নিউজ

সিলেটে ১ হাজার ঘর নির্মাণে জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট ও টিভি ওয়ানের যৌথ উদ্যোগ

প্রবাসের উদ্যোগ

লণ্ডন, ৪ আগস্ট : সিলেট ও সুনামগঞ্জে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ১ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট ও টিভি ওয়ান। সেইফ হোম গ্রেটার সিলেট নামে এই প্রকল্পে মোট চার ধাপে ২৫০টি করে নির্মিত হবে ১ হাজার ঘর। পাকা বা ইটের তৈরী দেয়াল এবং চাল (ছাদ) নির্মান করা হবে বজবুত টিন দিয়ে। ”সেইফ হোম” এর এমন একটি ঘর নির্মান করতে প্রয়োজন হবে মাত্র ২ হাজার পাউন্ড। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরতে শুক্রবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন কর হয়।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে ১হাজার পরিবারকে দুই রুম বিশিষ্ট আধা পাকা এ ঘর নির্মান করে দেয়া হবে। প্রতিটি রুম এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে ১৩ ফুট করে। আর প্রত্যেকটি বাড়িতে থাকবে বারান্দা।
প্রত্যেকটি ঘরের আয়তন হবে ৪২৯ বর্গফুট। যা হবে ছোট একটি পরিবারের জন্য নিরাপদ এবং টেকসই স্থায়ী মাথা গোজার ঠিকানা। ”সেইফ হোম” এর এমন এই প্রকল্পে প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করা হয়।

তৌহিদুল করিম মুজাহিদের উপস্থাপনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন টিভি ওয়ানের ডিরেক্টর অপারেশন গোলাম রাসুল। উপস্থিত সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরদেন জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, টিভি ওয়ানের ডাইরেক্টর শায়খ আব্দুর রহমান মাদানী ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টিভি ওয়ান এ প্রকল্পের জন্য অর্থ বা তহবিল সংগহ্র করার জন্য নিয়োমিত চ্যারিটি এ্যপিল, বিজ্ঞাপন ও নানা মাত্রিক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। প্রাপ্ত অর্থ জমা হবে টিভি ওয়ানের দির্ঘ সময়ের চ্যারিট্যাবল পার্টনার জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের সেইফ হোম তহবিলে।

জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বৃটেনের চ্যরিটি কমিশন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অধীনে এনজিও বিষয়ক বুরে্যার নিবন্ধিত একটি মানবিক সংস্থ্যা। এ সংস্থ্যাটি মুলতঃ সিলেটের আর্থ—সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে এবং সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে । দির্ঘ তিন দশকে জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট সিলেট বিভাগে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থ্যান, ইয়াতিম ও বিধবা, নিরাপদ পানি, গৃহ নির্মান এবং মসজিদ নির্মানের মত বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করে মানবিক কাজের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এছাড়াও সিডর, আইলা, আ¤ফান এবং প্রতি বছর বন্যায় জরুরী ত্রান প্রদানের মাধ্যমে দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।
এ বছরের বন্যায় সংস্থটি প্রায় ৩হাজার ২শ ৮০ পরিবারকে জরুরী খাদ্য, চিকিৎসা এবং আশ্রয় প্রদান করেছে।

মানবিকক কাজে জমজম চ্যারিট্যাবল একটি দ্বয়িত্বশীল, বিশ্বস্ত এবং জবাবদিহি মূলক সংস্থ্যা তবুও টিভি ওয়ান ”সেইফ হোম” প্রকল্পের প্রতিটি দানের নিয়োমিত আপডেট দর্শক ও দাতাদের সামনে অত্যন্ত যত্নের সাথে তুলে ধরবে।

করণীয়:
কমিউনিটির মানুষের সহযোগিতা কামনা করে বলা হয়, আপনারা কমিউনিটির সর্বস্তর থেকে সেইফ হোম গ্রেটার সিলেট প্রকল্পে এগিয়ে আসতে পারেন। আপনি চাইলেই সেইফ হোমের মাধ্যমে নিন্মোক্ত উপায়ে সিলেটে ঘর নির্মান করতে পারেন ব্যাক্তিগত দানের মাধ্যমে, পারিবারিক ভাবে এক বা একাধিক পরিবার এক সাথে, একাধিক বন্ধু বা শুভাকাংকীরা মিলে, আপনার কমিউনিটির পক্ষ থেকে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে, সামাজিক, ক্রীড়া এবং সেচ্ছা সেবক সংগঠনের পক্ষ থেকে, স্কুলের অভিবাবকদের পক্ষ থেকে এবং মসজিদের মুসল্লিদেও পক্ষ থেকে

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, এ বছরের বন্যায় যে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য উপাত্ত না পাওয়া গেলেও সরকারের নানা বিভাগ ,অধিদপ্তর, জাতিসংঘের নানা সহযোগী সংস্থ্যা এবং নানা বেসরকারী দাতব্য সংস্থার তথ্য ও গবেষনা মতে সিলেট বিভাগের ৭৫% এলাকা কোন না কোন ভাবে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তার মধ্যে সিলেট জেলার ৮০% এবং সুনামগঞ্জ জেলার ৯০% অঞ্চল সম্পূর্ন প্লাবিত হয়। এ বছর বন্যায় ১৮টি জেলায় মোট আনুমানিক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭২ টাকা । যার ৮৫% ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শুধু মাত্র সিলেট বিভাগে। প্রাণ হারিয়েছে ৬৫ জন। প্রায় ৭ লাখ ৭ হাজার একরের ফসল নষ্ট হয়েছে। গবাদি পশু মারা গেছে প্রায় ৩ হাজার। ৬ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুপযোগী হয়েছে। শত শত মসজিদ এবং মাদ্রাসাও সম্পূর্ন বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো প্রায় ১১৮টি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিজ ঘরে অবস্থান করতে পারে না । আর সিলেট বিভাগে সম্পূর্ন বা আংশিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০০ হাজারেরও বেশি।
তবে সংখ্যার এ হিসাব দিয়ে বৃহত্তর সিলেটে ঘটে যাওয়া এবারের ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন কোন ভাবেই সম্ভব নয়। বহু গ্রাম বা গ্রামের অধকাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে হাজার হাজার পরিবার এমনও আছে যে তারা শুধু মাত্র ঘর হারিয়েছে এমন নয় পাশা পাশি হারিয়েছে ভিটা মাটিও ।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close