নিউজ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত- নতুন আইনেও মুজিবের সমালোচনার জন্য ৭ বছরের কারাদণ্ড  

যে কালো আইনে প্রাণ হারিয়েছেন লেখক মুশতাক

সুরমা প্রতিবেদন।দেশ বিদেশে তীব্র সমালোচনার মুখে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার নিপীড়নমূলক কালো আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮. বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে পুরোনো আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নাম নতুন আরেকটি আইন জড়াতে যাচ্ছে সরকার। আইনমন্ত্রী বলেছেন, নতুন আইনে কয়েকটি ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। মানহানির ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের পরিবর্তে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। জামিন অযোগ্য ধারা পরিবর্তন করে জামিন যোগ্য করা হয়েছে। তবে শেখ মুজিব (সরকারের ভাষায় ‘বঙ্গবন্ধু’, মুক্তিযুদ্ধ,জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের অবমাননার দায়ে ৭ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে, যা আগের আইনে ছিল ১০ বছর।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রায় সাত হাজার মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা সম্প্রতি আইনমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছিলেন। চলমান মামলাগুলো নতুন আইনে চলবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

সোমবার (৭আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইন পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে ঢাকায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এসব কথা জানান। আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর নতুন নাম হবে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট। একই সঙ্গে আইনের অনেকগুলো ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জামিন অযোগ্য ধারা পরিবর্তন করে জামিন যোগ্য করা হচ্ছে। আগে শাস্তি ছিল কারাদণ্ড, সেটা পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান করা হয়েছে। অনাদায়ে ৩ বা ৬ মাসের কারাদণ্ড। এ সাজা শুধুমাত্র জরিমানা না দিতে পারলেই ভোগ করতে হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন- মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করে কিছু বলা হলে আগে ১০ বছর শাস্তির বিধান ছিল। এখন তা কমিয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। এছাড়াও আরও অনেকগুলো ধারায় পরিবর্তন করা হবে।

যে কার্টুনের ক্যাপশন লেখার “অপরাধে” কারাগারে খুন হলেন মুশতাক। কারা নির্যাতন ও অত্যাচারের দীর্ঘস্থায়ী আঘাত নিয়ে নির্বাসিত হলেন কার্টুনিষ্ট কিশোর। অথচ চরম দুর্নীতিবাজ সেই নাফিস ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় ও পত্রিকার মালিকানা ও হাজার কোটি টাকার সম্পদ দখল করে প্রভাবশালী মাফিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যার নির্দেশে কারাগারে মুশতাক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বলি হয়ে কারাগারে প্রাণ হারিয়েছেন লেখক মুশতাক আহমেদ, কারাগারে নির্যাতনের শিকার হয়ে চির পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজাল, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক শহিদুল আলম। এই কালো আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে লেখক মুশতাককে হত্যার জন্য জন্য বহুল আলোচিত-সমালোচিত চৌধুরী নাফিস শরাফত (ব্যাঙ্ক খেকো হিসেবে কার্টুনে চিহ্নিত) বর্তমানে একাধিক ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দৈনিক বাংলা পত্রিকার মালিকানাসহ হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আইনটির অপপ্রয়োগের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মন্ত্রী-এমপি ও কর্মকর্তাদের অনেককেই চিহ্নিত করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। কিন্তু সরকার এইসব অভিযোগের কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

শুধু সরকারের সমালোচনার দায়ে সাংবাদিক ছাড়াও বিরোধীদলের সমর্থক নেতা-কর্মী ও সাধারণ নারী-পুরুষ এমনকি ১৩ বছরের কিশোর পর্যন্ত এই কালো আইনে নির্যাতন, কারাদণ্ড ও সপরিবারে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন আইনটি সংশোধন/বাতিল করার জন্য সরকারকে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছিলো।


Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close