেটাও জানি। একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম। যে সকল সুশীলরা আমাদেরকে বুদ্ধি দিতে যাবেন সেই সকল সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেবো। ২১ মে (রবিবার) বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। তিনি আরও বলেন, সবাই খালি ইতিহাস ভুলে যায়। ইতিহাস ভুললে চলবে না। ইতিহাসের নির্মম পরিহাস হলো ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। কিন্তু ইতিহাস থেকে যারাই শিক্ষা গ্রহণ করে তারাই সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, নেয়, নিয়ে চলে। ক্যামেরা আছে, অনেক কিছু বলা যাবে না। তা নাহলে একটা  গল্প শোনাতাম। আমার দরকার ত্যাগী, পরীক্ষিত, আদর্শবান নেতাকর্মী। আমার সুশীল দরকার নেই। আমাকে শিক্ষা দেয়ার দরকার নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে শিক্ষা দেয়ার দরকার নেই। আমরা যথেষ্ট শিক্ষা গ্রহণ করে এসেছি। আমাদের শিক্ষা দেয়ার দরকার নেই। কে শিক্ষা দিবে আমাদেরকে? সুতরাং কেউ যদি সুশীল হয় আমরা মনে করবো আপনারা ওই পক্ষ। আপানারা আমাদের পক্ষের না। তাপস বলেন, আমি নগর ভবন থেকে শুনি যে আমার নেতাকর্মীদের গায়ে হাত দেয়া হয়। মনটা চায় ইস্তফা দিয়ে আবার ফিরে আসি। একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম। যেখানে যা মুগুর দরকার, সেটা জানি। আর যেসকল সুশীলরা আমাদেরকে বুদ্ধি দিতে যাবেন সেই সকল সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেবো।

তাপসের বক্তব্য আপিল বিভাগের নজরে এনেছেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম

‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম’- ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্য নিয়ে মানবজমিন ও নিউএজে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন আপিল বিভাগের নজরে এনেছেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে এই বিষয়টি নজরে আনেন। ব্যারিস্টার আমীর বলেন, তার এই বক্তব্যে আনফরচুনেটলি…।’ এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা বক্তব্য ভালো করে পড়ে দেখি। তারপর কী করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। পরে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন।

অস্ত্র হাতে প্রকাশ্য এমপি মোস্তাফিজুরের মিছিল

সোমবার (২২ মে) বিকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের মিছিলে প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে অংশ নেন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে মারধর করা ও এক সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া বাঁশখালীর বহুল আলোচিত সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। মিছিলটি বাঁশখালী থানা ও উপজেলা পরিষদ চত্বর ঘুরে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সমাবেশ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি রিভলবার হাতে মিছিলের সামনেই ছিলেন। এমপি মোস্তাফিজুরের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে মিছিলের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে এমপি মোস্তাফিজুর রহমানকে রিভলবার হাতে মিছিলের সামনে হাঁটতে দেখা যায়। একপর্যায়ে তাঁকে রিভলবারটি নাড়াচাড়া করতে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, মিছিলের সামনে থেকে লোকজন ও গাড়ি সরিয়ে দিচ্ছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। ওই মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হককেও।

যাই হোক, আওয়ামী লীগ সরকার যত চেষ্টাই করুক তাদের বাকশাল কায়েমের স্বপ্ন সফল হবে না। বাংলাদেশের মানুষ অতীতেও বাকশাল মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও মেনে নিবে না। আওয়ামী লীগ সরকার একটি অনির্বাচিত অবৈধ সরকার। একারণে তারা দেশের সাধারণ মানুষের কথা বুঝে না। যে সরকার মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারে না, যে সরকার দেওয়ালের লিখন বুঝতে পারে না, যে সরকার মানুষের প্রয়োজন বুঝতে পারে না, সেই সরকারকে গণশত্রু ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না। এই সরকার আজকে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই সরকার আজকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই সরকার সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। গুম, খুন ও নির্যাতন করে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে সংগ্রাম করছে, তাদেরকে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে অতিক্রম করতে হচ্ছে। তাই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার আজ গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার যুদ্ধে আমাদের যে আশা ছিল, আকাঙ্ক্ষা ছিল, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে সেটাকে ধ্বংস করে দিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও সম্পূর্ণভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলেছে; সেই পুরোনো কায়দায় ১৯৭৫ সালে যে বাকশাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close