খুলে গেলো প্যাণ্ডোরা-বক্স : বিশ্বনেতা ও প্রভাবশালীদের মুখোশ উন্মোচন
।। সুরমা ডেস্ক ।।
লণ্ডন, ৮ অক্টোবর : খুলে গেল প্যাণ্ডেরা বক্স! আর্থিক কেলেঙ্কারির অন্যতম বড়সড় তথ্য ফাঁস! খুলে যাওয়া এই প্যাণ্ডোরা বক্স অনেক বিশ্বনেতা ও প্রভাবশালীদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালীদের গোপন অর্থ ও সম্পদের লেনদেনের তথ্য ফাঁসকারী সাংবাদিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে) এই তথ্য ফাঁসের নামকরণ করেছে ‘দ্য পাণ্ডোরা পেপার্স’। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, ধনকুবের, ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ও ক্রীড়াবিদদেও গোপন সম্পদ ও লেনদেন ফাঁস হয়ে গিয়েছে এই নথিপত্রে। তাঁদের মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, বর্তমান টোরি পার্টির কো-চেয়ার ও ডোনারসহ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্ল্যাদিমির পুতিন, জর্ডানের রাজা, কাতারের ক্ষমতাসীন রাজপরিবার, আইভোরি কোস্ট ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী, ইকুয়েডর, কেনিয়া, এল সালভেদর, পানামা, প্যারাগুয়ে ও হণ্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও গ্যাবনের প্রেসিডেন্টের নাম এসেছে প্রকাশিত তথ্যে। তারকাদের মধ্যে পপস্টার শাকিরা, ক্রিকেটার শচিন টেণ্ডুলকার, স্প্যানিশ ফুটবল কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা, ইটালীয় ফুটবল কোচ কার্লো আনচেলোত্তি, আর্জেন্টিনার ফুটবলার আনহেল ডি মারিয়ার নাম রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও খেলোয়াড় ছাড়াও বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিএনপি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নাম নেপালী বিলিয়ার বিনোদ বিহারীর সাথে সম্পর্ক সূত্রে উঠে এসেছে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিবেদনে। এযাবত যাদেরই নাম এসেছে তা ফাঁস হওয়া নথির প্রাথমিক কিস্তি। পরবর্তী কিস্তিসমূহে আরো অনেকের নাম বের হবে বলে ধারাণা করা হচ্ছে।
প্যাণ্ডোরা পেপার্সের অন্যতম মিডিয়া পার্টনার বৃটেনের দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন ধরে গার্ডিয়ানসহ অন্যান্য গণমাধ্যম তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ অব্যাহত রাখবে। শুরুটা হয়েছে বিশ্বের কয়েকজন ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদের তথ্য প্রকশের মধ্য দিয়ে।
বিবিসির তদন্তের মাধ্যমে অফশোর ফার্মগুলি ব্যবহার করে কেনা বৃটেনের ১,৫০০ এরও বেশী সম্পত্তির গোপন মালিকদের নাম উন্মোচন করা হয়েছে।
প্যাণ্ডোরা পেপার্সে ফাঁস হওয়া তথ্যে যেসব সম্পদের তালিকা রয়েছে সেসবের আনুমানিক মূল্য ৪ বিলিয়ন পাউণ্ডেরও বেশী। আর এসবের মালিকদের মধ্যে রয়েছেন উচ্চপদস্থ বিদেশী রাজনীতিবিদ, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং বৃটেনের রাজনৈতিক পার্টির ডোনাররা।
ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, সংসদের সময় পেলেই তারা এসংক্রান্ত একটি নতুন আইন আনবেন।
ধরাবাহিকভাবে ক্ষমতা থাকা বর্তমান টোরি সরকার বিদেশী কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের জন্য সম্পত্তির মালিকদের নামকরণ বাধ্যতামূলক করে আইন প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্যাণ্ডোর পেপার্সে ইতোমধ্যে যে আর্থিক নথিপত্র ফাঁস হয়েছে, তাতে দেখা গেছে নিজ দেশে নজরদারি এড়াতে প্রথমসারির ব্যক্তিরা কীভাহবে তাঁর সম্পদ বিদেশী অ্যাকাউন্টগুলিতে সরিয়ে দিয়েছেন। গত ৩ অক্টোবর, রবিবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা জানানো হয়েছে।
বিবিসি‘র সূত্র অনুযায়ী ফাঁস হওয়া প্রায় ১২ মিলিয়ন ডকুমেন্ট এবং ফাইল থেকে রাজনীতিবিদ এবং বিলিয়নিয়ার বিশ্বনেতৃবৃন্দের গোপন সম্পদ এবং লেনদেনের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এই সর্ববৃহৎ বৈশ্বিক তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওয়াশিংটন ডিসির ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস এর ১১৭টি দেশের ৬ শতাধিক। তারা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিদের লুকানো ভাগ্যের দিকে তাদের নজর নিক্ষেপ করেছেন। বৃটেনে বিবিসি প্যানোরামা এবং গার্ডিয়ান এই তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছে। আইসিআইজে বছর দুয়েক আগে এ সংক্রান্ত তথ্যগুলি পেয়েছিল। দীর্ঘ এক বছর অনুসন্ধানের পর প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, আইসিআইজে পানামা পেপার্স, প্যারাডাইস পেপার্সের পর এবার ‘প্যাণ্ডোরা পেপার্স’ প্রকাশ করলো। তাতে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনীতিবিদ, ধনী ব্যক্তি ও তারকার গোপন সম্পদ ও তথ্য প্রকাশ করেছে তারা।