নিউজ

বিলটি ‘নিষ্ঠুর’ ও ‘মানবাধিকারের পরিপন্থী’: ইউকে ইমিগ্রেশন বিল ওয়েলস পার্লামেন্টে প্রত্যাখান

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ২৩ জুন : ব্রিটিশ সরকারের বিতর্কিত ইললিগ্যাল মাইগ্রেশন বা অবৈধ অভিবাসন বিলটি সম্প্রতি ওয়েলস পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বিলটিকে নিষ্ঠুর আখ্যায়িত করে ওয়েলস পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ট সেনেড বা এমপিরা এর বিরুদ্ধে ভোট প্রদান করেছেন। গত মার্চ মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বর্তমান টোরি সরকারর হোম সেক্রেটারি প্রীতি সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানের উত্থাপন করেন। বিলটিতে ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পার হয়ে আসা অবৈধদের বাধা দেওয়া উদ্দেশ্য বলা হলেও অভিবাসন সংখ্যা কমিয়ে আনতে আশ্রয়প্রার্থীসহ অভিবাসন প্রত্যাশী প্রায় সবাই এর টার্গেট হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাই শুরু থেকেই বিলটির বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার ও দাতব্য সংস্থাসহ বিভিন্ন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ইউকের প্রস্তাবিত নতুন ‘মাইগ্রেশন বিল’কে ইতোমধ্যে মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন। মঙ্গলবার ওয়েলসের পার্লামেন্টেও সেনেড তথা ওয়েলসের এমপিরা বিল বিষয়ে বিতর্কে অংশ নিয়ে এটিকে ‘নিষ্ঠুর’ ‘নির্মম’ ও ‘আশ্রয় নিষেধাজ্ঞা’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

‘ইললিগ্যাল মাইগ্রেশন বিল’টি আইনে পরিণত করতে ওয়েলশ লেবার এবং প্লেড সাইমরু সেনেড সদস্যরা একটি প্রতীকী ভোটে অংশ নিয়ে তাদের সম্মতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু বিলটি ওয়েলশ কনজারভেটিভ তথা রক্ষণশীলদের দ্বারা সমর্থিত হয়েছে, তারা যুক্তি দিয়েছেন যে যুদ্ধ এবং নিপীড়নের ঝুঁকিতে থাকাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় প্রদানের জন্য আনীত নতুন বিলটি ‘বৃহত্তর ক্ষমতা’ প্রদান করবে। ইকুয়ালিটি অ্যাণ্ড হিউম্যান রাইটস কমিশন (ইএইচআরসি) বলেছে যে, পরিকল্পনাগুলি বর্তমানে ইউকে পার্লামেন্টের মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে যা যুক্তরাজ্যের মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়েলস সেনেড তথা পার্লামেন্টের ৩৮ জন সদস্য বিলটির জন্য সম্মতি অস্বীকার করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আর সম্মতি জানিয়ে ভোট দিয়েছেন ১৫ জন। যখন ইউকের কোনো একটি বিল আইনের অংশকে কভার করে তখন সেনেড ওয়েস্টমিনস্টারের প্রস্তাবে খুশি কিনা তা যাচাই করতে সাধারণত বিলের সেই প্রস্তাবটি ওয়েলশ পার্লামেন্টের মাধ্যমে পাস করার প্রয়োজন হয়। তবে তার কোনো আইনি প্রভাব নেই এবং সেনেড বিপক্ষে ভোট দিলেও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন চালিয়ে যেতে পারে।

ওয়েলশের স্যোশিয়েল জাস্টিস মিনিস্টার জেন হাট বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেছেন যে, বেশ কয়েকটি সংস্থা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এই বিলটি ‘আশ্রয় নিষেধাজ্ঞা’। মিসেস হাট আরো বলেন, এটি ওয়েলসের বিকশিত প্রেক্ষাপটকে স্বীকৃতি দেয় না এবং ওয়েলশ কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের উপর নিষেধজ্ঞা চাপিয়ে দিতে পারে। ওই মন্ত্রী বিলের এমন কিছু অংশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যা শিশুদেরকে ওয়েলসের সামাজিক পরিষেবা পাওয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ‘সম্ভাব্য আটক এবং নির্বাসনসহ’ যা ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর সত্ত্বেও বয়স মূল্যায়নের সিদ্ধান্তের আপিল করার অধিকার অপসারণ’সহ বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে একটি ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কারণ হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের জন্য এটা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। এর মাধ্যমে শিশুদের স্বার্থ রক্ষা বা বয়স মূল্যায়নের বাধ্যতামূলক নির্দিষ্ট সর্বোত্তম পদ্ধতি কি তা বের করার চেষ্টায় সেনেডের আইন প্রণয়ন ক্ষমতাকে ক্ষুণ্ণ করতে সক্ষম হবে। হোম সেক্রেটারি সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান বলেছেন, সঙ্গীহীন শিশুদের শুধুমাত্র সীমিত পরিস্থিতিতে, যেমন পারিবারিক পুনর্মিলনের উদ্দেশ্যে ১৮ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগেই তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। সেনেডের চিল্ডে্রন এণ্ড ইয়াং পিপুল কমিটির সভাপতি, লেবারের জেইন ব্রায়ান্ট বলেছেন, তার কমিটি যে সমস্ত প্রমাণ পেয়েছে তাতে ‘ইঙ্গিত করে যে অবৈধ অভিবাসন বিল সম্পূর্ণরূপে শিশুদের অধিকার এবং মানবাধিকারকে আরও ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করে’।

প্লেইড সিমরুর পেরেদুর ওয়েন গ্রিফিথস বলেছেন, ্এটির মতো কোনোও ‘নিষ্ঠুর এবং ‘নির্দয়’ আইনের স্থান ওয়েলসে নেই’। তিনি বলেন, এটি সেনেডের সামনে আসা ‘আইনের সবচেয়ে খারাপ অংশগুলির মধ্যে একটি’। ওয়েলশ কনজারভেটিভ পার্টির মার্ক ইশারউড বলেছেন, তাঁর দল ‘এলসিএম’কে সমর্থন করবে। তিনি বলেন, আমাদের এখন নিরাপদ এবং নিয়মিত রুটের প্রাপ্যতা বাড়ানোর জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের সাথে কাজ করার জন্য ওয়েলশ সরকারের প্রতিশ্রুতি দেখতে হবে।

তিনি বলেন, যেহেতু বেআইনি অভিবাসন সীমিত করা হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকারের যুদ্ধ এবং নিপীড়নের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার ক্ষমতা বেশি থাকবে৷ এবং বিলটি প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে দুর্বল শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করে। ওয়েলসের লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা জেন ডডসও বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। (সূত্র: বিবিসি)

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close