বাংলাদেশ

এক দফা দাবীতে দেশব্যাপী জনতা রাজপথে- বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে একজন নিহত

  • পদত্যাগ করতেই হবে: বিএনপি
  • পদত্যাগের প্রশ্নই উঠে না: আ’লীগ
  • লক্ষ্মীপুর, বগুড়া, খাগড়াছড়ি, কিশোরগঞ্জ, মিরপুরে হামলা ও সংঘর্ষ

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।

লণ্ডন, ২০ জুলাই: ভোট ডাকাত, লুটেরা, দেশবিরোধী সরকারের পতনের একদফা দাবীতে দেশব্যাপী জনতা রাজপথে নেমেছে। এই সরকারের অধীনে দলবাজ ও সেবাদাস সিইসি আব্দুল আউয়ালের মাধ্যমে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় জানিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জগদ্দল পাথরের ন্যায় শেখ হাসিনার অনৈতিক সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোট ডাকাতি করেছে। সিইসিও নির্বাচন নিয়ে মিথ্যা কথা বলছে। এখন জনগণের একদফা এক দাবি এই সরকার তুই কবে যাবি। অন্যদিকে সরকার শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার নামে দেশে সংঘাত সৃষ্টির পায়তারা করছে। ক্ষমতাসীন সরকার ইচ্ছা করেই গোটা দেশ, জাতিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে বিএনপির দু’দিনের পদযাত্রা কর্মসূচির প্রথম দিনেই ৭ জেলায় পুলিশ ও আ.লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ১ জন বিএনপি কর্মী নিহতসহ দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন।

পদত্যাগ করতেই হবে- বিএনপি

মাথার ওপর সূর্যের প্রচ- বিকিরণ, পায়ের নিচে উত্তপ্ত পিচঢালা রাজপথ। এরই মধ্যে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে চলেছেন লাখো মানুষ। হাঁটতে হাঁটতে ঘেমে-নেয়ে একাকার। কিন্তু তারপরও যেন ক্লান্তি নেই কারো চোখে-মুখে। বরং হাতে হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড আর মুখে মুখে বজ্রকণ্ঠে স্লোগান। ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’, ‘চোর চোর ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘জেল-জুলুম-হুলিয়া, নিতে হবে তুলিয়া’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, ‘আমার ভোট আমি দেবো, রাতে নয় দিনে দেবো’। সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে এভাবেই গত মঙ্গলবার রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পদযাত্রা করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাবতলী থেকে রায়সাহেব বাজার ১৬ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের পদভারে আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে রাজধানী। পথে পথে তাদের উদ্দেশে হাত নেড়ে, করতালি দিয়ে উৎসাহ যুগিয়েছেন দোকানদার, রিকশাচালক, শ্রমিক, পথচারী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ তুলে দিয়েছেন কলা-রুটি, তো কেউ পানি। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ে গতকাল থেকে পদযাত্রার মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনে নেমেছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী ৩৬টি রাজনৈতিক দল। এদিন ঢাকাসহ সারাদেশের সকল বিভাগীয় ও জেলা শহরে একই কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গত ১২ জুলাই শুধু বিএনপি নয়, ৩৬টি রাজনৈতিক দল একযোগে ঘোষণা দিয়েছে যে, এই সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। এ দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

পদত্যাগের প্রশ্নই উঠে না: আ’লীগ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। পার্লামেন্ট ভাঙবে না। তত্ত্বাবধায়কও হবে না। গত ১৮ জুলাই মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সামনের রাস্তায় ‌‘শান্তি ও উন্নয়ন শুভাযাত্রা’র পূর্বে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সমাবেশটির আয়োজন করে। বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের (ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র) কাছে দাবি করে কে? বিএনপি। কী পেয়েছেন? একটা হাঁসের ডিম, ঘোড়ার ডিম। তিনি বলেন, ফখরুল আজকে কী বলেছেন? পদযাত্রার জয়যাত্রা, বিজয় যাত্রা। আসলে পদযাত্রা, পরাজয় যাত্রা আর পতন যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যদি অবাধ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেন, আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করেন তাহলে আপনাদের পরিণাম হবে ভয়াবহ।

লক্ষ্মীপুরে পদযাত্রায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে কৃষক দল কর্মী নিহত, অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ

লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় সজিব হোসেন (৩২) নামে একজন নিহত ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি কৃষক দলের কর্মী বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে লক্ষ্মীপুরে মদিন উল্যাহ হাউজিংয়ের একটি বাসার দোতলার সিঁড়ির রুম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। জেলা কৃষক দলের সভাপতি মাহবুব আলম মামুন ও সদর (পূর্ব) উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বাবু জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রথমে কলেজ রোড এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এরপর রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিএনপির মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর গুলি ছুড়তে থাকে। এতে জেলা ছাত্রদল সভাপতি ইব্রাহিম গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হাছিবুর রহমান বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের লোকজনের ওপর বিভিন্ন পয়েন্টে হামলা করেছে। পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কৃষক দলের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন।

খাগড়াছড়িতে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, শতাধিক আহত

খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় দলের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে শহরের শাপলা চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচির প্রস্তুতির সময় জেলা বিএনপির অফিসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান। এতে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা চালালে জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক নরুল আজমসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় পৌরসভা ভাঙচুর এবং ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পুরো শহরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার নাইমুল হক গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ ১০০ আহত

কিশোরগঞ্জে এক দফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের রথখোলা এলাকার ঈশাখাঁ রোডে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম জানিয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে জেলা শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে জেলা বিএনপি শহরে পদযাত্রা বের করে। এর আগে জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভা কমিটির নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সেখানে জড়ো হন। পরে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি শহরের রথখোলা এলাকা অতিক্রম করার সময় নূর মসজিদ এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় নেতাকর্মীদের একটি অংশ পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শহরের আঠারোবাড়ি কাচারির দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশ অপর অংশের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এতে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ঈশাখাঁ রোড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

মিরপুরে বিএনপি-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ

রাজধানীর মিরপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি মোটরসাইকেল ও একটি বাইসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জানা গেছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা পদযাত্রায় যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওই এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন। তখন তাদের সঙ্গে মিরপুর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

বগুড়ায় পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসে অর্ধশত ছাত্রী অসুস্থ, ৩৩ জন হাসপাতালে ভর্তি

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া নিয়ে বগুড়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলির শব্দে আতঙ্ক ও শ্বাসকষ্টে শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে।  বেলা পৌনে একটার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মোড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল, শটগানের গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের গুলি ও হামলায় অন্তত ২০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপি দাবী করে। এর মধ্যে ৭০ জন গুলিবিদ্ধ। অন্যদিকে পুলিশের দাবী, বিএনপির হামলায় ৬ থেকে ১১ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। হঠাৎ মুহুর্মুহু গুলির বিকট শব্দ। শিক্ষার্থীরা কৌতূহলবশত জানালা দিয়ে বাইরের পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করলে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল এসে জানালার কাছে পড়ে। কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ার কুণ্ডলী জানালা দিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। এতে ছাত্রীদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদত হোসেন বলেন, কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট ও আতঙ্কে অর্ধশত ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৩৩ জনকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের অবজারভেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বাকি শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর বিকেল পাঁচটার দিকে ছাত্রীদের হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close