নিউজহোম

“লোটাস কামাল কোথায়”-জবাব মিলেনি

।।বিশেষ প্রতিবেদন।।

লন্ডন, ২৮অক্টোবর। দুনিয়াব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে যুক্তরাজ্যে চার মাসে চার অর্থমন্ত্রী, ঢাকায় লোটাস কামাল কোথায়? গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক সুরমা এই প্রশ্ন তোলার পর বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোও এ নিয়ে আলাদা আলাদা সংবাদ প্রকাশ করেছে। একটা সূত্র বলছে, তিনি অর্থমন্ত্রণালয়কে ব্যবহার করে নিজের ব্যবসা বাণিজ্য হাজারগুণ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এখন নিজস্ব ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন! প্রায় আড়াই বছর ধরে অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত অফিস করছেন না, গুরুত্বপূর্ণ অনেক সভায় থাকছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ১০-১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায়ও অর্থমন্ত্রী যাননি। সভায় বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থমন্ত্রীই যোগ দিয়ে থাকেন। অর্থমন্ত্রীর বদলে এতে এবার নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। দেশে এমন ঘটনা এর আগে আর কোনো অর্থমন্ত্রীর আমলে ঘটেনি। অর্থনীতিসংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নেওয়া হচ্ছে। আর এর সঙ্গে জড়িত আছেন দুজন শীর্ষ আমলা। এর সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থনীতিবিদ বা বিশেষজ্ঞদের কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কোনো ধরনের পরামর্শও নেওয়া হচ্ছে না। আরেকটা সূত্র বলছে, চিকিৎসার জন্য বছরের ভালো একটা সময় অর্থমন্ত্রীকে বিদেশের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এ জন্য খরচও হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় একসময় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য অর্থমন্ত্রীর বিদেশ যাওয়ার কথা জানাত। চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে একবার দেড় মাস পর ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এটা ছিল বিজ্ঞপ্তিরই তথ্য। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাসের পর ৬ মাস ১০ দিনের মধ্যে অর্থমন্ত্রী চিকিৎসার উদ্দেশে তিন দেশ মিলিয়ে প্রায় তিন মাসই বিদেশে ছিলেন। তাও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল। এর পর থেকে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তাঁর চিকিৎসা বিষয়ক তথ্য আর জানাচ্ছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য অর্থমন্ত্রী কেন নিস্ক্রিয়, তিনি কেন অফিসে নিয়মিত আসেন না বা গুরুত্বপূর্ণ সভায় অনুপস্থিত থাকেন, তা জানা সম্ভব হয়নি৷ দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। অর্থনীতির প্রায় সব সূচকেই সমস্যা আছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলেছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনা ও নানাভাবে ডলারের অপচয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। অর্থনীতির কঠিন এই সময়ে তাঁর এই নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে নানা ধরনের গুজব ও আলোচনা চলছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, খুবই দুঃখজনক যে অর্থনৈতিক নেতৃত্ব বলতে দেশে কিছু নেই। অর্থনৈতিক নেতৃত্বের প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাঁর একটি অর্থনৈতিক দল অর্থাৎ ইকোনমিক টিম থাকার কথা। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়, আর সেটা করেন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয়৷ আমি সেরকম কিছু দেখছি না৷ দেশের অর্থনীতি যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের টিম লিডারের কাছ থেকে খুব দৃশ্যমান, সক্রিয় ভূমিকা দরকার৷ অন্য যেসব দেশ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেখানে অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ৷ আমাদের দেশে যে যার মত কাজ করছে, কোন সমন্বয় নাই৷ এটা হতে পারে না৷ সমস্যা চিহ্নিত করে একটা কৌশল থাকা উচিত৷ বিদ্যুতের কী সমস্যা আমরা এখনও জানি না৷ আমরা জানি সরকারের টাকা নাই তেল কেনার৷ কিন্তু জ্বালানি সরবরাহ করার জন্য কত লাগবে জানি না৷ আবার তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের লোকেরা জানে না৷ সর্বত্র চরম সমন্বয়হীনতা৷ আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী নিস্ক্রিয় থাকলে কোন কিছুই ঠিক মত হয় না৷ সব কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবে হয়৷ ফলে ফলাফল আশানুরুপ হবে না৷ তিনি প্রশ্ন করেন, এই যে অর্থনীতিতে খারাপ পরিস্থিতি চলছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আমরা কি কিছু পেয়েছি? অর্থনৈতিক নেতৃত্বের এই শূন্যতা কীভাবে, কত দিনে মেটানো হবে? তিনি আরও বলেন, অসুস্থ যে কেউই থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হয় তিনি নিজে অব্যাহতি নেবেন অথবা সরকার তাঁকে অব্যাহতি দেবে। অর্থমন্ত্রীর জন্য দেশ কেন ভুগবে? অর্থমন্ত্রীর ভালো করেই জানা উচিত যে আর্থিক খাত আমলাতন্ত্র দিয়ে চলবে না। তাও যদি বুঝতাম প্রজ্ঞাবান, স্বাধীন চিন্তার অধিকারী ঝানু কোনো আমলা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। তা তো নেই। তা হলে? আমরা বিভ্রান্ত, অর্থমন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রণালয়ের নিষ্ক্রিয়তায় কোন দিকে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। অনেকটা একই সুরে কথা বলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন৷

গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সুরমা খবর প্রকাশ করে মোস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রীকে তার পদত্যাগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে বাজার অর্থনীতি তথা পশ্চিমা নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দেয়া অসম্ভব, হয়তো এই ধারণা থেকেই কামাল পদত্যাগ করেছেন বলে আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর ছিলো। তাই প্রকাশ করা হয়েছিলো। ঢাকা থেকে মি. কামাল অথবা তার দপ্তরের কোনো অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু লন্ডনে হাই কমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) পরিচয়ধারী একজন কর্মকর্তা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষায় ওই খবরকে অসত্য ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছিলেন। গত নয় মাসে অপরিবর্তিত পরিস্থিতি সাপ্তাহিক সুরমার ফেব্রুয়ারী মাসের প্রকাশিত খবরকে নিশ্চিত করেছে।

দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন কামাল

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, পাকা হিসাববিদ কাম “আদম ব্যবসায়ী” (মানব সম্পদ রপ্তানিকারকদের মধ্যে অনিয়ম ও অসৎ তৎপরতায় লিপ্তদের জন্য পাবলিক ডোমেইনে প্রচলিত বিশেষণ, সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য প্রযোজ্য নয়) রিজার্ভ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে টানাপোড়েন, ইএসএফ ফান্ডের নামে নজিরবিহীনভাবে রিজার্ভের ৮বিলিয়ন ডলার সরকার সমর্থিত ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে চুরির দায় এবং ব্যাঙ্কিং ও শেয়ার বাজার কেলেংকারীতে ব্যক্তিগত দায় এড়াতেই মোস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল পদত্যাগ নাটক অথবা সরকারের স্লিপিং পার্টনার (ঘুমন্ত সহযোগী)’র ভূমিকা গ্রহণ করে থাকতে পারেন বলে ঢাকার তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।     

Tags
Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close