নিউজ

ডয়েচে ভেলে ও নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে গুম খুনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ

সুরমা প্রতিবেদন:: জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলের ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট ও সুইডেনভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের যৌথ অনুসন্ধানে র‍্যাবের বিষয়ে ‘ডেথ স্কোয়াড: ইনসাইড বাংলাদেশ’জ  র‍্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন’ও ‘জল্লাদের জবানবন্দি’ শিরোনামে সম্প্রতি এক বোম্বশেল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এখানে কক্সবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক হত্যাসহ গুম খুনের সাথে জড়িত বাহিনী র‍্যাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় উঠে এসেছে। আল জাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ এবং নেত্র নিউজের ‘আয়নাঘর’ প্রতিবেদনের পর এই তালিকায় ডয়েচে ভেলের নাম যুক্ত হলো।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনা এবং পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত র‍্যাবকে নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে ডয়চে ভেলের ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট এবং সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজ যৌথ অনুসন্ধান চালিয়েছে৷ প্রতিষ্ঠার দুই দশক পর এই প্রথম র‍্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তা নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করে সংবাদমাধ্যমের কাছে ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করার পুরো প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করেছেন। তাদের একজন  সরাসরি ক্রসফায়ারের নামে সাজানো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। আরেকজন খুব কাছে থেকে এমন হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করেছেন। তাদের বক্তব্যে অভিযোগ উঠেছে যে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা মোতাবেকই র‍্যাব রাজনৈতিক বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা করে থাকেন।

হুইসেলব্লোয়ার র‍্যাবের একজন অফিসার জানিয়েছেন, ব়্যাব যদি জানতে পারে যে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাহলে তিনি যে বাহিনীতে কাজ করেছেন সেই বাহিনীই তাকে মেরে ফেলতে পারে৷ ডয়চে ভেলে তাদের স্বীকারোক্তির সত্যতা যাচাই করেছে এবং বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী এবং অন্যান্য সূত্র যেমন পুলিশ এবং পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন, বিভিন্ন মামলার তথ্যভাণ্ডার এবং একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অডিও রেকর্ড যাচাই করার মাধ্যমে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে৷

ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়া দুই ব্যক্তিই দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রাজনৈতিক স্বার্থে এই এলিট বাহিনীকে ব্যবহার করেন৷ অভিযোগ রয়েছে, সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ থেকে এসবের অনুমোদনও দেয়া হয়৷ লক্ষ্যবস্তু যদি রাজনৈতিক ব্যক্তি হয় তাহলে কেবল উচ্চপর্যায়ের সুস্পষ্ট অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতেই এটি বাস্তবায়ন করা হয়৷ সাক্ষাৎকার দেয়া এক ব্যক্তি বলেন, এসব ক্ষেত্রে ‘‘সিদ্ধান্ত সর্বনিম্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আসবে৷ বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই আদেশটা প্রদান করে থাকেন৷”

অন্য সাক্ষাৎকারদাতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কোনো নির্দেশ দেন না৷” তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের প্রধান এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বলেন যিনি ২০০৯ সাল থেকে দেশের ক্ষমতায় আছেন৷ তিনি আরও বলেন, যেসব টার্গেটকে ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা তারও উপরের কেউ, যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দেন”, তাদের বিষয়টি ‘‘প্রাধান্য” দিয়ে দেখা হয়৷ চেইন অব কমান্ড বিষয়ে বিস্তারিত বলা ছাড়াও এই দুই তথ্যদাতা অভিজাত এই বাহিনীর ভেতরের অনেক তথ্য উন্মোচন করেছেন৷

ডয়চে ভেলে এবং নেত্র নিউজ এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং এসব অভিযোগকে ‘‘বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত‘‘ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ ডয়চে ভেলেকে ‘‘দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী প্রচার” না করার বিষয়ে সতর্কও করেছে মন্ত্রণালয়৷ তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোনো উত্তর দেয়া হয়নি৷

‘‘ডেথ স্কোয়াড” নিয়ে ডয়েচে ভেলে ও নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে যা জানা যায়, কোনো টার্গেটকে যখন মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তখন বেশ কিছু পদক্ষেপ সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করা হয়৷ প্রথমত একটি স্থান নির্ধারণ করা হয়৷ লোকচক্ষুর আড়ালের একটি স্থান বেছে নেয়া হয়, যাতে কোনো সম্ভাব্য সাক্ষী না থাকে৷ ঢাকায় এমন এক জায়গা হচ্ছে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া দূষিত তুরাগ নদীর তীর৷ আরেকটি হচ্ছে কক্সবাজার এবং টেকনাফের মধ্যকার ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের কিনারা৷ এরপর, সাধারণত গভীর রাতে, যখন রাস্তা জনমানবশূন্য থাকে এবং দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায়, কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে টার্গেটকে আটকে চোখ বেঁধে একটি বেসামরিক গাড়িতে তুলে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর টার্গেটকে গুলি করে তার রক্তক্ষরণে মৃত্যু হওয়া অবধি অপেক্ষা করা হয়৷ যখন তাদের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়, তাদের চোখের কাপড় খুলে ফেলা হয়৷ কোনো চিহ্ন না রাখার জন্য চোখ বাঁধা হয় নরম কাপড় দিয়ে৷ এরপর তাদের হাতের বাঁধনও খুলে ফেলা হয়। এরপর দৃশ্যপট সাজানো হয়৷ কী গল্প বলা হবে, তার ওপর নির্ভর করে নিহতের শরীরে নানা প্রমাণ সাজিয়ে রাখা হয়৷ যদি গল্পটি দুই গ্যাং এর মধ্যে মারামারির হয়, তাহলে মাদক এবং ইয়াবা মৃতের সঙ্গে রাখা হয়৷ সন্দেহভাজন জিহাদী হলে তার শরীরের পাশে ধর্মীয় কাগজপত্র রেখে দেয়া হয়৷উভয় ক্ষেত্রেই টার্গেটের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে দেয়া হয়৷ তিনি জানান, এইসব অস্ত্র অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারত থেকে পাচার করে আনা হয়৷ এরপর ফাঁকা গুলি করে বুলেটের খোসা মাটিতে ফেলে রাখা হয়৷ কিন্তু কিছু বিরল ক্ষেত্রে ব়্যাব একেবারেই নীরবে কাজ করে৷ ভিকটিমদের তুলে নিয়ে কোনো চিহ্ন রাখা হয় না৷ কখনও কখনও কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না৷ এইসব ঘটনাকে ‘‘গুম” বলে উল্লেখ করা হয়৷ বাংলাদেশজুড়ে এখনও শত শত মানুষ এভাবেই নিখোঁজ রয়েছেন৷

বছরের পর বছর ধরে র‌্যাবের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও৷ র‌্যাব এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শত শত রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বেসামরিক ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে, যারা আর ফিরে আসেনি, জানান এসব ঘটনার দিকে নজর রাখা অ্যাক্টিভিস্টরা৷ র‍্যাবের ব্যাপারে এমন অনুসন্ধান এর আগে করেছিল সুইডিশ রেডিও ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে। যাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে খুনী বানায় তাদের একটি প্রশিক্ষণের অডিও রেকর্ড পেয়েছে সুইডিশ রেডিও। যার খুব অল্প অংশ তারা প্রচার করেছে। তারা বলেছে যে ব্যক্তি এই রেকর্ড ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে সে অস্থির হয়ে গিয়েছিল। বারবার সে প্যানেল থেকে বের হয়ে পানি খাচ্ছিল। অডিওতে র‌্যাবের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, “তোমরা যদি তাকে (টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে) খুঁজে পাও, শুট এন্ড কিল হিম (গুলি করো এবং হত্যা করো), যেখানেই থাকুক। এরপর তার পাশে একটি অস্ত্র রেখে দাও।” বিচারবহির্ভুত হত্যার এমন রোমহর্ষক নির্দেশ দেয়ার পর পুলিশের এলিট ফোর্স কিভাবে কাকে হত্যা করবে এসব তালিকা কিভাবে নির্বাচন করে এসব নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। এমনকি এই কর্মকর্তা নিজেই যে অসংখ্য হত্যার সাথে জড়িত তা নিজেই উল্লেখ করেন। র‌্যাব কর্মকর্তা বর্ণনা করেন কীভাবে পুলিশ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়। এমনকি তারা অবৈধ অস্ত্র কিনে মানুষকে খুন করে সেই অস্ত্র তার পাশেই রেখে দেয়। আসলে সাধারন মানুষ কখনো অবৈধ অস্ত্র রাখে না। কিন্ত পুলিশ যাকে হত্যা করছে তারও পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল এই ধরনের বিষয় প্রমানের জন্য, বলতে গেলে আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি ছোড়ল, এই বক্তব্যের যথার্থতার জন্য নিহতের পাশে অস্ত্র রেখে দেয়া হয়। দুইঘণ্টাব্যাপী এই গোপন রেকর্ডিং-এ র‌্যাব যে হত্যা এবং জোরপূর্বক গুম করে এই বিষয়টি এই কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বার বার উল্লেখ করেন।

নেত্র নিউজ ও ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই সাজানো ক্রসফায়ারে একজন মানুষের মৃত্যুর মুহূর্তটি বর্ণনা করছিলেন র‍্যাবের একজন সাবেক কমান্ডার, যিনি নিজেই প্রত্যক্ষভাবে একাধিক ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি একদিন ঘড়ি ধরেছিলাম, যে অপারেশনটা আমি করেছি। ইট টেইকস এট লিস্ট টোয়েন্টি মিনিটস, এট লিস্ট টোয়েন্টি মিনিটস। টোয়েন্টি মিনিটস পর্যন্ত একটা শব্দ আসতে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে শেষ। একটা গোঙ্গানির শব্দ। কারণ হার্টতো আর পাম্প করতে পারেনা ব্লাড, সো কন্ঠ থেকে একটা শব্দ বের হতে থাকে, আপনি বুঝবেন ওই মানুষটা অক্সিজেন খুঁজছে কিন্তু অক্সিজেন পাচ্ছে না।” এই সাবেক র‍্যাব কমান্ডারদের ভাষ্য এবং প্রখ্যাত জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে ও নেত্র নিউজের সঙ্গে যৌথ অনুসন্ধানে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের এমন বিভীষিকাময় চিত্র উঠে এসেছে।

জানা যায় যে, গুমের ক্ষেত্রে তাঁরা সাধারণত তিন ধরনের কৌশল ব্যবহার করে থাকেন:- (১) টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে অপহরন; (২) তাকে হত্যা করা ও (৩) তার লাশ চিরতরে গুম করে ফেলা।

আলাপকালে তিনি বলেন, কোন লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার আগে তারা লাশের সাথে ভারি ইট বেঁধে দেয়। সেই কর্মকর্তা আরো কথা বলে যা অনেকেটা সিনেমার মত। যেসব অফিসার এই ধরনের অপারেশনে যায়,তারা অনেকে নিখুঁতভাবে এই কাজ করে। এটাও সত্য গুম এরপর হত্যা, এই ধরনের কাজে সব পুলিশ দক্ষ না। তাই এই ধরনের অপারেশনে কোন প্রকার ক্লু বা সামান্য চিহ্নও যাতে না থাকে, এমনকি আমাদের আইডিকার্ড, আমাদের গ্লাভস পরতে হয় যাতে আংগুলের ছাপ পাওয়া না যায়। এমনকি জুতার মধ্যেও আলাদা আবরন লাগানো হয়। ওই কর্মকর্তার মতে, রাজনীতিতে বিরোধীদলের বিশাল একটা অংশকে নিশ্চিহ্ন করাই এই ধরনের অপারেশনের লক্ষ্য। এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আসলে র‌্যাব যাদেরকে ধরে নিয়ে আসে, তাদের ভাগ্য আসলে উপরের নির্দেশের উপর নির্ভর করে। তিনি এই গোপন রেকর্ডিংয়ে গুমকৃত ব্যক্তিদের উপর কিভাবে অত্যাচার করা হয় এই বিষয়গুলোও বলেন। আসলে একটা অন্ধকার কক্ষের ঠিক মাঝখানে একটি হালকা আলোর বাতি দিয়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে নগ্ন অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাখা হয়, আর তার অন্ডকোষে ইট বেঁধে দেয়া হয়। ইটের ওজনের কারনে তার অন্ডকোষ অনেকেটা মুছড়িয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে এই ধরনের ব্যক্তি অবচেতন হয়ে যায়, আর বুঝাই যায় না সে কি মৃত না জীবিত। নির্মম নির্যাতন, গুম ও বিচার বর্হিভূত হত্যা ইত্যাদি কারণে র‌্যাব ইতোমধ্যে শুধু বাংলাদেশেই না সারাবিশ্বে র‍্যাব “সরকারি সন্ত্রাসী বাহিনী” হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ক্রসফায়ারের নামে কথিত সন্ত্রাসী বা অপরাধীদের হত্যার কারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং গণমাধ্যমগুলো ২০০৪ সাল থেকেই র‍্যাবকে একটি রাষ্ট্রীয় জল্লাদ বাহিনী বা ডেথ স্কোয়াড হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমের সাথে জড়িত থাকায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজস্ব মন্ত্রণালয়  র‍্যাবের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। নতুন উদঘাটন ও প্রতিবেদন তাদেরকে আরো বেশি আন্তর্জাতিক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিল।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সংগৃহীত ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৮ সালে নির্বাচনের বছরে বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে গিয়েছিল এবং সেই বছরই বাংলাদেশ সরকার “ওয়ার অন ড্রাগ” বা “মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” ঘোষণা করেছিল। যেমন, ২০১৭ সালে — অর্থাৎ নির্বাচনের আগের বছর — ১৫৫ জন মানুষ কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন। ২০১৮ সালে বা নির্বাচনের বছরে এই সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বাড়ে — ওই বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৪৬৫ জন। নির্বাচন-পরবর্তী ২০১৯ সালে নিহত হন ৩৯১ জন। এই সংখ্যা ২০২০ সালে কমে ২২৩ জনে নেমে আসে। বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী নূর খান এই ব্যাপারে বলেন, “জাতীয় নির্বাচন যখন আসে, বাংলাদেশে কিন্তু মানবাধিকার পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়।” তার বক্তব্য, গত দুইটি নির্বাচনের বছরের পরিস্থিতি থেকে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে আগামী নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা যেকোন প্রকারে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার বারবার অস্বীকার করে বলে আসছে যে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে না। কিন্তু এই জবানবন্দী আরও একবার দেখিয়ে দিলো যে সরকারকে এসব অস্বীকার করা থামাতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা শুরু করতে হবে।”

দেশের সুশীল সমাজের সদস্যরা বলেন, এই প্রতিবেদনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায় থেকে হুকুম দিয়ে মানবতাবিরোধী এসব নৃশংসতা করানোর তথ্য তুলে ধরা। ক্ষমতার শীর্ষে থেকে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রকে এভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কলঙ্কিত করা ও ঝুঁকির মুখে ফেলা গুরুতর অপরাধ।

উল্লেখ্য ডয়চে ভেলে ও নেত্র নিউজের পূর্ব ঘোষণা অনুয়ায়ী র‍্যাব নিয়ে তাদের তিন পর্বের অনুসন্ধানী সিরিজের প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রতিবেদনে থাকবে র‍্যাবের হেফাজতে বন্দী নির্যাতনের বর্ণনা। সিরিজের সর্বশেষ প্রতিবেদনে থাকবে কীভাবে র‍্যাবের বিভিন্ন ইউনিট আক্ষরিক অর্থেই “হত্যার প্রতিযোগিতায়” অংশ নিয়ে থাকে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close