মুক্তকথা

আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে অশা‌ন্তির তাণ্ডব

|| আহমদ কুতুব ||
লেখক: প্রাবন্ধিক। কমিউনিটি এক্টিভিস্ট

গত ১২ জুলাই ২০২৩ বিএনপি এক দফা দাবীতে নয়াপল্টনে বিশাল সমাবেশ করেছে। কম সময়ে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই যে জনসমুদ্র তৈরী হয়েছে তা থেকে শতভাগ প্রমাণিত হয়—দলীয় সরকারের অধিনে দেশের মানুষ আর নির্বাচন দেখতে চায় না। আওয়ামী লীগ তথাকথিত শান্তি সমাবেশের নামে মুক্তিকামী মানুষদের বাধা দিতে গিয়ে শেষমেশ নিজেরাই চেয়ার ছোড়াছুঁড়ি করে অশান্তির তাণ্ডব সৃষ্টি করেছে। শান্তি রক্ষার মুসলেকায় পুলিশের অনুমতি নিয়ে  হুমকি-ধামকি ও ঘৃণা বিদ্বেষের রাসায়নিক বাষ্প ছড়িয়ে রাজনৈতিক পরিবেশকে সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে দেয়ার প্রাণান্ত কসরৎ দেখা যায় নেতাদের বক্তব্যে। মেয়র তাপসসহ অন্যান্য নেতাদের বয়ান শুনে যে কারো মনে হবে, শান্তি সমাবেশ নয়, এ যেনো জংলী ‘শান্তি বাহিনী’র ফ্রন্ট লাইনে দাঁড়িয়ে কমাণ্ডো পরিচালনা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের মাথা ফাটাতে না পারার বেদনায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা নিজেরাই একে অন্যের উপর ঝাপিয়ে পড়ে ।  অনেকে এই কথিত শান্তি সমাবেশকে পাকিস্থানী শান্তি কমিটির সাথে তুলনা করে বলেছেন আওয়ামী লীগ মুখে পাকিস্তা‌নবি‌রোধী হ‌লেও কাজে ও কর্মে আইয়ুব এহিয়ার চেতনাধারী ।

অন্যদিকে, ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেও বার বার মুখ থুবড়ে পড়ছে। এবার বিএনপি সতর্ক পা’য়ে চুড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিকট অতীতে জোটবদ্ধ আন্দোলন ও রাজনীতি করায় ছোটো-বড় দলগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হয়েছে। জোটবদ্ধ রাজনীতিকে অনেকে জটবদ্ধ রাজনীতি মনে করেন।
ছোটো দলগুলো নিজ আদর্শ ও স্বকীয়তায় বিকশিত না হয়ে ধীরে ধীরে লেজুড়ে পরিণত হয়। নেতারা সংগঠন ও আদর্শকে চাঙ্গা করার পরিবর্তে সামান্য উচ্ছিষ্ট অর্জনে প্রতিযোগী হয়ে ওঠে, যেখানে রাজনীতি ও আদর্শ বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। বড় দলগুলো সেই সুযোগে তাঁদেরকে পোষ্য ও আজ্ঞাবহ করে রাখে। আবার সময় সুযোগে ফণা তুলে ছোবল মারতেও দেখা যায়।
তেমনিভাবে বৃহত্তরদল জোটের স্বার্থে ছোটো দলকেও বড় আসন ছেড়ে দিতে হয় তাতে ত্যাগী নেতা কর্মীদের মাঝে অভিমান ও ক্ষোভ সঞ্চয় হয় এবং ধীরে ধীরে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। অনেক সময় শরীকদের অপকর্মের বোঝা বহণ করে জনরোষেও পড়তে হয়।
শরীকদের ক্ষমতার বৃত্তে থাকা ও ক্ষমতার বাইরে থাকা সময়ের সাথে রঙ ও বর্ণের চিত্রও বদলে যায়। তার জলন্ত প্রমাণ চারদলীয় জোটের কিছু ইসলামিক দলসহ কাদের সিদ্দিকী ও ড. কামালরা।

জোটবদ্ধ রাজনীতিকে অপরাজনীতিই বলা যায়। ক্ষমাতার স্বাদ নেয়াটাই মূখ্য। দলীয় আদর্শ ও নীতি শুধু নথিপত্রেই শোভা পায়।
জোটবদ্ধ রাজনীতির ফলে পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা চলে আসায় সরকারকে স্বৈরশাসক করে তুলে। ইচ্ছামতো সংবিধান অপারেশন করে কালো আইন প্রবর্তণের মাধ্যমে বিচার বিভাগ-গণমাধ্যম ও প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ করে দেয়।
৯১ সাল ও ৯৬ সালে পালাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন করেছিলো, কোনো দলই দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি তাই ইচ্ছামত সংবিধানকেও কাটা-ছেঁড়া করা যায়নি। এমনকি সে সময় বিচার বিভাগ প্রধান মন্ত্রীকেও বাচাল বলতে ভয় পায়নি। তাই ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় জোটবদ্ধ রাজনীতি মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। অভিন্ন লক্ষ্যে দাবী আদায়ের জন্য কৌশলগত আন্দোলন সংগ্রাম হতে পারে কিন্তু দলীয় নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে জোটবদ্ধভাবে ক্ষমতায় আরোহন কখনো দেশ ও জনগণের কল্যাণ সাধিত হবে না। পিএনপির বড় সফলতা হচ্ছে হামলা-মামলা কূটকৌশল ও নির্বাচন-নির্বাচন খেলা করেও বিএনপিকে ভাঙ্গতে পারেনি সরকার। অধিকাংশ শরীক দলগুলোকে মূলা ঝুলিয়ে দুইদল তিনদলে বিভক্তি করে দিলেও পিএনপির নেতা কর্মীরা সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দেয়নি।

জোটবদ্ধ রাজনীতিতে বিএনপি এখন অনেকটা ধীরে চলা নীতি অবলম্বন করছে। অতীতের জোটসঙ্গীদের সাথে দরকষাকষির পরিবর্তে নিজ নিজ মঞ্চ থেকে অভিন্ন দাবী আদায়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে দলটি। পিএনপি যদি নয়া পল্টনে বিরোধী দলগুলো নিয়ে এক মঞ্চে সমাবেশ করত তাহলে একটা মাঠেই মিছিল-স্লোগানে মুখরিত থাকতো কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে অভিন্ন দাবিতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও অলিগলিতে মিছিল-স্লোগানে মুখরিত হওয়ায় নিরপক্ষ সরকারের দাবিটি গণমানুষের দাবিতে পরিনত হয়েছে। ছোট দলগুলো সংগঠিত হয়ে শক্তিমত্তা প্রদর্শণ ও বিকশিত হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে। বিএনপির উপর নির্ভরশীল না থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনে অগ্রসর হলে দাবিটি হবে সার্বজনীন ও দলগুলো হবে আত্মনির্ভরশীল। দলীয় ব্যানারে আন্দোলনের সুবিধা হচ্ছে— বিএনপিসহ যে কেউ গনদাবির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে জাতি তাঁকে চিহ্নিত করতে পারবে।

দলগুলো যদি স্বকীয়তার সাথে দলীয় নীতি-আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে অভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম করে তা হলে সুস্থ রাজনীতির ধারা চালু হবে বলে অনেকের ধারণা।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close