নিউজ

খুন ও ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী আনভীর দুবাইতে শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী

পাকিস্তানে একই অপরাধে ধনীর দুলালের ফাঁসীর আদেশ

।। আব্দুর রব ভুট্টো ।।
লণ্ডন, ৮ মার্চ : খুন ও ধর্ষণ মামলার আসামীর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা মিলেছে বাংলাদেশে। বসুন্ধরা গ্রূপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর আরব আমিরাতে প্রধানমন্ত্রীর  সফরসঙ্গী হওয়ার মধ্যদিয়ে এই ইতিহাস রচিত হলো। অথচ ঠিক এমনি একটি ঘটনায় হাই-প্রোফাইল ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় পাকিস্তানে গত সপ্তাহে সে দেশের আদালত শীর্ষ এক ধনীর দুলাল জাফর নূরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে । আর বাংলাদেশে ঘটলো তার বিপরীত ঘটনা। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, উভয় অপরাধের প্রকৃতি একই, প্রধান আসামিদের  আর্থিক অবস্থান অভিন্ন, এমনকি দুটি ঘটনাই একই সময়ে সংগঠিত (জুলাই ২০২১) হয়। কিন্তু আইনের প্রয়োগ সম্পূর্ণ বিপরীত।

ধর্ষণ ও হত্যা  মামলায় পাকিস্তানের আদালত শীর্ষ এক ধনীর দুলালকে মৃত্যুদণ্ড  দিয়েছে

বাংলাদেশে চাঞ্চল্যকর মুনিয়া ধর্ষণ, খুন ও ভ্রূণহত্যার জন্য আনভীরকে প্রধান আসামী করে দায়েরকৃত মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সেই আসামী বিনা জামিনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হলেন। কলেজ ছাত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা বাবার এতিম কন্যা মুনিয়াকে খুন ও ধর্ষণের অপরাধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলার প্রধান আসামী আনভীরকে হাইকোর্ট জামিন দেয়নি। অথচ একই মামলায় অপ্রধান আসামী কয়েকজন জেলে আছেন। রিমাণ্ডে নিয়ে দফায় দফায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। অথচ প্রধান আসামী ও তার পরিবারের অন্যান্য সহযোগী অপরাপর আসামিদের গ্রেফতার দূরে থাক, একবারের জন্যেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। ইতিমধ্যে এই মামলার তদন্ত ও চার্জশীট দেয়ার ক্ষেত্রে টালবাহানার জন্য পুলিশ ইনভেস্টিগেশন বিভাগের কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়েছে। জামিন না নিয়েই তানভীর বেশ কয়েকবার লন্ডন ও দুবাই সফর করেছে।

১৯ জুলাই ২০২১ গুলশানে আনভীরের একটি বাড়িতে থাকা মুনিয়া পরিকল্পিত ওই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বলে হত্যা মামলা বিচারাধীন থাকলেও ঘটনার ৮ মাস পরেও পুলিশ চার্জশীট দেয়নি। বরং চার্জশীট দাখিলের সময় আটবার পেছানো হয়েছে। আইন-আদালত, আটক-জিজ্ঞাসাবাদ-চার্জশীট আর জামিনের তোয়াক্কা না করে কিভাবে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন ও ছিলেন, সেই প্রশ্ন গত কয়েকমাসে জনমনে ঘুরেফিরে আসলেও এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার মধ্য দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট হয়েছে।  

বাংলাদেশে বিভিন্ন ইস্যুতে পাকিস্তানের সমালোচনা সাধারণ বিষয়। কিন্তু সেই পাকিস্তানেই একই ধরণের খুন ও ধর্ষণ মামলার একজন আসামী সেদেশের অন্যতম শীর্ষধনী পরিবারের সন্তান  জহির জাফরকে আদালত গত সপ্তাহে নূর মুকাদম নাম এক তরুণীকে নির্যাতন ও খুনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন । ইসলামাবাদের আদালত নূর মুকাদমকে ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধে টাইকুনের ছেলেকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। একজন প্রাক্তন পাকিস্তানি কূটনীতিকের মেয়ে মুকাদম(২৭) গত বছরের জুলাই মাসে একটি প্রভাবশালী শিল্পপতি পরিবারের সন্তান জহির জাফর কর্তৃক বন্দী, নির্যাতন ও শিরশ্ছেদের শিকার হন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাফর (৩০), একজন পাকিস্তানি-আমেরিকান নাগরিক। মুকাদমের বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরে জাফর তার উপর হামলা করেছিল।

উল্লেখ্য, আনভীর সোবহান এর আগে প্রধানমন্ত্রীর ভাইদের নামে প্রতিষ্ঠিত শেখ রাসেল ক্লাব ও শেখ জামাল ক্লাবের দায়িত্ব অনেক উচ্চমূল্যে বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বসুন্ধরা গ্রূপের কোনো জুয়েলারি ব্যবসা না থাকলেও বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সভাপতির পদটিও তিনি বাগিয়ে নিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে গোল্ড রিফাইনারি করার একটি কল্পিত প্রকল্প উদ্যোগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন বিদ্যমান।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close