নিউজ

দ্বিতীয় দফা অবরোধ শুরু- “যে হাত দিয়ে আগুন দিবে সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে”: প্রধানমন্ত্রী- “ভোটডাকাত হাসিনার পতন সময়ের ব্যাপার” : তারেক রহমান

নেতাকর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত- বিএনপি নেতা এমরান সালেহ প্রিন্স, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার

সুরমা প্রতিবেদন।

লন্ডন ৪ নভেম্বর; বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সকল নেতাকে গ্রেফতারেদেশব্যাপী পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৮ দিনে গ্রেফতার হয়েছেন ৮ হাজার নেতা-কর্মী। গ্রেফতার এড়াতে পুলিশের ব্যাপক অভিযান শুরুর পর বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতার বেশির ভাগই আত্মগোপনে রয়েছেন। সর্বশেষ শনিবার(৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফেনীর পরশুরামের সাবেক পৌর মেয়র আবু তালেবকে আটক করা হয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে রবিবার (৫ অক্টোবর) থেকে দ্বিতীয় দফা দেশব্যপী ৪৮ ঘন্টার অবরোধ ও এই সপ্তাহ জুড়ে টানা কর্মসূচিতে দেশের বেশিরভাগ অংশ ও রাজধানী কার্যত অচল হয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সময় রবিবার দিবাগত রাতে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় (বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একযোগে প্রচারিত) সকলকে ৫ ও ৬ নভেম্বরের দেশব্যপী অবরোধ পালনের আহবান জানিয়ে বলেন, ভোটডাকাত হাসিনার পতন সময়ের ব্যাপার। তিনি বলেন,ভোটাধিকার ফিরে পেতে ও দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে এই মুহূর্তে জনগণের দফা এক দাবি এক শেখ হাসিনার  পদত্যাগ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন আরো কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচী নানা প্রতিকূলতা ও কষ্ট সহ্য করে হলেও সফল করার জন্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছেন, যারা (এভাবে) আগুন দিয়ে পোড়াবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে। দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যেই হাত দিয়ে তারা আগুন দিবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তবেই তাদের শিক্ষা হবে। আগারগাঁও-মতিঝিল মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা উপলক্ষ্যে শনিবার আরামবাগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

যারা বাসে আগুন দেয়, গাড়িতে আগুন দেয়, তারা বাসে চড়ে না এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের গাড়ি নাই, তাদের জিনিসপত্র নাই, জনগণ যদি সেগুলো পোড়াতে শুরু করে তাহলে তারা কোথায় যাবে। তখন তারা কী করবে সেটাও তাদের চিন্তা করা উচিত। আমরা এখনো ধৈর্য ধরে আছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা তো অনেকদিন ক্ষমতায় ছিল। সে সময় পানি ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না, খাবার ছিল না, চিকিৎসা ছিল না, থাকার জায়গা ছিল না, একেবারে মানবেতর জীবনযাপন ছিল। আর গ্রামে গ্রামে ছিল হাহাকার। গত ২৮ অক্টোবরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কোনো মানুষ যার ভিতরে এতটুকু মনুষত্ব আছে তারা কি এভাবে পুলিশকে মারতে পারে? পুলিশ কী দোষটা করেছে? এ সময় পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সেদিন যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। অথচ ওই পুলিশের ওপর তারা আক্রমণ করেছে। পুলিশ পেছনে হটে গেছে, তারপরেও এক পুলিশকে ধরে যেভাবে তাকে লাঠিপেটা করেছে, হেলমেট খুলে ফেলে দিয়ে তারা মাথায় কুপিয়েছে।

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তারেক রহমানের বক্তব্য:

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রদত্ত বক্তব্যে বলেন, ৫ অক্টোবর রোববার থেকে সারাদেশব্যাপী শুরু হওয়া সর্বাত্মক অবরোধ একটানা দু’দিন অব্যাহত থাকবে।এই কর্মসূচীই আন্দোলনের শেষ কর্মসূচী নয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন আরো কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচী চলবে। তিনি বলেন,দেশে বর্তমানে লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, চাকুরীজীবি, পেশাজীবী, কৃষক, শ্রমিক কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এমনকি গার্মেন্টস কর্মী থেকে শুরু করে প্রধান বিচারপতি কিংবা নোবেল লোরিয়েট, ফ্যাসিস্ট হাসিনার রোষানল আর প্রতিহিংসা থেকে কেউ মুক্ত নয়। একজন মাত্র ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীনতা ও অধিকার জিন্মি করে রাখা হয়েছে। স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাইলে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতেই হবে। ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার অন্যতম অস্ত্র, আপনার-আমার-আমাদের সকলের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা।   

তারেক রহমান বলেন,বর্তমানে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রেখেছে, তারা কি আপনার ভোটে নির্বাচিত? আপনি কি ভোট দিয়ে আপনার পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পেরেছেন কিংবা পারছেন? আপনি কি ২০১৪ সাল কিংবা ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন? আপনার সন্তান যে নতুন ভোটার হয়েছিল কিংবা স্বজন অথবা প্রতিবেশী তারাও কি ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলো? পায়নি…কেউ ভোট দিতে পারেনি। চিহ্নিত ভোট ডাকাত হাসিনার শাসনামলে দেশের কোনো একটি পরিবারের একজন সদস্যও দিনের বেলায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে নিরাপদে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। আজ তাই দেশের প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যই তাদের লুন্ঠিত ভোটের অধিকার ফেরত পেতে ঐক্যবদ্ধ। আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের লুন্ঠিত ভোটের অধিকার ছিনিয়ে আনার আন্দোলনে আপনার পরিবারে আপনিই নেতা। এভাবে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে প্রতিটি পরিবারেই একজন নেতা রয়েছেন। তাহলে, মাফিয়া সরকার কতজনকে গ্রেফতার করবে? মানুষের লুন্ঠিত ভোটের অধিকার ছিনিয়ে আনার চলমান আন্দোলন দমন করতে মাফিয়া সরকার একের পর সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করলেই কি আন্দোলন থেমে যাবে? যাবেনা। কারণ, ইতোমধ্যেই এ আন্দোলনের অগ্নিশিখা ধারণ করেছে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্য।

বি এনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষই চলমান এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি সফল করে দেশের জনগণ প্রমান করে দিয়েছে,পুলিশের ইউনিফর্ম পরিয়ে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলন দমন করা যায়না। অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সাহসী ভূমিকার জন্য আমি জনগণকে অভিনন্দন জানাই। চলমান আন্দোলন, ১৮ কোটি মানুষের অধিকার আর বারো কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। জনগণের এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। আসুন, রোববার থেকে সারাদেশব্যাপী আবারো শুরু হওয়া দু’দিনের অবরোধ কর্মসূচী সফল করে আবারো জানিয়ে দেই, চলমান এই আন্দোলনে আমরা সবাই দেশ এবং স্বাধীনতা রক্ষা আন্দোলনের সৈনিক। ৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে আমরা হারিনি। দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার চলমান আন্দোলনেও আমরা হারবো না….ইনশাআল্লাহ। 

তিনি বলেন, আমি উপলব্ধি করতে পারি, দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমজীবী-কর্মজীবীসহ অধিকাংশ মানুষ, নিদারুন দুঃখ কষ্টে দিনরাত অতিবাহিত করছেন। কারণ আওয়ামী দলীয় বাজার সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্রের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকার এতদিন জনগণকে চালের বদলে আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো। আর এখন আলুর দামও সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কোথাও জনগনের এই দুর্দশার কথা তুলে ধরারাও সুযোগও নেই। কারণ মাফিয়া চক্র প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই তাদের কালোথাবা বিস্তার করে রেখেছে। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। তাই, নিজের অধিকার আদায়ের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিতে শামিল হোন। যদি রাজপথের উত্তাল মিছিলে অংশ নিতে নাও পারেন, প্রয়োজনে নিজ বাড়িতে কিংবা বাসায় অবস্থান নিন। আপনি যাত্রী না হলে যাত্রীবিহীন যানবাহন রাস্তায় চলবেনা। এটাই আপনার প্রতিবাদ। যার যতটুকু সাহস, যতটুকু সুযোগ, সেটুকুই নিয়ে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হোন …সোচ্চার থাকুন। যার হাতে কলম আছে, সম্ভব হলে মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে আপনার প্রতিবাদের ভাষা অন্যকে জানিয়ে জানিয়ে দিন। আমি বিশ্বাস করি, এভাবে যদি আমরা সবাই যিনি যার অবস্থান থেকে সাধ্যমতো সামর্থের সবটুকু দিয়ে আন্দোলনে শরিক থাকি, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে আরম্ভ করে তৃণমূল পর্যন্ত, বিভিন্ন পর্যায়ে আপনারা আপনাদের নেতৃত্ব, মেধা যোগ্যতা অভিজ্ঞতা দিয়ে দল এবং দেশের জন্য ভূমিকা রেখেছেন, ভূমিকা রেখে চলেছেন। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় দলের স্বার্থে ব্যয় করেছেন। আপনাদের সম্মিলিত ত্যাগ ও প্রচেষ্টার কারণেই বিএনপি আজ সারাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছে। বড়ো দল হিসেবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে কাউকে হয়তো যথাযোগ্য ‘অবস্থানে’ মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি, এটি কিন্তু আপনার ব্যর্থতা নয় বরং বলা যায় দলীয় সীমাবদ্ধতা। সুতরাং, এ নিয়ে কারো মনে ক্ষোভ কিংবা মান অভিমান থাকলে সেটি ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা এখন সময়ের দাবি।  কারণ, বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র-মানবাধিকার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে বিএনপির নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আপনার নেতৃত্ব বেশি প্রয়োজন। আজ তাই সকলের প্রতি আমার বিনীত আহবান, আসুন আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যিনি যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখি।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close