নিউজ

শায়খুল হাদীস আল্লামা হাবিবুর রহমানের ইন্তেকাল, দাফন সম্পন্ন

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
জীবদ্দশায় আল্লামা হাবিবুর রহমান ঐতিহ্যবাহী ইছামতি কামিল মাদরাসার সাবেক অধক্ষের দায়িত্ব পালনসহ সৎপুর কামিলমাদ্রাসায় প্রধান মুহাদ্দিসের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে হাজার হাজার আলেম ও উস্তাদ তৈরী হন, যারাদেশে-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এবং সুনামের সাথে ইলমে দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন।

শায়খুল হাদিস আল্লমা হবিবুর রহমান জকিগঞ্জের রারাই গ্রামে ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এলাকার খ্যাতিমানআলিমে দ্বীন মরহুম মাওলানা মুমতায আলী ও মাতা মরহুমা আমিনা খাতুন। ৭ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

তিনি ইছামতি দারুল উলুম সিনিয়র মাদরাসায় অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরনিয়মতান্ত্রিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর দীর্ঘ পরিশ্রম ও একান্ত প্রচেষ্টায় ইছামতি মাদরাসা পূর্ব সিলেটের অন্যতম শ্রেষ্ঠএকটি ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। তাঁর একক প্রচেষ্টায় মাদরাসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়। আলিম, ফাজিল ও কামিল ক্লাশের সরকারি মঞ্জুরি এবং স্বীকৃতি আদায়ে তিনি অবদান রাখেন। তিনি ইছামতি মাদরাসার প্রধানপৃষ্ঠপোষক এবং গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শায়খুলহাদিস ছিলেন।

অর্ধ শতাব্দীরও অধিককাল ধরে ইলমে হাদীসের খেদমতে নিয়োজিত এ মনীষী ব্যক্তিত্ব অধ্যাপনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরকাছে কুরআন-হাদীসের শিক্ষা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মাহফিলে বয়ান পেশ করতেন। তিনি বৃটেনে বহুবারসফরে এসে এখান দ্বীনি প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষাদানসহ বয়ান-নসিহার মাধ্যমের ব্রিটিশ-বাংলাদেশী মুসলিম সমাজে ইসলামেরআলোকশিখা প্রজ্জ্বলনে ভূমিকা রাখেন।

উল্লেখ্য, ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত হাদীস বিশারদের মধ্যে অন্যতম শায়খুল হাদীস আল্লামা হবিবুর রহমান। কুরআন, হাদীসের পাশাপাশি ইসলামী শরীয়াহর মৌলিক বিষয়ের পাশাপাশি রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজকল্যাণ, প্রশাসন, আইন ওবিচারসহ যাবতীয় জাগতিক মানবিক বিষয়ে তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ইলমে দ্বীন শিক্ষাদান ও সমাজসেবার পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান লক্ষণীয়। ছাত্র জীবনে তিনি নেজামেইসলামী পার্টির ছাত্র সংগঠন জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া’র সাথে সম্পৃক্ত হন এবং বিভিন্ন সময় এ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণদায়িত্ব পালন করেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি আল্লামা ফুলতলী প্রতিষ্ঠিত আল ইসলাহ‘র সহ-সভাপতির দায়িত্বেনিয়োজিত ছিলেন।

শিক্ষকতা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ওয়াজ-নসিহত ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সাথেসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সতেরটি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লিখিত প্রবন্ধ সমূহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।এছাড়া অনেক গ্রন্থ এখনো অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।

জীবদ্দশায় তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি সংযুক্ত আবর আমিরাতে গমন করেন। প্রথমে উম্মুল কুওয়াইনশহরে একটি মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অল্পদিনের মধ্যে প্রতিযোগিতামূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেকৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি সে দেশের বিচার বিভাগে যোগদান করেন। এছাড়া দাওয়াতী সফরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিরিয়া, মরক্কো ও মিশর সফর করেন। সফরকালে তিনি সময় সেসব দেশের বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদগণের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়করেন। এছাড়া ভারতের আসাম প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক দাওয়াতী সফর করেন। সেসব সফরেমাহফিলে যোগদান ছাড়াও উলামায়ে কেরামের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্থানে হাদীস শরীফের দারস প্রদান করেন। মিশরেসফরের সময় কায়রো শহরে সাহাবি উকবা ইবন আমির (রা.) এর মাজার প্রাঙ্গণে, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (র.)-এরমাজার প্রাঙ্গণ এবং ইতিহাস খ্যাত আল-আজহার মসজিদে হাদীস শরিফের দারস প্রদান করেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্নশহরে তাঁর প্রেরণা ও নির্দেশনায় বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামী সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close