নিউজ

হুমকির মুখে এবার গার্মেন্টস সেক্টর

র‌্যাব নিষেধাজ্ঞার জের

এলসি’র কপিতে নতুন শর্তনিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগে নেই বিজিএমইএ
জাতিসংঘে গুম প্রসঙ্গ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য
সেনাপ্রধানকে শুনানিতে ডাকতে পারে জাতিসংঘ
বেনজির কি জার্মানি ঢুকতে পারবে?

।। বিশেষ প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ৯ ফেব্রুয়ারি : গার্মেন্টসের রপ্তানি সংক্রান্ত ব্যাংক ডকুমেন্ট এলসি’তে (লেটার অফ ক্রেডিট) নতুন শর্ত যোগ হচ্ছে—এ আশঙ্কায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর পড়তে যাচ্ছে হুমকির মুখে। নিরাপত্তা বাহিনী ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জের ধরে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে পাঠানো একটি এলসিতে প্রথম এই শর্তটি যোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে । নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত কোন ব্যক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত নেই মর্মে নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে নতুন ওই শর্তে। যদি এমন কেউ জড়িত থাকে তবে রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানি বিল পরিশোধ আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নিয়ম অনুসারে ব্যাহত হবে অথবা এসি বাতিল হয়ে যাবে।
রপ্তানি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এই এক অশনী সংকেত। কেবলমাত্র একটি এলসি নয় বরং ইউ এস ডলার কেন্দ্রিক প্রতিটি লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন না কোনভাবে এই শর্তটি যুক্ত হবে অথবা আরোপিত হবে -এটা অভিজ্ঞ মহল বার বার উল্লেখ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্ট রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ বলছে এ ব্যাপারে গার্মেন্টস মালিকরা উদ্বিগ্ন নন  সরকারসমর্থিত বিজিএমইএ নেতারা বলছেন । তারা আরো বলছেন, তাদের কোনো সদস্য এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দাখিল করেনি।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কিছু কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চিন্তিত নয় । কারণ এই পদক্ষেপটি এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে পোশাকের চালানকে প্রভাবিত করেনি। র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলছে বলে কোনো কোনো পত্রিকায় খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিজিএমইএ সভাপতি আরো বলেন, “বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে পোশাক সামগ্রীর চালান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আমরা মোটেও চিন্তিত নই।”

জাতিসংঘে গুম প্রসঙ্গ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য:
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার বার্ষিক অধিবেশনে চলতি সপ্তাহে জেনেভায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  বাংলাদেশ প্রসঙ্গে গুম, রাজনৈতিক অধিকার ও র‌্যাব’র ক্রসফায়ার প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশ সরকারকে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে। সর্বশেষ এই সংস্থার অধিবেশনে বাংলাদেশ এই বিষয়গুলোতে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে এবারের অধিবেশনে বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাবার কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সম্প্রতি এই এই ব্যাপারে যে  বক্তব্য দিয়েছেন তাকে কেন্দ্র করে তা আলোচনার ঝড় তুলেছে। তিনি বলছেন গুমের জন্য আলোচিত ব্যক্তিরা প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবে মারা গেছে। যদিও এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কোন তালিকা আছে কিনা অথবা তাদের সংখ্যা কত এবং তারা কারা এ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছুই বলেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে গুম প্রসঙ্গে গত কয়েক বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গুমের শিকার ব্যক্তিরা পারিবারিক কারণেকিংবা লেনদেনের কারণে পালিয়ে আছে বলে যে দাবি করা হচ্ছিল তারই ধারাবাহিকতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন মন্তব্য করলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত সংস্থাগুলো খুবই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র আভাস দিয়েছে। সরকারের এ ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মানবাধিকার সম্পর্কে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের প্রকৃত মনোভাব ও অবস্থান প্রতিফলিত হয় বলে ইতিমধ্যে এসব কর্তৃপক্ষের কাছে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সেনাপ্রধানকে শুনানিতে ডাকতে পারে জাতিসংঘ ১৫টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সংস্থা প্রতিষ্ঠান র‌্যাব সদস্যদের নিয়োগ এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে আবেদন জানিয়েছিলো তার জের ধরে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান কে ডাকতে পারে জাতিসংঘ । নিউইয়র্ক ভিত্তিক একাধিক সূত্র সাপ্তাহিক সুরমা কে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেনাপ্রধানের এই শুনানি অথবা ব্যাখ্যামূলক বৈঠকটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে সপ্তাহিক সুরমার পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং আমরা উত্তরের জন্য অপেক্ষমান।

বেনজিরের জার্মান সফর প্রসঙ্গে-জার্মানি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক লাখ পিস বেডশীট ও বালিশের কভার কেনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুলিশের আইজি ড. বেনজির আহমেদের জার্মানি সফরের ছুটি অনুমোদন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ।৭ফেব্রুয়ারি ইস্যুকৃত ওই সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, ২৯ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৯দিনের জন্য তিনি ওই সফরে যাবেন। তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরো দুইজন উপ সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকবেন। তবে তাদের ব্যয়ভার সরকার বহন করবে না। সরবরাহকারী প্রতিষঠান বহন করবে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এর অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারী।

এছাড়া, বেডশীট পানির ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চীন শীর্ষস্থানে রয়েছে। সেখানে জার্মানি থেকে বেডশীট বড় আকারে কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  আবার অনেকে বিষয়টি রহস্যজনক বলেও উল্লেখ করেছেন। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনো না কোনো মহলের বাণিজ্যিক অথবা অর্থ পাচার সংক্রান্ত বিষয় জড়িত আছে কিনা সেই তদন্তের কথাও বলছেন অনেকে। তবে এই বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বেনোজির এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠমিত্র ও নিরাপত্তা জোট ন্যাটোর অন্যতম প্রধান সদস্য জার্মানি নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে বেনজিরকে তার দেশে স্বাগত জানাবে কি না? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পুলিশের আইজি কি জার্মানি ঢুকতে পারবেন? তারও আগে জরুরি প্রশ্ন হচ্ছে, অফিশিয়াল পাসপোর্টধারী বেনজিরকে ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাস ভিসা ইস্যু করবে কিনা? এ নিয়ে মিশ্র বক্তব্য পাওয়া গেছে বিভিন্ন সূত্র থেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে যে তাকে হয়তো ভিসা ইস্যু করা  হবেনা। আর ভিসা পেলেও শেষ পর্যন্ত তিনি জার্মানি ঢুকতে পারেন কিনা — এ প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে আসছে।  ইতিপূর্বে বেনোজিরকে আমেরিকা যাবার পথে দুবাই থেকে থকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল, যদিও সে সময় তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি ।

https://issuu.com/home/published/sur001_e40344e38293e0
Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close