যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী ও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২২৮১
বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানো হয়েছে। ৯ জানুয়ারী ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। তার চাকরির মেয়াদ আগামী ১১ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১১ জুলাই ১ (এক) বছর ৬ (ছয়) মাস মেয়াদে বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হলো।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদের একজন। তিনি এবং রেপিড একশন ব্যাটেলিয়ানের আরো কয়েকজন এবং ওই বাহিনীকে মানবাধিকার লঙ্ঘনে ভয়াবহ রেকর্ডের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। বাংলাদেশ সরকার ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বারবার অনুরোধ করলেও ওই কর্মকর্তাদের এবং বাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত অভিযোগগুলো কোনো তদন্ত করেনি। ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তো দূরের কথা। বরং নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ কে সেনাপ্রধান ও বেনজিরকে পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে দীর্ঘদিন বহাল রেখে ওই নিষেধাজ্ঞার প্রতি বারবার বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হলো। এবার বর্তমান আইজিপির অবসর গ্রহণের পর চাকুরীর মেয়াদ বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হলো। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের এই দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক অনেক পুরনো। স্বাধীনতার পর বিশ্ব ব্যাংকের সকল উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সোভিয়েতের পথ ধরে ছিল মুজিব সরকার ও তার অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন। পরিণতিতে ৭৪’র দুর্ভিক্ষ আর অর্থনৈতিক ম্যাসাকার সে সময় অর্থনীতিকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করেছিল। রাশিয়া বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষার জন্য কিছুই করতে পারেনি। এখনকার পরিস্থিতি তো আরো গুরুত্বপূর্ণ।
এখন ৯৫% ডলার নির্ভর আমদানি রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে একদিনও শান্তিপূর্ণভাবে চলা সম্ভব নয়। তাই দিনের পর দিন যুক্তরাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর পরিণতি ইতিহাসের সেই দুঃখজনক অধ্যায়কে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই ধরনের পাংগা দেওয়ার পরিণতি আওয়ামী লীগের জন্য যতখানি বিপদজনক তার চেয়ে অনেক বেশি বিপদজনক ১৮০ মিলিয়ন সাধারণ মানুষের জন্য। যাদের আয় উপার্জন খাদ্য জীবনধারণ অনেক কিছুই নির্ভর করে অর্থনীতি সচল থাকার উপর। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কেউ চায় না । যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে পাঙ্গা দেওয়ার দায়িত্বহীন অপচর্চা থেকে যত দ্রুত শেখ হাসিনা বেরিয়ে আসবেন, ততই বাঙলাদেশের মঙ্গল। অন্যথায় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কিংবা সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিস্থিতির পুরো দায় দায়িত্ব একদিন অবশ্যই তাদের বহন করতে হবে।