নিউজ

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত

*সর্বত্র ব্যাপক প্রতিক্রিয়া: রাজধানীতে বিএনপির মিছিলে লাঠিচার্জ
*বীরত্বপূর্ণ খেতাব বাতিল মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করে না: আ স ম রব
*মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার বীরত্ব মহাকাব্যিক: পিনাকী ভট্টাচার্য
*আল-জাজিরায় উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে এই সিদ্ধান্ত: আসিফ নজরুল

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১২ ফেব্রুয়ারী – সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমাণ্ডারদের অন্যতম জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। ঢাকায় তাৎক্ষণিত করা প্রতিবাদ মিছিলে লাঠিচার্চ করেছে পুলিশ। বাংলাদেশের গণমাধ্যমসমূহে এই সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমসহ সর্বত্র বিষয়টির ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। বিএনপির রাজনৈতিক ঘরনার ছাড়াও অনেক আওয়ামী সমর্থকরাও বিষয়টিকে বাড়াবাড়ি হিসেবে মন্তব্য করেছেন। হঠাৎ এধরণের সিদ্ধান্তকে সরকারের ভেতর মহলের দুর্নীতি নিয়ে আল-জাজিরার চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে যে তোলপাড় চলছে তা থেকে জনগণের সৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

গত ৯ ফেব্রুয়ারী, মঙ্গলবার সরকারের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের এক বৈঠকে খেতাব বাতিলের এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের পরিকল্পনায় জড়িদ থাকা এবং রাজাকারদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনসহ নানা অভিযোগ থাকায় জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মল হক। কিন্তু মন্ত্রীর নেতৃত্বে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলেও বলা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত সুপারিশ হিসাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে এবং প্রয়োজনে মন্ত্রীসভাতেও বিষয়টা যেতে পারে।
এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠনক আ স ম আবদুর রব, জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতীক, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, বিশিষ্ট ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যসহ অনেকে। তারা বিষয়টিকে প্রতিহিংসামূলক মন্তব্য করে বলেন, প্রতিহিংসামূলক কোনো সিদ্ধান্ত ‘ঐতিহাসিক ন্যায্যতা’কে বিলুপ্ত করে দিতে পারে না। অতীতের গৌরবউজ্জ্বল কৃতিত্বকে বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা কোনভাবেই সুবিচার নিশ্চিত করেনা এবং নৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মত প্রকাশ করেন তারা।

বীরত্বপূর্ণ খেতাব বাতিল মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করে না: আ স ম রব
যারা দেশমাতৃকার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন এবং স্বাধীনতা অর্জনে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব অর্জন করেছেন তাঁদেও খেতাব বা পদক বাতিল করা মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করে না। প্রতিহিংসামূলক কোনো সিদ্ধান্ত ‘ঐতিহাসিক ন্যায্যতা’কে বিলুপ্ত করে দিতে পারে না। অতীতের গৌরবউজ্জ্বল কৃতিত্বকে বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা কোনভাবেই সুবিচার নিশ্চিত করেনা এবং নৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমাণ্ডার জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে যিনি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন স্বাধীনতা পরবর্তী কালে তার কোন কর্মকা- আইনের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ হলে সেক্ষেত্রে আইনত পদক্ষেপই হবে একমাত্র সমাধান। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রাষ্ট্র যাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে ৫০ বছর পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দৃষ্টিতে তা পূর্ণমূল্যায়ন করা নৈতিকতার বিচারে গ্রহণযোগ্য নয়।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত বীরত্বপূর্ণ খেতাব যদি রাজনৈতিক দ্বন্ধ সংঘাতে বাতিল করা হয় তাহলে তা মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ১৯৭২ সালেও আমরা সংকীর্ণ রাজনৈতিক কারণে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সিপাহসালার সেক্টর কমাণ্ডার মেজর এম এ জলিলকে বীরত্বপূর্ণ কোনো খেতাব দিতে পারেনি। এর দায় অবশ্য আমাদেরকে বহন করতে হবে।

আল-জাজিরায় উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত: আসিফ নজরুল
সরকারে ভেতর মহলের দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রচারিত আল-জাজিরার তোলপাড় সৃষ্টিকারী প্রতিদেন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল। তিনি তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখিছেন, আল-জাজিরার প্রতিবেদনে সরকারের ভেতর কিছু মহলের ভয়াবহ অনিয়ম আর দূর্নীতির অভিযোগে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। সম্ভবত এ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার চিন্তা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের একটি কমিটি। উনার বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগে হচ্ছে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদেও দেশত্যাগে সহায়তা করেছিলেন। এমন একটি অভিযোগে জিয়ার খেতাব বাতিল হলে বঙ্গবন্ধুর খুনী সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য জনাব ওসমানী, শফিউল্লাহ ও এ. কে. খন্দকারের বীরউত্তম খেতাবও বাতিল করা যায়। এর পাশাপাশি গঠন করা যায় নতুন আরেকটি কমিটি। কেড়ে নেয়া খেতাব কাকে কাকে দেয়া যায় সেটি এই কমিটি ঠিক করুক। কে মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধের মাঠে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কে সেক্টর কমাণ্ডার ছিলেন, কে কোন ফোর্স-এর প্রধান ছিল সেটাও এই কমিটি নতুন করে ঠিক করুক। মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পালিত হোক নতুন নতুন ইতিহাসে!

মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার বীরত্ব মহাকাব্যিক: পিনাকী ভট্টাচার্য
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ অবদান বিষয়ে ফ্রান্সে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত বিশিষ্ট ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চের পরে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক শব্দ ছিলো – “উই রিভোল্ট”। আড়াইশো টাকার মাইনের এক অখ্যাত মেজরের দুর্দমনীয় সাহসে ভর করে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রত্যাঘাত শুরু করেছিলো। তার শক্তিতেই পাকিস্তান আর্মির সামরিক পরাজয় ঘটে। যুদ্ধ রাজনৈতিক সমস্যার সর্বোচ্চ ফয়সালা। যুদ্ধ রাজনৈতিক। “উই রিভোল্ট” উচ্চারণও রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সমাধানের পথ ফেইল করেছে এ জন্যই একাত্তরের সামরিক সমাধানের প্রয়োজন হয়েছিলো। যুদ্ধ আর মাঠের লড়াই ছিলো একে অন্যের পরিপুরক।
রমনা পার্কে শেখ মুজিবের “সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না” এই উচ্চারণই যুদ্ধের ময়দানে জিয়ার কণ্ঠে “উই রিভোল্টে” বিকশিত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার বীরত্ব মহাকাব্যিক। জিয়ার বীরত্ব নিয়ে একদিন গল্প লেখা হবে, কবিতা লেখা হবে, গান বানানো হবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী সেই গান আর মহাকাব্য কণ্ঠে কণ্ঠে ঘুরবে। অতীতের নুরুলদীন, তিতুমিরের মতো জিয়া আমাদের সময়ের দেখা বাস্তবের বীর। বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার কাছে বাংলাদেশের ঋণ কোনদিন শোধ হবেনা। প্রকৃত বীরদেও খেতাবের দরকার নেই।

রাজধানীতে বিএনপির মিছিল, পুলিশের লাঠিপেটা
জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল (জামুকা) কর্তৃক সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় (বীর বিক্রম) খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীতে মিছিল করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বুধবার সন্ধ্যায় বিজয় নগর থেকে মিছিলটি কাকরাইল মোড়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ মিছিলকারীদের লাঠিপেটা করে বলে গণমাধ্যমকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
এ সময় পুলিশের হামলা ও লাঠি পেটায় যুবদল নেতা গোলাম মওলা শাহীন, ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক কাউসার, সোহেলসহ কয়েকজন আহত হন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মশালে আগুন ধরিয়ে কেবল মিছিল শুরু করলে পুলিশ হামলা করে। এ সময় পুলিশ চার জনকে আটক করেছে বলে জানান তিনি।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close