|| সুরমা প্রতিবেদন ||
লণ্ডন, ২০ মে : নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৃটেনের মুদ্রাস্ফীতি এপ্রিল থেকে ১২ মাসে ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এতে করে বৃটেন আরেকটি রিসেশন বা মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) বুধবার সকালে তাদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখানো হয়েছে, যে সবকিছুর দাম ৪০ বছরের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে। বৃটেনের মুদ্রাস্ফীতি ইতিমধ্যে মার্চ মাসে সাত শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
১৯৮২ সাল থেকে ইউকেতে মুদ্রাস্ফীতির হার নয় শতাংশে পৌঁছায়নি, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্য ও পরিষেবার দাম বেড়েছে, এবং বৃটেনের পরিবারগুলোর জন্য এনার্জি ক্যাপ ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছে। এটি দেখেছে সারা দেশে শত শত পাউণ্ড এনার্জি বিল যোগ হয়েছে।
ওএনএস বলেছে, পরিবহন ও যন্ত্রপাতির ক্রমবর্ধমান খরচ, সেইসাথে শক্তি, দামকে উচ্চতর করেছে।
ব্যাংক অফ ইংল্যাণ্ড পূর্বাভাস দিয়েছে যে বছরের শেষের দিকে মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণ অঙ্কে পৌঁছতে পারে। এই পরিসংখ্যানগুলিই আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে যে বৃটেন মন্দার দিকে যেতে পারে।
করোনা মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালের প্রথম দুই প্রান্তিকে বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল। সেখান থেকে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় আবারও মন্দার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, কিন্তু প্রথম প্রান্তিকের শেষ অর্থাৎ মার্চ মাসে সে দেশের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস বলেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সে দেশের মানুষ দৈনন্দিন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ ভ্রমণও কমিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা একদম প্রয়োজনীয় নয়, এমন সব ব্যয়ও কমিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তারা আবার মন্দার আশঙ্কা করছে। সংজ্ঞা অনুসারে, পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা বলা হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যে কোভিড বিধিনিষেধ উঠে যায়। তখন দেশটির পর্যটন ও যোগাযোগ খাত ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মাসের শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে পরিস্থিতি বদলে যায়। বলা যায়, এই যুদ্ধ বৃটেনের বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দেয়।
বৃটেনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ পল ডেইলস বিবিসিকে বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায়, মূল্যস্ফীতির সংকট শুরু হওয়ার আগে অর্থনীতিতে যে গতি এসেছে বলে ভাবা হয়েছিল, সেই গতি আদতে আসেনি।?’ তিনি মনে করেন, নতুন আরেক মন্দার পর্ব শুরু হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি পূর্ণাঙ্গ মন্দার কবলে পড়তে পারে।