কমিউনিটি নিউজ

মেয়র লুৎফুর রহমানের কর্মমুখর ১ বছর: প্রথম বছরেই ৪০টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন

।। কাইয়ুম আব্দুল্লাহ ।।

লণ্ডন, ৯ জুন : তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর অতিবাহিত করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। তাঁর এই একবছর ছিলো বেশ কর্মমুখর। দায়িত্বের প্রথম বছরই মেয়র লুৎফুর রহমানের নেয়া কয়েকটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যতিক্রমী কর্মসূচী ইতোমধ্যে বিবিসিসহ ব্রিটিশ মূলধারার মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে কাভারেজ পেয়েছে। নিজ স্বপ্ন ও পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নিজস্ব ভবন নতুন টাউন হলে দাঁড়িয়ে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রথম বছরই বারার বাসিন্দাদের কল্যাণে নেয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুত কর্মসূচীর বাস্তবায়ন এবং গৃহীত ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের অবহিত করেন মেয়র। এসময় তিনি তাকে এবং তাঁর টিমকে বিপুলভাবে সমর্থন ও নির্বাচিত করায় সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি বারার জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

দায়িত্ব পালনের প্রথম বছর ৪০টি প্রতিশ্রুত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। বারার বাসিন্দাদের জন্য গত ১২ মাসে মেয়র কী কী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান তাঁর এই মেয়াদের চার বছরের জন্য যে ১২৩টি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তম্মধ্যে প্রথম বছরেই প্রায় ৪০টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন অথবা গৃহীত প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ দিয়েছেন।

গত ১ জুন, বৃহস্পতিবার হোয়াইটচ্যাপেল-এ নবনির্মিত টাউন হলে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন মেয়র লুৎফুর রহমান। এ সময় মেয়র টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিটাদের জীবন-মান উনস্থয়নে জনকল্যাণমূলক খাতে বেশী বেশী করে বিনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন তিনি। গত এক বছরে তাঁর প্রশাসনের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। লুৎফুর রহমান টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র হিসেবে গত ৫ মে চলতি মেয়াদের এক বছর পূর্ণ করেছেন।

মিডিয়া ব্রিফিং-এ ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মাইয়ুম মিয়া তালুকদার, হেড অব মেয়র অফিস এমি জ্যাকসন, ডেপুটি হেড আলিবর চৌধুরী, মেয়রের স্ট্র্যাটিজিক এডভাইজার মুহাম্মদ জুবায়েরসহ কাউন্সিলের উর্ধতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিং-এর আগে সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের গোটা টাউন হল ঘুরিয়ে দেখানো হয়। বক্তব্যের শুরুতেই মেয়র জানান, নিজ ব্যবস্থাপনায় টাউন হল প্রতিষ্ঠা করায় বছরে কাউন্সিলের ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় হবে।

মেয়রের নেয়া উল্লেখযোগ্য কর্মসূচীগুলো হলো- প্রাইমারি স্কুলের পাশাপাশি ব্রিটেনের প্রথমবারের মতো সেকেন্ডারি স্কুল পর্যায়ে ইউনিভার্সেল ফ্রি মিলস্ (সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ) সুবিধা চালুসহ ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস ও এডুকেশন মেইনটেন্যান্স এলাউন্স এবং ফ্রি হোম কেয়ার সার্ভিসেস প্রবর্তন। এছাড়া তিনি ইয়ুথ সার্ভিসের ক্ষেত্রে বাজেট কর্তনের মত প্রচলিত ধারার বিপরীতে গিয়ে বারায় ইয়ুথ সার্ভিসকে পুনর্জীবিত করতে বছরে প্রায় ১৪ মিলিয়ন পাউণ্ড বরাদ্দ দিয়েছেন। এর ফলে গোটা বারা জুড়ে নতুন নতুন (২০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে) ইয়ুথ সেন্টার বা ইয়ুথ প্রকল্প চালু করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে নির্বাহী মেয়রের দাবী এসব বরাদ্দ গোটা দেশের আর কোনো কাউন্সিল করবে না।

এছাড়া বারার সার্বিক নিরাপঙ্কা ব্যবস্থা আরো উন্নত ও সুসংহত করতে নতুন করে ৪১ জন এনফোর্সমে- অফিসার নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস্ এনফোর্সমেন্ট টিমকে ৭০ জনে উন্নীত করাসহ পর্যায়ক্রমে অন্তত ৩৩ জন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান মেয়র। আর যথেষ্ট সষ্ক্রিয়তার সাথে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে চার বছরে ৪ হাজার বাসস্থান নির্মাণের কর্মসূচী। ইতিমধ্যে সোস্যাল বা প্রাইভেট ল্যা-লর্ড ছাড়াও নতুন ঘর নির্মাণের জন্য কাউন্সিল বারার মধ্যে বেশ কিছু জায়গা নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ট্যাক্স ফ্রিজ বিষয়ে বলেন, চলতি অর্থবছরের জন্য ট্যাক্স ফ্রিজ রাখা ল-নের মাত্র তিনটি কাউন্সিলের অন্যতম একটি হচ্ছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। এর ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এই কঠিন সময়ে টাওয়ার হ্যামলেটসসহ অন্য দুটি কাউন্সিলে থাকবে অপরাপর বারার তুলনায় কম কাউন্সিল ট্যাক্স।

মেয়র বলেন, বিভিন্ন সার্ভিস উন্নত ও কার্যকর করাই আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। এছাড়াও আমরা বারার ভবিষ্যত বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেমন টাওয়ার হ্যামলেটস হোমস্কে পুরোপুরি কাউন্সিল নিয়ন্ত্রণে আনাসহ একই সাথে আমরা লেইজার সার্ভিস ও ইয়ুথ সার্ভিসকেও কাউন্সিলের অধীনে নিয়ে আসছি। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এই সার্ভিসগুলো সরাসরি কাউন্সিলের অধীনে আনার ফলে আরো ভালো ও উন্নত সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করেন মেয়র। প্রতি সপ্তাহে (শুক্র ও সোমবার) নিয়মিত ২টি সার্জারি করার মাধ্যমে মাসে প্রায় ৫ শ’ মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন জানিয়ে মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, এসব মানুষের বেশীর ভাগেরই সমস্যা হাউজিং। তিনি বলেন, চার বছরে ৪ হাজার সোস্যাল হাউজ সরবরাহের যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি, সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। মেয়র বলেন, বারার এডুকেশন ও ইয়ুথ সার্ভিসে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চরম এই সময়ে বারার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে কষ্ট অব লিভিং প্রকল্পগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফ্রি স্কুল মিল পায় এমন শিশুরা যাতে স্কুল হলিডে চলাকালীন সময়েও প্রোটিনযুক্ত খাবার পায় সেটা নিশ্চিত করতে শিশুপ্রতি হলিডে গ্রান্ট হিসেবে ১শ’ পাউন্ড করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৭ হাজার পেনশনারকে ১শ’ পাউন্ড করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। কাউহ্বিল ট্যাক্স ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৫ হাজার পরিবারের জন্য শিগগিরই আরেকটি ফ্যামেলি গ্রান্ট রিলিজ করা হবে বলে জানান মেয়র লুৎফুর রহমান।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে স্বতন্ত্রভাবে বিপুল জনসমর্থনে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হয়ে আলোচনার জন্ম দেন লুৎফুর রহমান। এরপর ২০১৪ সালেও পুনঃনির্বাচিত হন। কিন্তু ১ বছর যেতে না যেতেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠির দুরভিসন্ধির কাছে পরাজিত হন তিনি। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কোর্টের রায়ে তিনি মেয়রের দায়িত্ব থেকে অপসারিত হওয়ার পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচনে দাঁড়ানোর নিষেধাজ্ঞায়ও পড়েন। সব জটিলতা শেষ হওয়ার পর গতবছর ২০২২ সালের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিপুল জনসমর্থনে তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। একই সাথে বারার বাসিন্দাদের আশাতীত সমর্থনে তাঁর দল অ্যাস্পায়ার পার্টির সংখ্যাগরিষ্ট কাউন্সিলার নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে একচ্ছত্র নেতৃত্ব লাভে সক্ষম মেয়র লুৎফুর রহমান।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close