নিউজ

ইসরাইলি কোম্পানির সঙ্গে ঢাকার জমজমাট ব্যবসা, ৬০কোটি টাকার গোয়েন্দা সামগ্রী ক্রয় 

।। সুরমা ডেস্ক ।।
লণ্ডন, ১৬ জানুয়ারী : তেল আবিব থেকে প্রকাশিত ডেইলি হারেজ পত্রিকা ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার বাংলাদেশ এর উপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ইসরাইলি সাংবাদিক ওদেদ ইয়ারন ও বাংলাদেশের নির্বাসিত সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের’র যৌথ এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সাপ্তাহিক সুরমার পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি এখানে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্যসহ তুলে ধরা হলো—

ইসরায়েলের সাবেক এক গোয়েন্দা কমান্ডার পরিচালিত কোম্পানি থেকে নজরদারির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ সরকার। গত বছর বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি আনা হয়েছে বলে সরকারি নথি ও আন্তর্জাতিক রপ্তানি রেকর্ডের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ। 

১০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) পত্রিকাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ যে সরঞ্জাম কিনেছে, তা মুঠোফোন ও ইন্টারনেট মাধ্যমে যোগাযোগের ওপর নজরদারিতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) কাছে এই প্রযুক্তি বিক্রি করেছে প্যাসিটোরা নামের একটি কোম্পানি। কোম্পানিটি সাইপ্রাসে নিবন্ধিত। তবে এটি পরিচালনা করেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা প্রযুক্তি ইউনিটের সাবেক কমান্ডার টাল দিলিয়ান।

আগে কোম্পানিটির নাম ছিল উইস্পেয়ার। সে সময় মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দিলিয়ান তাঁর কোম্পানির নজরদারির প্রযুক্তি স্পিয়ারহেড সিস্টেমের কথা প্রকাশ করেছিলেন। এই সিস্টেমে রয়েছে নজরদারির সরঞ্জাম ও ট্র্যাকিং সফটওয়্যার দিয়ে সজ্জিত একটি ভ্যান। এটা সেলুলার ও ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মুঠোফোন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। আশপাশের প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে থাকা এনক্রিপ্টেড হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা, ফেসবুক চ্যাট, যোগাযোগের তালিকা, কল ও টেক্সট মেসেজ সংগ্রহ করতে পারে। উইস্পেয়ার নিয়ে একটি উপস্থাপনায় বলা হয়, এর মাধ্যমে আওতার মধ্যে থাকা কম্পিউটার ও ফোনে আড়ি পাতার জন্য স্পাইওয়্যারও প্রবেশ করিয়ে দেওয়া যায়।

ফোর্বস-এর প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সাইপ্রাস সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। এ নিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত হয়। শেষ পর্যন্ত দিলিয়ান ও তাঁর কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা অভিযোগ থেকে রেহাই পান। তবে অবৈধভাবে লারনাকা বিমানবন্দর দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের ডিভাইস থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য কোম্পানিটিকে ১০ লাখ ইউরো (প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা) জরিমানা করা হয়।

হারেৎজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের জুন মাসে একটি স্পিয়ারহেড সিস্টেম সুইজারল্যান্ড থেকে ঢাকায় আনা হয়। প্রযুক্তি সরবরাহকারী ছিল প্যাসিটোরা। ক্রেতা এনটিএমসি। বাংলাদেশকে সরবরাহ করা চালানটির ওজন ৯৯১ কিলোগ্রাম। তাতে ইন্টারসেপশন সিস্টেম (আড়ি পাতার ব্যবস্থা), অপারেটিং সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার (সার্ভার, ড্রাইভ, মনিটর ইত্যাদি) ছিল। এর জন্য মোট খরচ হয়েছিল ৫৭ লাখ ডলার (প্রায় ৬০ কোটি টাকা)।প্যাসিটোরা হলো ইন্টেলেক্সা অ্যালায়েন্সের একটি প্রতিষ্ঠান। দিলিয়ান পরিচালিত কোম্পানিগুলোর একটি নেটওয়ার্ক এই ইন্টেলেক্সা। ইন্টেলেক্সার কাছে মোবাইল ফোন হ্যাকিং স্পাইওয়্যারসহ অত্যাধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি রয়েছে, যা তারা সারা বিশ্বের সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করে। নজরদারির এই প্রযুক্তি কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, তা শিখতে এনটিএমসির কমান্ডার ও অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ২০২১ ও ২০২২ সালে গ্রিস সফর করেছিলেন বলে হারেৎজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, যিনি পূর্বে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে অপারেশন  এবং গোয়েন্দা  শাখার দায়িত্বে  ছিলেন।  সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান, আজিজ আহমেদ দাবি করেন যে আহসান ব্যক্তিগতভাবে অনেক গুমের ঘটনার জন্য দায়ী । 

“আজ, বাংলাদেশে কোন উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক বিরোধিতার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ- সরকারের প্রধান রাজনৈতিক কৌশল হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করা।” জুলকারনাইন সায়ের খান, একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক যিনি এখন প্রবাসে থাকেন, সায়ের খান তার দেশে রাজনৈতিক নিপীড়ন প্রকাশ করেছেন এবং এই তদন্তে অংশ নেন। “বাংলাদেশ তার নাগরিকদের মৌলিক সুবিধা দিতে সক্ষম নয় অথচ সরকারের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো রাজনৈতিক পরিস্থিতি দমনে বিপুল অর্থ খরচ করে গোয়েন্দা প্রযুক্তি কিনতে ও তা ব্যবহার করতে ব্যাপকভাবে আগ্রহী।খানের দুই সহকর্মী কর্তৃপক্ষের দ্বারা নির্যাতিত হন সরকারের সমালোচনা করার পর।  কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে ১০ মাস আটক রাখা হয় মারাত্মকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল; এবং লেখক-সাংবাদিক মোশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, নির্যাতন করা হয়েছিল এবং সেখানে থাকাকালীন মারা তিনি মারা যান।  ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করা হয় একইভাবে‌। তিনি একটি আন্দোলন চলাকালে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেন ও সরকারের দমনীতির সমালোচনা করেন। শুধু এ কারণেই তাকে নির্যাতন করা হয় এবং এখনো তার নামে ফৌজদারী মামলা চলছে, যাতে তার দীর্ঘ কয়েক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হওয়ার আশঙ্কা আছে। 

হারেৎজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে ২০২১ সালে ইসরায়েলি কোম্পানি সেলেব্রাইট বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) কাছে মোবাইল ফোন হ্যাকিং টুল বিক্রি করেছে। এ ছাড়া আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে আসে, আরেকটি ইসরায়েলি কোম্পানি পিকসিক্স বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে মোবাইল ফোনে নজরদারি ও হ্যাকিং সিস্টেম বিক্রি করেছে।

সরকারের বক্তব্য:

এনটিএমসি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। নজরদারির এই প্রযুক্তি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে বলেন, ইসরায়েল থেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সরাসরি কিছু কেনা হয়নি। এ বিষয়ে এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানও একই কথা বলেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পাসপোর্টে ইসরায়েল ছাড়া বিশ্বের সব দেশের জন্য ‘বৈধ’ কথাটি লেখা ছিল। এখন সেটা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট সব দেশের জন্য বৈধ।

আসলাম চৌধুরী ও নুরুল হক নূর সমাচার:

শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ইসরাইলি কোম্পানিগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যের খবর এটা দ্বিতীয় কিস্তি এর আগে আল জাজিরাও এ ব্যাপারে বিস্তারিত খবর প্রকাশ করেছিল সেখানে আরো অনেক বিষয়ের সঙ্গে ইসরাইলের প্রসঙ্গ সংযুক্ত ছিল কিন্তু ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সর্ব যখন কথা হয় তখন এ কোথাও প্রসঙ্গক্রমে চলে আসে, বিএনপি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা আসলাম চৌধুরী গত ৬ বছর জেলে আছেন একজন ইসরাইলি নাগরিক মিস্টার মেন্দি সঙ্গে ছবি তোলা ও কথা বলার কারণে। সরকার তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তাকে জেলে পুড়ে রেখেছে। একইভাবে সম্প্রতি সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর দুবাই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিযোগে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকার সমিতিত লোকজন বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেছে নূরের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রদ্রোহীদের অভিযোগ করে এই মামলাগুলো থানায় সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close