নিউজ

বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ: “ডা. জাফরুল্লাহর আকুতি ছিল— দেশটাকে বাঁচান”

ঢাকা অফিস।। ‘‌দেশের যোদ্ধা বন্ধু সবার’ স্লোগানকে সামনে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গরীবের ডাক্তার খ্যাত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণসভা ও প্রার্থনা অনুষ্ঠান শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে তাঁর নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারণ মানুষের জন্য জীবনভর সোচ্চার থেকে সাহসী মানুষের পরিচিতি পাওয়া ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভাবনায় ছিল শুধুই বাংলাদেশ। তাঁর স্ত্রী শিরিন হক প্রয়াত স্বামীর এই দিক তুলে ধরে বলেন, ‘দেশ ছাড়া কিচ্ছু বুঝতেন না জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাঁর শেষ আকুতি ছিল– আপনারা দেশটাকে বাঁচান।আমারও আজ একই আকুতি।’

আজীবন হতদরিদ্রদের চিকিৎসা দিয়ে গরিবের ডাক্তার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ ছিলেন ‘দেশের যোদ্ধা,বন্ধু সবার’।প্রার্থনা সভায় ও স্মৃতিচারণে সে কথাই উঠে আসে বারবার।

৪৮ বছরের দাম্পত্য সঙ্গী হিসেবে ডা. জাফরুল্লাহকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছেন শিরিন হক। জাফরুল্লাহর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন, আবার কখনও স্বামীর জীবনের গল্পে হাসিয়েছেন।

শিরিন হক বলেন, ‘জাফরুল্লাহ আমার পথের সঙ্গী ছিলেন। তাঁর সঙ্গে থাকা সহজ ছিল না। আমরা তর্ক করতাম। আবার একসঙ্গে নাটক দেখতে যেতাম। জাফরুল্লাহ চৌধুরী নাটক দেখতে ভালোবাসতেন। নাচ-গান খুব পছন্দ করতেন না। একবার তাঁকে নিয়ে গেলাম নাচ দেখতে।পাশের আসনে ঘুমিয়ে নাক ডাকছিলেন।’

সাধারণ মানুষের যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেখানেই ১১ এপ্রিল ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শিরিন হক বলেছেন, ‘চিকিৎসকরা তাঁকে (জাফরুল্লাহ) বড় কোনো হাসপাতালে নিতে বলেছিলেন। বলেছিলাম, চোখ খুলে যদি তিনি দেখেন, তাঁকে অন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, তাহলে জানতে চাইবেন– কে নিল এই সিদ্ধান্ত?’

দুই সন্তান বর্ষা চৌধুরী এবং বারিশ চৌধুরীকে পাশে নিয়ে জাফরুল্লাহর কর্মমুখর জীবনের কথা তুলে ধরে শিরিন হক বলেছেন, তিনি কাজপাগল ছিলেন। তাই এত আনন্দ আমরা করতে পারিনি। সন্তানদের সময় দিতে পারতেন না। কিন্তু খুব ভালোবাসতেন।

এসময় উন্নানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা ও ট্রাস্টি সন্ধ্যা রায়, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, নিউ এজ পত্রিকার প্রকাশক শহিদউল্লাহ খান বাদল, সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ, চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তরুণ চক্রবর্তী।

আরও অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নারী নেত্রী খুশী কবির, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, অভিনেতা সারা যাকের, গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অধ্যাপক ড. সিআর আবরার, কবি ফরহাদ মজহার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের
প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি,লেবার পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত,মুক্তিযোদ্ধা সাদেক খান,গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, গণস্বাস্থ্যের মিডিয়া উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।

প্রার্থনা সভায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. পারভীনহাসান, গীতা থেকে পাঠ করেন চিন্ময় হাওলাদার, ত্রিপিটক পাঠ করেন রিপন বড়ুয়া ও বাইবেল পাঠ করেন রোজলিন মরাউটা।

জাফরুল্লাহর প্রিয় আমেরিকান জ্যাজ পরিবেশন করেন পল ফুলার।দোয়া পরিচালনা করেন আবদুল্লাহ আল সাকি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আজিমের সঞ্চালনায় জাফরুল্লাহর কর্মময় জীবনের নানা কথা তুলে ধরেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. কাশেম চৌধুরী, ছোট বোন সেলিনা চৌধুরী মিলি, নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার, অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন প্রমুখ।

একাত্তরে লন্ডনের কিংস কলেজের এফআরসিএসের ছাত্র ডা. জাফরুল্লাহ গণহত্যার প্রতিবাদে পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে পরীক্ষা না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে গরিব মানুষের চিকিৎসাসেবায় ঝাঁপিয়ে পড়া জাফরুল্লাহ আসেন বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে। তাঁকে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেওয়া হয় ওষুধ নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকার জন্য। রাজনৈতিক দলের সদস্য না হয়েও সাধারণ মানুষের দাবি-দাওয়া এবং লড়াইয়ে ছিলেন সামনের সারিতে। জীবনের শেষ কয়েক বছর অসুস্থতা নিয়েই ছুটেছেন দেশজুড়ে। শেষদিকে তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়েছিল হুইলচেয়ার। একটি হুইলচেয়ারে দিনের পর দিন মানুষের সুখ দুঃখে ছুটে চলা এই মানুষটিকে আর কখনো দেখা যাবে না। তবে তাঁর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করার মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য সভায় সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। দেশবাসীর প্রতি জানানো হয় কৃতজ্ঞতা।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close