সরকার নিষেধাজ্ঞার খবর জানে!
লন্ডন, ৫ ডিসেম্বর: ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আগে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সরকার সেই খবর জানে। তবে বাংলাদেশের কারো বিরুদ্ধে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ন্যায্য হবে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আর কোনো স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা দিবে না। গত রবিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজ দপ্তরে এক সংবাদ সন্মেলনে বলেন, আশা করি বাংলাদেশের ওপর আর কোনো নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করবে না যুক্তরাষ্ট্র। ১০ই ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচিকে ‘পরিকল্পিত’ উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, গত বছরের ওইদিনে মার্কিন প্রশাসন র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। সামনের দিনে বিএনপি’র লবিস্টরা আরও নিষেধাজ্ঞা পাইয়ে দিতে ১০ই ডিসেম্বর সমাবেশ করার পরামর্শ দিয়েছে এবং তারা তা-ই করছে। আমরা মার্কিন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছি। যে তথ্য, যে বিষয়গুলো তারা চেয়েছিলেন, সেগুলো যতটুকু সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করছি। র্যাব ও সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা হওয়ার পর এটা প্রত্যাহার খুব লম্বা প্রক্রিয়া। সেখানে আইনি প্রক্রিয়াটি বলা যেতে পারে একমাত্র পন্থা। তারা কূটনৈতিকভাবেও এটি প্রত্যাহার করতে পারেন। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া করার জন্য যে তথ্য আমাদের দরকার, যেটা পেলে আমরা একটা মামলা করতে পারব। সেটা আমরা সম্প্রতি পেয়েছি।
বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বলার চেষ্টা করেছিল যে, র্যাবের অপারেশনের মধ্য দিয়ে তাদের দলের বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন করা হচ্ছে। এটা একেবারেই মিথ্যা। এর সাথে কোনো পরিসংখ্যান তারা দিতে পারবে না। র্যাবের এই অভিযানগুলোতে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় দেখা হয়নি। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন, সেই তালিকায় সরকার দলীয় মানুষের সংখ্যা বেশি হবে। আমার প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণ করে সেটাই পাই। বিএনপির দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির কোনো নেতা এই তালিকায় পাবেন না। এই তথ্য আমরা মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছি। এর সুফল আমরা পাচ্ছি। নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, অব্যাহত যোগাযোগের অংশ হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রদূদের সঙ্গে গত সপ্তাহে আলোচনা করেছি। এটা রুদ্ধদ্বার বৈঠক ছিলো। এতটুকু বলতে পারি যে, আর কোনো নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ আশা করছে না। এ অবস্থায় মার্কিন প্রশাসনের তরফে নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা নায্য সিদ্ধান্ত হবে না।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকারর লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব এবং এর ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন স্টেট এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে গত এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেন-দরবার করছে বাংলাদেশ সরকার। এ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক হয়েছে সরকারের প্রতিনিধি এবং পেশাদার কূটনীতিকদের। প্রত্যাহার সম্ভব না হলে অন্তত প্রতিষ্ঠান হিসেবে র্যাবের ওপর থেকে তা খানিকটা শিথিল করার অনুরোধ করেছে ঢাকা। কেবল সরকারের প্রতিনিধি বা পেশাদার কূটনীতিকদের চেষ্টাই নয়, দেশব্যাপী ব্যায় সংকোচনের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর হলেও ডলার খরচ করে নিষেধাজ্ঞা তুলতে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এক বছরে তেমন অগ্রগতি হয়নি বরং নতুন করে আরো নিষেধাজ্ঞা আসছে।