নিউজ

ভিপি নুরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ 

।। ইলিয়াস হোসেন ।।

কোনো তরুণ নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী দুরূহ, বিশেষ করে তা যদি হয় বাংলাদেশের মতো পূর্বাভাসের অযোগ্য কোনো দেশে। তবে তরুণ উদীয়মান রাজনীতিক নুরুল হক নুরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আমার কাছে উজ্জ্বল মনে হয়। 
আমার এ ধারণার পেছনে শক্তিশালী কারণ আছে। সে সম্পর্কে পরে আসছি। তবে তার আগে বলে নেই একটি কষ্টের কথা।

ভিপি নুরকে নিয়ে বেশির ভাগ শাসক দলপন্থি গণমাধ্যমেই সমালোচনামূলক প্রতিবেদন এবং লেখালেখি হয়। তার সমালোচনা করা যেতেই পারে। তবে এসব সমালোচনামূলক লেখায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্বেষ থাকে। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসার কারণে যারা তার ওপর আক্রমণ চালান, তারাও কিন্তু অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা। বাংলাদেশে এখনও যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই সংগ্রাম করে জায়গা করে নিচ্ছেন। এ দেশে সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মানোর সংখ্যা এখনো হাতেগোনা। 

বস্তুত, ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণে রাজনৈতিক এবং আদর্শিক।

যারা তার সমালোচনায় মুখর, তাদের একটি বড় অংশই একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক। ভিপি নুরের উত্থান হয়েছে ওই দলটির নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে। নুরের সমালোচকদের একাংশের যুক্তি হচ্ছে, ছাত্রলীগ নাকি মারতে মারতে তাকে নেতা বানিয়ে ফেলেছে। তারা বলতে চান, ভিপি নুরের বড় যোগ্যতা হচ্ছে ছাত্রলীগের মার খেতে পারা। ছাত্রলীগের মার খাওয়াও নাকি এদেশে বড় যোগ্যতা!
বস্তুত, বাংলাদেশের প্রচলিত ধারার রাজনীতির বিপরীতে গিয়ে উত্থান হয়েছে তার। ভিপি নুরের তিনটি বড় সাফল্যের কথা তার কট্টর সমালোচকরাও অস্বীকার করতে পারবেন না।

ভিপি নুরের প্রথম সাফল্য ছিল অরাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জাতির জন্য সর্বনাশা চাকরির কোটাপ্রথা বাতিল করা। সেটা ছিল এ সরকারের সবচেয়ে বড় পিছুহটার ঘটনা। কোটা ছিল মেধাবীদের জন্য বিপর্যকর। তবে সরকারের কায়েমী স্বার্থের জন্য কল্যাণকর। ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনীর বর্বর নির্যাতন সহ্য করে এই আন্দোলনকে সফল করে নূর ইতিহাস সৃষ্টি করেন। নুরের ওপর ছাত্রলীগ এবং সরকার সমর্থকরা এখন পর্যন্ত ২৫ বার  হামলা চালিয়েছে। কিন্তু একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। 

নুরের আরেক সাফল্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে হটিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা। ব্যাপক কারচুপির পরও তাকে পরাজিত করা যায়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি খুব সম্ভবত ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হতেন। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম ডাকসু নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়াই তিনি বিজয়ী হয়ে তার বিরল নেতৃত্বগুনের পরিচয় দেন।

নুরের তৃতীয় সাফল্য অতি তরুণ বয়সেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন। স্বাধীন বাংলাদেশ এতো অল্প বয়সে আর কেউ এ ধরনের সাফল্য পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। নুরের গণঅধিকার পরিষদ এদেশে এখন একটি মূলধারার দলে পরিণত হয়েছে। 
প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে জীবন বাজি রেখে সাহস নিয়ে লড়াই করা ভিপি নুরের মধ্যে আমি অমিত সম্ভাবনা দেখতে পাই। তবে পদে পদে তাকে বাধার প্রাচীর টপকাতে হবে। প্রতিনিয়ত দেখি তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালায় কিছু গণমাধ্যম। এই যেমন বলা হয়, তিনি মোসাদের এজেন্ট মেন্দি সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। সাফাদি যদি মোসাদের এজেন্টই হবেন, তবে কি তিনি প্রকাশ্যে ছবির জন্য পোজ দেন? 

উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়, তরুণ বয়সেই অনেক দেশের সরকারপ্রধান নির্বাচিত হন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন, নিউজিল্যান্ডের সফলতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেন, বর্তমান ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাঁখো তো চল্লিশের কাছাকাছি বা তারও কম বয়সে দেশের হাল ধরেছেন। মাত্র ৩১ বছর বয়সে ২০১৭ সালে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর হয়েছিল সেবাস্টিয়ান কুয়রৎস। 

তবে নুর জাতীয়তাবাদী। আর কোনো রাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদী কোনো নেতার উত্থান সহজ কাজ নয়। যে দেশগুলোতে তরুণ নেতাদের শাসনের কথা বলা হলো সেখানে গণতন্ত্র আছে। ফলে নিজ যোগ্যতায় তারা জ্বলে উঠতে পেরেছেন। 

নীতি আদর্শে অটল থাকলে তিনি সাফল্য পাবেনই। সবচেয়ে কঠিন সময়টা তিনি এরই মধ্যে পার করে এসেছেন।

ইলিয়াস হোসেন: সাংবাদিক

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close