মুক্তচিন্তা

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র লুৎফুর রহমানের কাছে খোলা চিঠি

|| হাসনাত আরিয়ান খান ||
লেখক: গবেষক ।। এডিটর ইন চীফ, দ্যা গ্রেইট বেঙ্গল টুডে ।। আহবায়ক, অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন

— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করুন
— সকল কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করুন
— চাটুকার থেকে দুরে থাকুন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জন করুন
— কোথাও মিস ম্যানেজমেন্ট না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন
— মেধাবী ও বিচক্ষণ ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনুন, নিজের বিকল্প তৈরী করুন
— সকল কমিউনিটির, সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষের দিকে সমান দৃষ্টি দিন
— ভবিষ্যত প্রজন্মের ভবিষ্যত যেনো নষ্ট না হয়, সেটি মাথায় রেখে পদক্ষেপ নিন
— দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে সৎ, যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের লোকদের নিয়োগ দিন

সম্মানিত মেয়র,
আসসালামু আলাইকুম। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ইলেকশন প্রেডিকশন বা নির্বাচনের পূর্বাভাস/ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন। আপনাকে সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অতি উৎসাহী কেউ কেউ অভিনন্দনের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। সমাজে এমন লোকই বেশী, যারা ক্ষমতাসীন বা বিজয়ীদের সাথে থাকতে ভালবাসেন, ভাব জমানোর চেষ্টা করেন। কাজেই এমন লোকদের অভিনন্দনের জোয়ারে আপনি যেনো অতীতের মতো ভেসে না যান, এজন্যই একজন শুভাকাঙ্খী হিসেবে আপনার কাছে আমার এই খোলা চিঠি লেখা। ভুল হলে বা আমার কোন কথায় কষ্ট পেলে আশাকরি আপনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

কমিউনিটির ছোট বড় অনেক সংগঠন আপনাকে সংবর্ধনা দেয়ার কথা ভাবছেন। আপনি পারলে এগুলো সম্পূর্ণ এভয়েড করবেন। আমি মনে করি, সংবর্ধনা দেওয়ার বা নেওয়ার সময় এটা নয়। মেয়র হিসেবে এখন আপনার কাজের সময়। এখন আপনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সময়। যে প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ আপনাকে ভোট দিয়েছেন, মানুষের সেই প্রত্যাশা এখন পূরণের সময়। নির্বাচনের আগে আপনি ১। তিন—চার বেডরুম অগ্রাধিকারে নূন্যতম চার হাজার ঘর তৈরী ২। চার বছরের জন্য কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ ৩। কমিউনিটি ল্যাংগুয়েজ সার্ভিস চালু ৪। লাইব্রেরি সার্ভিস সমৃদ্ধ করা ৫। মহিলাদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার করা ৬। মেয়র সার্জারি নিয়মিত করা ৭। হোমলেসনেস ফান্ড চালু ৮। বারা ভিত্তিক মেয়র কাপ টুর্নামেন্ট ৯। ইয়াং পিপুল সাপোর্ট ফাণ্ড ১০। ঐতিহ্যবাহী মার্কেটসমূহ রক্ষা করা ১১। রাস্তাগুলোকে খোলা রাখার ব্যবস্থা করা ১২। চাকুরি ক্ষেত্রে সমতা আনা ১৩। বৃক্ষরোপন বৃদ্ধি ১৪। ক্লাইমেট চেন্জ নিয়ে মেয়রের এডভাইজারি কমিটি গঠন ১৫। এন্টি সোস্যাল বিহেভিয়ার ও হেইট ক্রাইম কমানো ১৬। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও বিন কালেকশন বৃদ্ধি করা ১৭। কার ফ্রি জোন পলিসি রিভিউ ও এক হাজার কার পার্কিং তৈরি করা ১৮। ফ্রি হোম কেয়ার ১৯। ওয়ানস্টপ সার্ভিস ২০। এডুকেশন মেইনটেনেন্স অ্যালাউন্স ২১। ফ্রি স্কুল মিল ২২। জিসিএসইতে বুস্টার ক্লাস ২৩। ইউনির্ভাসিটি গ্রান্ট চালু ২৪। জিপি সার্জারি বৃদ্ধি ২৫। পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ডকল্যাণ্ডে বন্ধ হওয়া পুলিশ স্টেশন চালু ২৬। টাওয়ার হ্যামলেটস হোমসকে কাউন্সিলে ফিরিয়ে আনার জন্য কনসালটেশন করা ২৭। ক্ল্যাডিং সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোর জন্য জরুরি তহবিল গঠন ২৮। জেনারেল হেলথ এওয়ার্নেস বাড়ানো ২৯। ড্রাগ ডিলার গ্রেফতার ও ড্রাগ ট্রিটম্যান্টের বিশেষ সুবিধা চালু ৩০। চাকুরি ও ট্রেইনিং এবং এপ্রেনটিশিপ সুযোগ বৃদ্ধি করাসহ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে ৮টি বুলেট পয়েন্টে সেরা ৩০টি পরিকল্পনা নিয়ে আপনার ভোটারদের প্রায় ১২০টি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৬ পৃষ্ঠার একটি ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করেছেন। ভোটার’রা আপনার এই ম্যানিফেস্টো দেখেই আপনাকে ও আপনার দলকে ভোট দিয়েছেন। আপনি যদি নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সফল হন, মানুষ আপনাকে আবার ভোট দিবেন, আবার আপনাকে দায়িত্ব দিবেন, আবার তারা আপনাকে মাথায় তুলে নিবেন। আর যদি ব্যর্থ হন, মানুষ আপনাকে চিরদিনের জন্য ছুড়ে ফেলে দিবেন। আপনার হাতে মাত্র চার বছর সময়। চার বছর সময় কিন্তু কাজের জন্য খুব বেশি সময় না। সাবেক মেয়র জন বিগস নির্বাচনে পরাজিত হবার পর নিজেও স্বীকার করেছেন যে, আপনি তাঁর চাইতে ভালো পরিকল্পনা দিয়েছেন, ভালো ইশতেহার দিয়েছেন, এজন্যই আপনি জিতেছেন। জন বিগস বলেছেন, ‘লুৎফুর রহমান যদি এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাহলে দারুণ। আমি এদিকে চোখ রাখবো‘। অন্যদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভালো ইশতেহারের পাশাপাশি আপনি আগের মেয়াদে এমন কিছু ভালো কাজ করেছেন, যার প্রতিদান আপনি ব্যালট বাক্স এ পেয়েছেন। কাজেই ইশতেহারে উল্লেখিত কাজগুলো সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পারলে এবং এমন আরো ভালো ভালো কাজ করতে পারলে আগামীতে মানুষ আপনার ব্যালট বাক্সে যে ভালোবাসা দিবে, সেই ভালোবাসায় আপনার সামনের দিনগুলোতে চলার পথের পাথেয় হবে। সেটাই আপনার জন্য সত্যিকারের সংবর্ধনা হবে।

আগামী ৪ বছর আপনার টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ওপর সকল মানুষের চোখ থাকবে। আপনার সকল কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারলেন বাজপাখির মতো তা দেখা হবে। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে আপনার দোষ খোজা হবে। আর তাই সকল কাজে আপনাকে খুবই সাবধান থাকতে হবে, খুবই সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে চাটুকার থেকে আপনাকে দুরে থাকতে হবে। আপনি বলেছেন, আপনি হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার এবং নব উদ্যোমে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছেন। তাই যদি হয় তাহলে নির্বাচনী ইশতেহারের বাইরেও জনকল্যাণে নতুন নতুন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিবেন এবং বাস্তবায়নে নিষ্ঠার সাথে কাজ করবেন। যে কাজ আপনার একার পক্ষে করা সম্ভব হবে না, সেই কাজ করার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের যোগ্য স্থানে যোগ্য মর্যাদা দিয়ে রাখবেন। নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সৎ, যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের লোকদের নিয়োগ দিবেন। যার ওপর যেই দায়িত্ব দিবেন সে তাঁর ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব সততা এবং নিষ্ঠার সাথে অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে কিনা সব সময় তা খেয়াল রাখবেন। আর হ্যাঁ, আপনার কথা ও কাজের সময় মনে রাখবেন, আপনি কোন বিশেষ গোত্রের মানুষের মেয়র নন, বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের মেয়র নন, বিশেষ ধর্মাবলম্বী মানুষের মেয়র নন। আপনি বাঙালি, অবাঙালি, সাদা-কালো, বিলিভার— নন বিলিভার, সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষের মেয়র। যে আপনাকে ভোট দিয়েছে আপনি তাঁর মেয়র, যে আপনাকে ভোট দেয়নি আপনি তাঁরও মেয়র। এমনকি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের অভুক্ত যে কুকুরটা খাবারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে, আপনি তারও মেয়র। আপনি সকল কমিউনিটির, সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষের দিকে সমান দৃষ্টি দিবেন। যার যা প্রয়োজন, আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন। একটি মাল্টিকালচারাল ডাইভার্স বারার মেয়র হিসেবে আপনার ডানে বাঁয়ে সামনে পেছনে সব সময় যেনো কেবল একটি নির্দিষ্ট এথনিক সম্প্রদায়ের মানুষই না থাকে, খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ আপনাকে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মত সুন্দর একটি মাল্টিকালচারাল ডাইভার্স বারাকে নতুন করে গড়ে তুলবার সুযোগ দিয়েছেন, এত নেতিবাচক প্রচার প্রচারণার পরেও এই বারার মানুষ পুনরায় আপনার ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছেন, তাদের ভবিষ্যতকে সুন্দর ও নিরাপদ করতে আপনার ওপর পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আশাকরি, আপনি তাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করবেন না। আপনি আপনার জীবন দিয়ে হলেও আপনার ওপর মানুষের এই আস্থা ও বিশ্বাসের মূল্য দিবেন। টাওয়ার হ্যামলেটস কেন্দ্রিক রাজনীতির বড় একটা অংশ এখন অযোগ্য ও চাটুকারদের হাতে চলে গেছে। আপনি এই চাটুকারদের সব সময় এড়িয়ে চলবেন। হযরত ওমর (রা.) একদিন উত্তপ্ত মাটির উপর দাঁড়িয়ে সদকার উটের গায়ে তেল মাখাচ্ছিলেন। এক ব্যক্তি এসে বললেন— আমিরুল মুমিনীন, এ কাজটি যদি কোনো গোলাম দ্বারা করাতেন! ওমর (রা:) বললেন— ‘আমার চেয়ে বড় গোলাম আর কে আছে! যিনি মানুষের শাসক, তিনিই তাদের গোলাম’।

প্রিয় লুৎফুর রহমান, আপনি যদি আরো বড় জায়গায় যেতে চান, আরো বড় পরিসরে কাজ করতে চান, কমিউনিটির মানুষের জন্য আরও বড় ভূমিকা রাখতে চান তাহলে আপনাকে মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে যেতে হবে। আর যদি শুধুই টাওয়ার হ্যামলেটস কেন্দ্রিক রাজনীতি করতে চান তাহলে আপনাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি করতে হবে। আপনার দলে টাওয়ার হ্যামলেটসের সকল সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সৎ, যোগ্য ও বিচক্ষণ ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনতে হবে। আপনার বিকল্প আপনাকেই তৈরী করতে হবে। আপনার বা আপনার দলের অদূরদর্শিতার কারণে কমিউনিটির মানুষের ভাবমূর্তি যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ভবিষ্যত যেনো নষ্ট না হয়, সেটি মাথায় রেখে আপনাকে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভাজনের যে বীজটি টাওয়ার হ্যামলেটস এ মর্মান্তিকভাবে প্রোথিত রয়েছে, নির্বাচনোত্তর বাস্তবতায় সেটি যেনো গাছ হয়ে বেড়ে না উঠে, সেদিকেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনীতিতে আবেগের কোন জায়গা নেই। একজন সত্যিকারের নেতা আঘাত নিয়ে ভাববে না। তাঁর ভুলের জন্য কেউ যদি তাকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত দিয়েও থাকে তবুও সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে না। তাঁর ভুলের কারণে কেউ যদি তাকে কোনো কটু কথা বা নেতিবাচক কথা বলে, এর কারণে সে হতাশ হবে না। তাঁর মরালিটি কোন অবস্থাতেই ডাউন করবে না। একজন নেতা মানুষকে উৎসাহ দিবে, উদ্দীপনা দিবে, ইন্সপায়ার করবে। একজন সত্যিকারের নেতা নিজের কাছে সৎ থাকবে এবং পরবর্তীতে যাতে একই ভুল না হয় সেই ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবে। অতীতের ভুল থেকে নিজেকে উত্তরণের যথাসাধ্য চেষ্টা করবে এবং এটিই হবে তাঁর সফলতা। কাজেই রাজনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আপনাকে সব সময়ই যথাসম্ভব নির্মোহ ও নৈর্ব্যক্তিক থাকতে হবে। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র, সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্মান এই ৫টি মৌলিক ব্রিটিশ মূল্যবোধের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা থাকতে হবে। পক্ষের ও বিপক্ষের সকল মানুষকে সমানভাবে ভালোবাসতে হবে। জনগণের স্বার্থে যখন যা বলা দরকার নির্ভয়ে তা বলতে হবে। সর্বোপরি রাজনীতিতে টিকে থাকতে চাইলে আপনার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কমিটমেন্ট থাকতে হবে।

মেয়র হিসেবে অতীতে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো যে, ‘মেয়র থাকা অবস্থায় কাউন্সিল মিটিংয়ে আপনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতেন না। আপনার অধীনে গোপন প্রশাসন পরিচালিত হতো। যখনই কোনো ভুল হয়েছে আপনি অন্য কারো ওপর দোষ চাপিয়েছেন। আপনি নিজেকে ভূক্তভোগী এবং অন্যকে বিপদে ফেলার অনৈতিক রাজনীতি করেছেন। ভলান্টারি এবং কমিউনিটি সেক্টরগুলোকে এলোমেলো করে দিয়েছেন। আবেদনই করেননি এমন অনেক সংগঠনকে আপনি গ্র্যান্ট দিয়েছেন! আপনি প্রথাবদ্ধ প্রতিশ্রুতির মুলা ঝুলিয়ে ভোটে জিতেছেন। মেয়র হিসেবে আপনি কাউন্সিলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ ও নৈরাজ্যে সৃষ্টি করেছেন‘। সদ্য বিদায়ী মেয়র জন বিগসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিলো যে, ‘তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের বাজেট প্রণয়নে গণতান্ত্রিক চর্চা উপেক্ষা করেছেন। কাউন্সিলারদের মতামতকে আমল না দিয়ে তিনি বাজেট প্রণয়ন করেছেন। নিজ দলীয় ১২ জন কাউন্সিলর মেয়র জন বিগসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন। কাউন্সিল পরিচালনায় মেয়র বিগসের এমন কর্তৃত্ববাদী সিদ্ধান্তের বিষয়ে কাউন্সিলাররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন’। আশাকরি এই বিষয়গুলো আপনি এবার বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন এবং এই মেয়াদে আপনার বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ না ওঠে, এই ব্যাপারে আপনি অনেক বেশি সতর্ক থাকবেন।

আপনি কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বে না গিয়ে নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বাঙালি, অবাঙালি, সাদা-কালো সকল কমিউনিটির মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘আমাকে ও আমার দলকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি সকল কমিউনিটির মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি সকল কমিউনিটির প্রত্যেক মানুষকে সেবা দিতে চাই ‘। অর্থাৎ অতীতে আপনাকে ও আপনার দলকে নিয়ে সব ধরনের সমালোচনা, বিচারিক পর্যবেক্ষণ কিংবা গণমাধ্যমের রিপোর্টকে ঢালাওভাবে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দেবার কৌশল না নিয়ে আপনি আপনাকে ও আপনার দলকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার জন্য সকল কমিউনিটির মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আদালতের রায়ের প্রতি আপনি শ্রদ্ধাশীল থেকেছেন এবং সকল কমিউনিটির প্রত্যেক মানুষকে সেবা দিতে নতুন করে প্রতিজ্ঞা করেছেন। আপনার বক্তব্য আমাদের কাছে খুবই ভালো লেগেছে। চলার পথে একজন মানুষের ভুল হতেই পারে। তবে সেই ভুল যতটা না ছিলো আপনার তার চেয়ে অনেক বেশী ছিলো আপনার সহকর্মীদের, আপনার শিষ্যদের। আদালতে যতগুলো অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে, প্রমাণ হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই আপনার সেই শিষ্যদের নানা অবৈধ সুযোগ নেয়ার অভিযোগ। এছাড়া ব্যক্তিগত ইগো, আঞ্চলিকতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির মিশেলে এমন কিছু কাজ হয়েছে যার দায়ভার সরাসরি আপনার উপরেই পড়েছে। আশাকরি, আপনি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিবেন। ইতিবাচক স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন এবং টাওয়ার হ্যামলেটস মাল্টিকালচারাল ডাইভার্স বারাকে একটি আদর্শ বারা হিসেবে গড়ে তুলবেন। সেই সাথে কথা নয় কাজের মাধ্যমে আপনি আপনার নিজের এবং কমিউনিটির মানুষের মুখ উজ্জ্বল করবেন। আর তা করতে পারলে আজকে যিনি আপনার চরম শত্রু, কাল তিনিও আপনার পরম বন্ধু হয়ে যাবেন।

আমি বরাবরই আশাবাদী একজন মানুষ। আপনাকে নিয়ে অন্যদের মত আমিও নতুন করে আশাবাদী হতে চাই। আপনি সফল হবেন এই প্রত্যয়েই থাকতে চাই। জনবান্ধব একজন মেয়র হিসেবে আমরা আপনাকে দেখতে চাই। জনবান্ধব মেয়রের বড় গুণ হচ্ছে, গণমানুষের দু:খ কষ্ট বুঝা ও যথা সম্ভব তাদের সমস্যা উত্তরণে কাজ করা এবং সব সময় তাদের সাহায্যে পাশে থাকা। ওয়ার্ক ইন পার্টনারশীপের মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনদূর্ভোগের বিষয়গুলো সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধিদের সবার সাথে এক যোগে কাজ করা। আমি বিশ্বাস করতে চাই, জনদূর্ভোগ লাঘবে আপনি ও আপনার প্রশাসন অন্যান্য পার্টনারদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করবেন। বারার বাসিন্দাদের ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য বিভিন্ন পাবলিক সার্ভিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভলান্টারি এবং কমিউনিটি সেক্টরগুলোকে একসূত্রে গাঁথবেন। সময়ের চাকাকে পিছনে ঘুরতে না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমাদের সবার প্রিয় টাওয়ার হ্যামলেটস যেনো আবারো খারাপ কোন খবরের জন্য সংবাদ শিরোনাম না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
দোয়াকরি, আল্লাহপাক আপনাকে ভালো রাখুন, সুন্দর রাখুন। মেয়র হিসেবে আপনি সফল ও স্বার্থক হোন। আপনার স্বপ্ন পূরণে ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আল্লাহপাক আপনার সহায় হোন। আমীন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close