নিউজ

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সৈয়দ আব্দুল হান্নানের ইন্তেকাল, দাফন সম্পন্ন

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ৬ সেপ্টেম্বর : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বৃহত্তর সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, ন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতা ও জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুল হান্নান আর নেই। তিনি গত ৩১ আগস্ট, মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে নগরীর একটি বেসরকারী হাসহাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তিনি স্ত্রী, চার ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মঙ্গলবার বাদ মাগরিব শাহী ঈদগাহ মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন বুধবার গ্রামের বাড়ী সৈয়দপুরের শাহারপাড়ায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য, সৈয়দ আব্দুল হান্নান ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের শ্বশুর। কয়েক মাস আগে তাঁর ছোট দুই ভাই বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বার্মিংহামের বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুর রহমান ও সৈয়দ আতাউর রহমান বাংলাদেশে পরপর ইন্তেকাল।

সৈয়দ আব্দুল হান্নানের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দেশে-বিদেশে থাকা তাঁর পরিচিত মহল ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। মরহুমের লাশ এক নজর দেখার জন্য নগরীর শাহী ঈদগায় তার বাসভবনে রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ছাত্র, ওলামা মাশায়েখ ও নানা শ্রেণীপেশার মানুষ ভিড় করেন।
মঙ্গলবার বাদ মাগরিব ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ মাঠে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন শাহমীর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল হান্নান। মরহুমের ভাতিজা সৈয়দ মবনুর সঞ্চালনায় জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মরহুমের বড় ছেলে সৈয়দ হাসান আহমদ ও ছোট ছেলে সিলেট ল কলেজের অধ্যক্ষ এডভোকেট সৈয়দ মহসিন আহমদ। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেন, জাসদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি লোকমান আহমদ, সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা সিকন্দর আলী, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

মরহুমের ভাতিজা, বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ মবনুর ফেইসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুল হান্নান ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সুনামগঞ্জের সৈয়দপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যৌবনের শুরুতেই চাকুরির উদ্দেশ্যে ঢাকার আদমজী জোট মিলে চলে যান। তখন সেখানে শ্রমিকনেতা ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। মওলানা ভাসানী যখন আদমজীতে শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন, সেই সংগঠনের সেক্রেটারি ছিলেন সৈয়দ আব্দুল হান্নান। তিনি মওলানা ভাসানী ও অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমদের সাথে ন্যাপের রাজনীতি শুরু করেন। তিনি আজীবন অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমদের ন্যাপ করেছেন।

সৈয়দ আব্দুল হান্নান ছিলেন একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জের সংগঠক। তিনি ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়েছেন। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তাঁকে দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পাকিস্তানী সৈনিকরা তাঁর খুঁজে বাড়িতে তিনবার আসে। তিনি সাত বছর সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অনেকবার কারানির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাম রাজনীতি করলেও তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতেন। নিয়মিত পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতেন। মসজিদ-মাদরাসা তৈরিতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা ও সাহায্য করতেন। আলেম উলামাদের সাহায্যে তিনি সর্বদা এগিয়ে থাকতেন। ভাটি অঞ্চলের বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা তৈরীতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। নিজগ্রাম সৈয়দপুরে কিংবা তার আশপাশে যখনই কোনো সমস্যা হয়েছে, তখনই তিনি সমাধানের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তেন।

সুরমা পরিবারের শোক:
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও প্রবীণ ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আব্দুল হান্নানের ইন্তেকালে সাপ্তাহিক সুরমা পরিবারের পক্ষ শোক প্রকাশ করা হয়েছে। সুরমার প্রধান সম্পাদক ফরীদ আহমদ রেজা, সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, সাবেক সম্পাদক আহমদ ময়েজ, বার্তা সম্পাদক আবদুল কাইয়ূম ও এমডি এমাদুর রহমান এমাদসহ সুরমা পরিবারের পক্ষ থেকে এক বার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
উল্লেখ্য, মরহুম সৈয়দ আব্দুল হান্নানের পরিবারের সাথে সুরমার প্রধান সম্পাদক ফরীদ আহমদ রেজার পরিবার আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। তিনি তাঁর এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে মরহুমের প্রশংসা করে লিখেছেন, “আল্লাহ আমাদের মাফ করুন এবং তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। নামাজ জান্নাতের চাবি হলে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি নামাজি ছিলেন।”

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close