মুক্তকথা

লাব্বাইক আল্লাহুম্মালাব্বাইক: বিশ্বাসের কঠিন শপথ

|| আহমদ কুতুব ||
লেখক: প্রাবন্ধিক, কমিউনিটি একটিভিস্ট

জিলহাজ্জ্ব মাসের বরকতময় দিনগুলো আমরা অতিক্রম করছি। নবী মুহাম্মদ সঃ যে চার মাসকে গুরুত্বের সাথে যত্নশীল হয়ে উদযাপন করার নির্দেশনা দিয়েছেন তার মধ্যে জিলহাজ্জ্ব মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মানব সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই সাইয়েদুল বাশার নবী আদম আঃ থেকে নিয়ে অনেক নবী রাসুলরা এই পবিত্র ঘর তাওয়াফ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। আল-কোরআনে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّ هُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ
“নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা বাক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। (আল-ইমরান-৯৬)
হযরত নুহ্ নবীর সময় সংঘটিত মহাপ্লাবনে ঘরটির চিহ্ন হারিয়ে যায়। হযরত ইব্রাহীম আঃ ও হযরত ইসমাইল আঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার নির্দেশে ঘরটি পুনঃনির্মাণ করেন। ঘরটি পুনঃনির্মাণের পর আল্লাহ তাঁকে আদেশ করেন, وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ এবং মানুষের কাছে হজ্জ্বের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবংসর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দুরান্ত থেকে। (আল-হাজ্জ্ব-২৭)
বর্ণিত আছে, যখন সাঈয়েদানা  ইব্রাহীমকে এই আদেশ দেয়া হয় তখন হযরত ইব্রাহীম বলেছিলেন— জনমানবহীন স্থান থেকে ডাকা আহ্বানে কী করে মানুষ সাড়া দিবে?
ইবনে কাসির উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা  বিশ্বের সকল প্রান্থের মানবকূলে এবং অনাগত প্রজন্মের কাছে হযরত ইব্রাহীমের ডাক পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং তাঁরা এই ডাকে সাড়া দিয়ে “লাব্বাইক” বলে জবাবও দিয়েছেলেন।
সেই থেকে লোকেরা জিলহাজ্ব মাসে  একা-একা ও দলে-দলে আনুগত্যের নাজরানা প্রদর্শনে, হজ্জ্ব উদযাপনে বাইতুল্লাহ জিয়ারতে আসতে শুরু করেন।

ইব্রাহীম আঃ নমরূদের মুর্তিগুলো ভেঙ্গে শির্ক মুক্ত দ্বীনেহক্ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কালক্রমে সেই কা’বা ঘরে অসংখ্য দেব-দেবীর মুর্তি স্থাপন করে নারী-পুরুষ উলঙ্গ হয়ে কা’বা ঘর তাওয়াফের মাধ্যমে হজ্জ্ব উদযাপন শুরু করে। “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লা শরিকা লাকা লাব্বাইকা” ধ্বনি উচ্চারণ করে পৌত্তলিক মুশরিকরা কা’বা ঘরে আসলেও  বস্তুত দেব-দেবীকে আল্লাহর সাহায্যকারী বানিয়ে  উপাসনা করত। কিছু শিরকী বাক্য সংযোজন করে নিয়ে ছিলো তাঁরা—
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ، وَالنِّعْمَةَ، لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ “(إِلَّا شَرِيَكًا هُوَ لَكَ تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ)
অর্থাৎ তবে শুধু ঐ শরীক, যার মালিক তুমি এবং যার সকল ক্ষমতা ও অধীনদেরও মালিক তুমি।

আরবের পৌত্তলিকরা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ছিলো কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে প্রত্যেক দিন সাহায্যের জন্য এক একজন দেবী প্রতিস্থাপন করেছিলো। এই মনগড়া ৩৬০ জন দেবী শুধু পুজা-আর্চনায় অংশিদারই ছিলো না। তাঁদের নামে ব্যবসা-বানিজ্য, লেন-দেন, বিয়ে-শাদি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, বিচার-পাঞ্চায়েত এমনকি সামাজিক আচার-আচরণের নিয়ম-কানুন পরিচালিত হত। সৃষ্টিকর্তা শুধু পুজ্য নমনীয় ছিলো। সমাজে যত  হত্যাযজ্ঞ, কন্যা সন্তান হত্যা থেকে নিয়ে যত অনাচার সংগঠিত হত তা কোনো না কোনো দেবদেবীদের ইচ্ছার প্রতিফলন বলে বৈধতা দেয়া হত। অনেকটা আধুনিক স্বৈরশাসকদের মত কালাকানুন প্রবর্তণ করে পার্লামেন্ট থেকে বৈধতা নেয়ার মত। দেব-দেবী ছিলো প্রতিষ্ঠিত কায়েমী পেশিশক্তির স্বেচ্ছাচারীতার অস্ত্র।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মাধ্যমে দ্বীনে হক্ আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর লাব্বাইক শব্দগুচ্ছে শির্ক যুক্ত শব্দগুলো পরিহার করে আল্লাহর নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্বের ঘোষণা দেয়া হয়। নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে প্রতি বছর জিলহাজ্জ্ব মাসের ৯ তারিখ আরাফাত মাঠে মহাসম্মেলনের আহ্বান করা হয়। সম্মেলনে যোগদানকারিদেরকে ভি,ই,পি অতিথির সম্মান দেয়া হয়েছে। নবীজি বলেছেন,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ وَفْدُ اللهِ دَعَاهُمْ فَأَجَابُوهُ وَسَأَلُوهُ فَأَعْطَاهُمْ
অর্থ: ইবনে উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং হজ্জ ও উমরা পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তাদের আহ্বান করেছেন, তারা সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। তারা আল্লাহর কাছে যা চাইছে আল্লাহ তাই তাদের দিয়ে দিচ্ছেন। (ইবনে মাজাহ ২৮৯৩)

বাতেসে উড়ে চলা খড়কুটো বা জলে ভেসে যাওয়া দুর্বল জীর্ণশীর্ণ জরাগ্রস্তদেরকে এই মহাসম্মেলনে আসার তেমন নির্দেশ করা হয়নি, তাদেরকেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বা ফরজ করা হয়েছে  যারা সমাজে সামর্থ্যমান মানুষ। সমাজকে যারা ডমিনেট করে, বস্তুত সামর্থ্যমানদের দ্বারা সমাজ ডমিনেট হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন, وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ এবং আল্লাহর উদ্দেশে এই গৃহের হাজ্জ করা সেই সব মানুষের কর্তব্য যারা সফর করার সামর্থ্য রাখে।(ইমরান-৯৬)

ভারত উপমহাদেশে একটা অলিখিত ধারণা সর্বত্র প্রচলিত— বয়ঃসন্ধিক্ষণে হজ্জ্বে যাওয়ার প্রবনতা। অথচ হজ্জ্বব্রতের নির্দেশনার সাথে এই ধারণা সরাসরি সাংর্ঘষিক। হজ্জ্বে যাওয়ার জন্য পার্থিব ও শারীরিক সামর্থ্যতার প্রয়োজন। এই সামর্থ্যমান মানুষকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সম্মানিত অতিথি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সম্মিলনের উদ্দেশ্য একটাই, আল্লাহর একচ্ছত্র স্বার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা। কা’বার সামনে দাঁড়িয়ে, ছাফা-মারওয়া, সা’ঈয়ী ও তাওয়াফে যত মাছনুন দো’য়া পাঠ করা হয় সবটাই আল্লাহর স্বার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রদান। এক কথায় বলতে গেলে হজ্বেরর সকল কার্য্যক্রম আল্লাহর স্বার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি ও প্রতিশ্রুতি প্রদান।

গ্লোবাল ও ডিজিটাল দুনিয়ায় হজ্জ্ব উদযাপনের নিয়ম-কানুন সহজেই জানা ও শিখা যায়। হজ্জ্ব মিশন ও মুয়াল্লিমের লোকেরা হাজী সাহেবদেরকে অনেক শিক্ষণীয় রিসোর্স দিয়ে থাকেন। আমার বিশ্বাস হাজি সাহেবরা হজ্জ্বের নিয়মাবলি কমবেশি শিখে নিয়েছেন।  তাই এই নিবন্ধে নিজ অভিজ্ঞতা ও বিপ্লবী স্লোগান লাব্বাইকের মধ্যে আমার আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করব।

হজ্জ্ব ও উমরার জন্য সেলাই ও পকেট বিহীন যে দুই খণ্ড কাপড় ব্যবহার করা হয় তাকে এহরামের কাপড় বলা হয়। মুসলমানরা পুণ্যতা অর্জনের জন্য দু’টি সময় এ জাতীয় কাপড় পড়ে থাকেন। হজ্জ্ব বা ওমরাহ করার নিয়তে এই কাপড় পড়া হয়। আর একবার ইন্তেকালের পর আত্মীয় স্বজনেরা গোসল দিয়ে এই কাপড় পড়িয়ে থাকেন। সেটাকে কাপনের কাপড় বলা হয়। হজ্জ্ব-উমরায়ের জন্য এই কাপড় পড়া সিম্বোলিকভাবে ধরে নেয়া হয়, একটা জীবন্ত লাশের উপর কাপড় পড়ে নেয়া। একটা লাশ যেভাবে কাউকে আঘাত করতে পারে না, অন্যায় করতে পারে না, কারো মনে কষ্ট দিতে পারে না, গীবত করতে পারে না, আরাম-আয়েশের অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারে না, ঠিক তেমনি যে কাজগুলো মৃত ব্যক্তি করতে পারে না, সেইভাবে জাগ্রত চেতনায় ধারণ করে এহরামের কাপড় পড়তে হয়। অন্যায়-অবিচার, পাপাচার-অশ্লীলতা, আত্মগরিমা-অহংকার, ঝগড়া-বিবাদ ও খুন-হত্যা থেকে পবিত্র ও মুক্ত থাকাটাই হচ্ছে এহরাম পালন করা। এহরাম অবস্থায় অনেক হালাল ও শুদ্ধ-ন্যায় কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যেমন, জবেহ করা, সহবাস করা, চুল-নক কাটা, সাধারণ অন্যায়ের প্রতিবাদ করা বা মারমুখী হওয়া অর্থাৎ এই কাজগুলো আপনার জন্য ন্যায় সঙ্গত ছিলো কিন্তু এহরাম অবস্থায় তা করতে পারবেন না।

আমাদের অনেকেরই দুর্ভাগ্য— আল্লাহ রব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে বাইতুল্লায় যাওয়ার পরও সংযমী হতে পারি না। মক্কার আবাসিক হোটেল ও মীনার ক্যাম্প গুলোতে দেখা যায় অনেকেই আত্মগরিমা ও পরচর্চায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন অথবা সিকারেট ও র্জদার আপ্যায়ন চলছে। কিছু বিত্তবানরা উন্নতমানের হজ্জ্ব প্যাকেজে সেখানে যান, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তাঁদেরকে সে সুযোগ করে দিয়েছেন তাতে দুষের কিছু নেই কিন্তু আমাদের মধ্যে এমনও আছেন যারা আত্মতৃপ্তিতে ইনিয়েবিনিয়ে ফাইভ স্টার, থ্রি স্টারের বর্ণনা এমন ভাবে উপস্থাপনা করি যা, এই সুযোগ বঞ্চিত অন্য জনকে  দুর্ভাগা ভাবতে বাধ্য করে।

অনেকে আবার হোটেল ও ক্যাম্পের সুযোগ-সুবিদা, খাওয়া-দাওয়ার রেসেপি নিয়ে রসাত্মক আলোচনা উপভোগ করি, একবারও ভাবছি না, যেখানে  হালাল ও ন্যায়সঙ্গত অনেক কাজ এহরাম অবস্থায় করা যাচ্ছে না, সেখানে পরচর্চা ও আত্মগরিমার মত বিধ্বংসী কাজগুলো অবলীলায় করে যাচ্ছি। এই কাজগুলো করে কখনো কি একটা হাজ্জ্বে মাবরুর অর্জন করা সম্ভব?
হজ্জ্ব আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্যমানদের জন্য ফরজ। সকল সামর্থ্যবান হাজীসাহেবদের উচিত হজ্জ্বের আনুষ্ঠানিকতা পালনের সাথে সাথে একরামুল মুসলিমিন অর্থাৎ মানবদরদী হওয়া। পরচর্চা পরিহার করে পরোপকারী হওয়া। আত্মগরিমা ও অহংকার ত্যাগ করে বিনয়ী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনযোগী হওয়া। হজ্জ্ব বা ওমরাহের নিয়ত করে এহরামের কাপড় পড়ার পরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা হজ্জের জন্য মানুষকে যে ডাক দিয়েছেন তার জবাবে, লাব্বাঈক, আল্লাহুমা লাব্বাঈক, উচ্চধ্বনিতে পাঠ করা ও বিশ্ব উম্মার মহা মিলনে অংশ নেয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করা। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণটাই কিছুটা উঁচু স্বরে পাঠ করতে হয়।
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ، وَالنِّعْمَةَ، لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ
অর্থ: আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোন শরীক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নেয়া‘মত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই। এহরাম পড়া থেকে নিয়ে পবিত্র বাইতুল্লায়, মিনায়, আরাফাত ও মুজদালেফায় বার বার এই শব্দমালা উচ্চারণ করতে হয়।
এই বাক্যগুলো সাধারণ অর্থের শুধু মাত্র জিকির বা তসবিহ নয় বরং বৈপ্লবিক প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ঘোষণা।
লাব্বাইক শব্দের অর্থ হচ্ছে কেউ ডাকার পর উপস্থিতির ঘোষণা দেয়া।
এই শব্দের মধ্যে আরো অনেক অন্তনির্হিত চেতনা ও ধারণা বিদ্যমান রয়েছে।
দেখা যায় একি স্থানে উপস্থিত থাকা অবস্থায় বিশ্বনবী সাহাবাদেরকে ডেকেছেন তখন জবাবে সাহাবারা বলেছেন, লাব্বাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ।
তার অর্থ হচ্ছে, আমি গভীর মনোযোগের সাথে আপনার কথা শুনতে ও পালন করতে প্রস্তুত রয়েছি। লাব্বাইকের আর একটা অর্থ হচ্ছে, বার বার আপনার কথা শুনতে ও মানতে অঙ্গিকার করছি।
হজ্জ পরিক্রমার এই দীর্ঘ সফরে লাব্বাইকা বার বার পাঠ করে আমরা মহান রবের সাথে কি অঙ্গিকার করছি তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

এই চমৎকার আকর্ষনীয় বাক্যমালা যেমনটি নান্দনিক তেমনি তথ্য নির্ভর
(১) لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। অর্থৎ ইয়া আল্লাহ তোমার খলিল ইব্রাহীম আঃ এর মাধ্যমে আমাকে ডেকেছিলে আমি হাজির হয়েছি।
(২) لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ আমি হাজির, তোমার কোনো শরীক নেই আমি হাজির। অর্থাৎ স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ঘোষণা দিচ্ছি, তোমার সাথে কারো অংশিদারত্ব নেই। তুমি একক ও তুমি সর্বভৌম।
(৩) إِنَّ الْحَمْدَ، وَالنِّعْمَةَ، لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَনিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা, নিয়া’মত ও রাজত্ব তোমারই। তোমার কোন শরীক নেই। অর্থৎ আমার বা আর কারো কোনো প্রশংসা নেই, আত্মগরিমা করার মত কিছুই নেই, সকল প্রশংসার একমাত্র যুগ্যতা তোমারই রয়েছে। ধন-দৌলত, ছেলে- মেয়ে ও সকল নিয়া’মত তোমারই জন্যে। রাষ্ট্রিয় নিরঙ্কুশ  মালিকানা তোমার। সার্বভৌমত্বের অংশিদার আর কারো নেই।
এই বাক্যমালার প্রতিটি শব্দ প্রেরণায় উদ্দীপ্ত। রয়েছে শিরক ও তাগুতকে অস্বীকার করে পথ চলার দৃঢ় প্রত্যয়,  বিশ্বাসের কঠিন শপথ ও চেতনার সুস্পষ্ট দিকদর্শনা।

হজ্জে দেয়া উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি
(১) শিরকের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা  রাখব না।
(২) আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে সকল স্তরে সমুন্নত রাখবো।
(৩) করবানী ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে উৎকৃষ্টতা অর্জন করব।
(৪) আল্লাহর নির্দেশনাবলী বাস্তবায়ন করব।
(৫) তাগুতের পথ পরিহার করে সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে চলব

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close