নিউজ
Trending

হাসিনার সর্বশেষ খায়েশ: ড. ইউনূসকে দুই চুবানি দিয়ে পদ্মা সেতুতে তোলা, আর খালেদাকে টুস করে নদীতে ফেলা

।। আরিক শামস ।।

বাংলাদেশের নৈশভোটের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা মিয়া তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ন্যক্কারজনক ভাষায় ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন‌। গত বুধবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় সেতু প্রসঙ্গে বক্তৃতাকালে হাসিনা এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামেরও অযাচিত সমালোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী পদের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে সম্মানিত নাগরিকদের একজন ও দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ীকে আক্রমণ করেই তিনি থেমে যাননি, বরং আরেকটু এগিয়ে খালেদা জিয়া সম্পর্কে হাসিনা মিয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে। সেতুতে যে স্প্যানগুলো বসাচ্ছে, এগুলো তার কাছে ছিল জোড়াতালি দেওয়া। বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ভেঙে পড়বে। আবার তার সঙ্গে কিছু দোসরেরাও…তাদেরকে এখন কী করা উচিত?

শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন করে হাসিনা নিজেই সেই প্রশ্নের জবাব দেন। “পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে খালেদা জিয়াকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত।’

১৯৮১ সালের ১৭ মে ভারতের আশ্রিত জীবন থেকে বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে দেশে ফেরার ঘটনাটিকে হাসিনার অনুসারীরা প্রতিবছর ঘটা করে পালন করে থাকে। কারণ হাসিনার প্রত্যাবর্তন এর মাত্র তেরো দিন পরেই তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ তৎকালীন জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রাণনাশ করা সম্ভব হয়েছিল। যা ছিল আওয়ামী লীগ ও তার অনুসারীদের জন্য বিশাল স্বস্তির বিষয়। গত মঙ্গলবার ছিল হাসিনার তথাকথিত ৪২তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। সে উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটি। এতে জনবিচ্ছিন্ন প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হন । তাঁর বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রচার করেছে।

উল্লেখ্য মাত্র একদিন আগে দেশমান্য ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী একটি জাতীয় সরকারের রূপরেখা দেন যাতে তিনি ডঃ ইউনুসকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব রাখেন। এই বিষয়টি সম্ভবত হাসিনাকে ভীষণ ক্ষুব্ধ করে থাকবে।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূস প্রসঙ্গে হাসিনা মিয়া বলেন, ‘তাঁকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে। উপদেষ্টা হিসেবে থাকা আরও উচ্চ মানের। তাকে এমডি পদেই নাকি থাকতে হবে। সেটা সে ছাড়বে না। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।’ বিষয়টি নিয়ে ইউনূস মামলা করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো ১০ বছর কমিয়ে দিতে পারবে না। কারণ, গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি পদে থাকতে পারবে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। বয়সটা কমাবে কীভাবে? সে মামলায় হেরে যায়। কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় আমার বিরুদ্ধে।’

হাসিনার মতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের জন্য দায়ী মূল ব্যক্তিটি হলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাই ক্ষোভগুলো হাসিনা যোগ করেন, ‘একটি এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো সেতুর টাকা বন্ধ করেছে, তাকে পদ্মা নদীতে দুইটা চুবানি দিয়ে তোলা উচিত। মরে যাতে না যায়, পদ্মা নদীতে একটু চুবানি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে যদি শিক্ষা হয়। পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটি এমডি পদে তাকে থাকতে হবে।’
হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা শুনেছি, সে (ইউনূস) আর মাহ্‌ফুজ আনাম আমেরিকায় যায়। স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারি ক্লিনটনকে ই–মেইল করে। মি. জোয়েলিক সে সময় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর শেষ কর্মদিবসে, কোনো বোর্ডসভায় নয়, পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেন।’

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের ফলে তার নাকি শাপেবর হয়েছে বলে মন্তব্য করেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে, সেটা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি। কিন্তু আমাদের এখানে একজন জ্ঞানী লোক বলে ফেললেন, পদ্মা সেতুতে যে রেললাইন হচ্ছে, তাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, তা তো ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। এ ঋণ কীভাবে শোধ হবে?’

অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় বড় অর্থনীতিবিদ, ‘জ্ঞানী-গুণী এই ধরনের অর্বাচীনের মতো কথা বলেন কীভাবে? মেগা প্রজেক্টগুলো করে নাকি খুব ভুল করছি। তারা আয়েশে বসে থাকে আর আমার তৈরি করা সব টেলিভিশনে গিয়ে কথা বলে।’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সমালোচনা হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এত টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট করে কী হবে—এ প্রশ্নও কিন্তু তুলেছে তারা। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করলে তাদের গায়ে লাগে।

হাসিনা ওয়াজেদ এর পর পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন। তার মতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নাকি কথা বলার অধিকার নেই। তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু তাদের নির্বাচনের ইতিহাস এতটা কলুষিত যে তাদের এ নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকারই নাই। কোন মুখে তারা বলে?’

বিএনপি সরকারের আমলে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, ‘ফালু ইলেকশন করেছিল যে ইলেকশনের চিত্র সবার নিশ্চয়ই মনে আছে। মাগুরা ইলেকশন হয়—যে ইলেকশন নিয়েই আন্দোলন করে আমরা খালেদা জিয়াকে উৎখাত করেছি। মিরপুর ইলেকশন, প্রত্যেকটা নির্বাচনের চিত্রই আমরা দেখেছি।’ এরপর হাসিনা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ’৭৭ সালের হ্যাঁ-না গণভোট, ’৭৮ এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ’৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচন, এবং তার পরে বিএনপি সরকারের আমলে করা ১৯৮১ এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথাও উল্লেখ করেন। হাসিনা মিয়া নির্লজ্জের মত দাবি করেন যে, বর্তমানে নির্বাচনব্যবস্থার যে উন্নয়ন হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ও চিন্তাচেতনার বাস্তবায়ন। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ইভিএম ব্যবস্থা বলবৎ করে আওয়ামী লীগই।

উল্লেখ্য গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর ভিতর প্রচন্ড অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর পক্ষ থেকে আরোপ করা রেবের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা হাসিনার অবৈধ সরকারের তাবেদারী করতে কিছুটা অনীহা প্রকাশ করা শুরু করেছে, যার প্রভাব অন্য সকল ক্ষেত্রেও গিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে মাত্র কিছুদিনের মধ্যে ডলারের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে হাসিনার মেয়ে জামাই মসরুর দুবাইতে একটি বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির শিকার হয়ে বিচারের সম্মুখীন আছে বলে নানা সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বাংলাদেশে দিল্লির চাওয়া পাওয়ার উল্লম্ফন এতটাই বেশি বেড়ে গেছে যে হাসিনা তাদেরকে আর সন্তুষ্ট রাখতে পারছে না।

দিল্লির সাউথ ব্লক এর কর্মকর্তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির সাথে লন্ডনে বৈঠক করেছে বলেও সরকারের কাছে খবর গেছে, যা সবার ভেতরে এক আতঙ্ক তৈরি করেছে। সর্বশেষ শ্রীলংকা পরিস্থিতি বিশেষ করে এমপি ও মন্ত্রীদের কে যেভাবে জনগণ রাস্তাঘাটে গণ ধোলাই দিচ্ছে সেটা জেনে শাসক মহল বিশেষ করে আমলা গোষ্ঠীর মধ্যে দেশ ত্যাগের হিড়িক দেখা গেছে। এটি বন্ধ করার জন্য সরকার সম্প্রতি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের উপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরইমধ্যে দেশমান্য ডাক্তার জাফরুল্লাহ লন্ডন সফর করে দেশে ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় সরকারের রূপরেখা, বিশেষ করে কে কোন দায়িত্বে থাকবেন সেটা প্রচার করার ফলে সরকারি প্রশাসনযন্ত্রের মধ্যে এক ধরনের ভূকম্পন ও অস্থিরতা শুরু হয়েছে যার উত্তাপ শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।

এসব ক্ষেত্রে যা হয় , অনির্বাচিত স্বৈরশাসকেরা তাদের প্রধান ও সম্ভব্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের অনৈতিক ও নোংরা ভাষায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করা শুরু করে দেয়। হাসিনা মিয়া ড. ইউনুস ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় আক্রমণ করে ফের প্রমাণ করে দিলেন যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের বিচারপতিরা নব্বই দশকের শেষের দিকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ‘রং হেডেড উওমেন'( মাথা খারাপ মহিলা) বলে যে রায় দিয়েছিলেন সেটা সঠিক ছিল। ড. ইউনুসকে দুই চুবানি দিয়ে পদ্মা সেতুতে তোলা আর খালেদা জিয়াকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়ার বাসনা প্রকাশের মাধ্যমে হাসিনা মিয়া তার অন্তরের কদর্যতাই শুধু প্রকাশ করেননি বরং সভ্যতা ভব্যতাহীন এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি বঞ্চিত একটি রাজনৈতিক পরিবারের প্রকৃত দৈন্য চেহারাটাই জাতির সামনে উন্মোচিত করে দিয়েছেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close