নিউজ

ঢাবি’র আরেক কেলেঙ্কারি- ইমেরিটাস প্রফেসর মনোনীত হলেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা!

সুরমা প্রতিবেদন।। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একের পর এক কেলেঙ্কারি জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। প্রবন্ধ নিবন্ধ লেখার অভিযোগে চাকরি হারাচ্ছেন নামজাদা শিক্ষকগণ। তথাকথিত গবেষণার মান নিয়ে চৌর্যবৃদ্ধির অভিযোগ উঠছে অহরহ। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মর্যাদার পদবী ইমেরিটাস প্রফেসর নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মনোনীতদের একজনের বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, ইমেরিটাস প্রফেসর নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়মিত নিয়োগ নয়। সাধারণত অবসরে যাওয়ার পর অতি উচ্চ মেধাসম্পন্ন, পান্ডিত্যপূর্ণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত শিক্ষকগণকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরে রাখার প্রয়াস হিসেবে এই নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বীকৃত এসব পন্ডিত ব্যক্তিদের সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতে গোনা কয়েকজন থাকে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন অনুষদে এমনি ৬ জনকে ইমেরিটাস প্রফেসর নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের মধ্যে দু’একজন বাদে বেশিরভাগের নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের অনেকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দূরে থাকুক জাতীয় পর্যায়ে গবেষণা অথবা শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো অবদান খুঁজে পাওয়া যায় না। ভূগোল বিভাগের যাকে এ নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার পিএইচডি ডিগ্রী নেই। বাকিদেরও অধিকাংশের পিএইচডি ডিগ্রী নেই। একজনের রয়েছে তাও রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলাদেশে একাডেমিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বুয়েটের মূল্যায়নে রাশিয়ার পিএইচডিকে মাস্টার ডিগ্রী সমতুল্য বলে মূল্যায়ন করা হয়। 

বাড়ির জন্য সদর এই শিক্ষকের নাম বজলুল হক খন্দকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে তার প্রথম নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।  তৎকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের অন্যতম শর্ত ছিল অনার্স ডিগ্রী। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষকতা কিংবা গবেষণা অথবা জার্নালে তার নিবন্ধ/প্রকাশনা খুঁজে পাওয়াযায়না।

তিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে দু’বছর বেশি চাকরি করেছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে  সিন্ডিকেট সদস্যসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন  ও সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের অন্যতম (আওয়ামী পন্থী) সংগঠক পরিচয়ে একটি রাষ্ট্র ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দু দফা দায়িত্ব পালন কালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদানে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের সমর্থক পরিচয় 

দিলেও শেখ মুজিবের অসহযোগের আহ্বান উপেক্ষা করে পুরো নয় মাস পাকিস্তান সরকারের নির্দেশ পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষকতা করেছেন। একজন সেক্টর কমান্ডারের সুবাদে কয়েক বছর আগে তিনি তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ অর্জন করতে সক্ষম হন। 

উল্লেখ করা যেতে পারে, অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল, পশু সম্পদ মন্ত্রী রেজাউল করিম এবং অন্তত ১০ জন সচিবের ভুয়া সনদ বাতিল করা হয়েছে। এমনকি কয়েকজনকে প্রশাসনে ডিমোশনও দেয়া হয়েছে।

একই অনুষদে প্রফেসর ডঃ হাবিবুর রহমান ও প্রফেসর ডঃ শফিক সিদ্দিকের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত গবেষক ও শিক্ষক ইমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে মনোনয়ন পাননি। এ নিয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাডেমিক মান বিবেচনার মানদন্ড নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র প্রফেসর সাপ্তাহিক সুরমাকে বলেন, গত একশ’ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন সম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি হাস্যকর ও বায়বীয় পর্যায়ে নেমেছে। বর্তমান ভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতিত্ব হিসেবে ১০ টাকার চা-ছমুছার কথা উল্লেখ করেছেন। ভিসির নিজের একাডেমিক মান অত্যন্ত নিম্ন স্তরের। তৃতীয় শ্রেণির ডিগ্রী থাকার পর এই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক ভিসির দায়িত্ব পেয়েছেন। দলীয় বিবেচনাই এসব নিয়োগের প্রধান শর্ত বিবেচিত হয়েছে বলে এই অধ্যাপক মনে করেন। তিনি আরো বলেন শুধু গবেষণামূলক প্রবন্ধ নিবন্ধ লেখার কারণে বেশ কয়েকজন নামিদামি অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরি হারিয়েছেন অথবা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এরকম দৃষ্টান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ’ বছরের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি পাকিস্তান আমলেও এমন কোন নজির নেই।

প্রফেসর ইমেরিটাস নিয়োগের অনিয়ম এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহারের ব্যাপারে প্রফেসর  বজলুল হক খন্দকারের বক্তব্য জানতে তাকে ইমেইল করলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close