নিউজ

৫০তম বার্ষিকীতে পা রাখলো বাংলাদেশ: ‘ভারতীয় বিজয়’ বললেন মোদী, বাংলাদেশ নির্লিপ্ত

ভিন্নরকম বিজয় উদযাপন
স্মৃতিসৌধে যানিন রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী
শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ভিড়

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১৮ ডিসেম্বর – বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকীতে পদার্পন করলো বাংলাদেশ। বিজয়ের ঐতিহাসিক দিন ১৬ ডিসেম্বর এলে পুরো দেশ মাতে মহোৎসবে। এবারও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। এদিন শ্রদ্ধার সাথে বিজয় ছিনিয়ে আনা বীর সেনানীদের স্মরণ করে পুরো বাঙালি জাতি। তবে এবারের উৎসব উদযাপনে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। বলা যায়, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক-সামাজিক অসন্তোষ ও দুর্বৃত্তায়নে মধ্যদিয়েই উদযাপিত হলো ভিন্নতর বিজয় উৎসব। স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষের ঢল নামলেও এবার সেখানে যাননি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তাদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাদের প্রতিনিধিরা। করোনা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অরাজক পরিস্থিতির জন্যই এধরনের বিজয় উদযাপন বলে মনে করছেন অনেকে।

মোদীর ফেইসবুক স্টেটাস

দীর্ঘ ৫০ বছর পরও সার্বজনীন বিজয় উদযাপন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সরকার। এতোদিন পর যেখানে সবধরণের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্তার প্লাটফরমে বিজয় উদযাপনের কথা সেখানে ক্রমশই বাড়ছে বিভেদ ও বিভক্তি। আর এই বিভেদ-অনৈক্য সৃষ্টি করছে খোদ দেশের বর্তমান সরকার। লক্ষ প্রাণ ও সম্ভ্রমের বিনিমেয় অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মানুষকে আজও গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য অহর্নিশ লড়াই করতে হচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পর কী পেলো বাংলাদেশ? মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল সরকারে থাকা অবস্থায়ই বাংলাদেশের গণতন্ত্র অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন, খুন, গুম ও ধর্ষণের ভয়াবহ বিস্তারের মধ্যে বিজয়ের ৫০তম বর্ষে পা রাখা বাংলাদেশের ভবিষ্যত কী Ñ সেই সংশয় এখন দেশে-বিদেশে থাকা প্রতিটি বাংলাদেশীকে যখন ভাবিত করছে ঠিক তখন স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তাকারী ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারতের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ আরো বেশী শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনকে নিজেদের কৃতিত্ব বলে আসছেন ভারতের রাজনীতিকরা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ভারতের বর্তমান মৌলবাদী বিজেপি সরকারের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি তাঁর টুইটবার্তায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের বিজয়কে ‘ভারতের বিজয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করে আবারও বিতর্ক উসকে দিয়েছেন। শুধু মোদিই নয়, একই রকম টুইট বার্তা করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতাও। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে এর কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। তবে সামাজিক মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ আর দোর্দ- প্রতাপে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। বাংলাদেশের এই বিজয়ে সহযোগিতা করেছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে তাদেরও অনেক সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু তাই বলে এটিকে শুধু ভারতীয়দের লড়াই বা একমাত্র তাদের কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এমনটা বলার সুযোগ নেই। অথচ অনেক ভারতীয়র চোখে এখনও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ মাত্র।
১৬ ডিসেম্বর, বুধবার বাংলাদেশের বিজয় দিবসে সেই বিতর্ক আবারও উসকে দিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক টুইটে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়কে শুধু ভারতের বিজয় উল্লেখ করেছেন তিনি।

১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্ত হয়ে জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। এ উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর ‘বিজয় দিবস’ উদযাপিত হয় বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশেই। বাংলাদেশের মতো এদিন ভারতেও শ্রদ্ধা জানানো হয় যুদ্ধে নিহত শহীদদের।
বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার দিল্লির স্বর্ণিম বিজয় মশালে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি এক টুইটে তিনি বলেছেন, বিজয় দিবসে আমরা সশস্ত্র বাহিনীর অবিচল সাহসকে স্মরণ করছি, যা একাত্তরের যুদ্ধে আমাদের জাতির জন্য একটি চূড়ান্ত বিজয় এনে দিয়েছিল। এই বিশেষ বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভে ‘স্বর্ণিম বিজয় মশাল’ জ্বালানোর সম্মান পেলাম।

টুইটে একবারও বাংলাদেশ বা বাংলাদেশী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা উল্লেখ করেনি নরেন্দ্র মোদি। এ নিয়ে কষ্ট পেয়েছেন অনেক বাংলাদেশী। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা উল্লেখ না করে শুধু ভারতীয় সেনাদের সম্মান জানানোয় তীব্র ভাষায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
প্রধানমন্ত্রী মোদির মতো ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিরক্ষামন্ত্রীও বাংলাদেশের কথা উল্লেখ না করে বিজয় দিবস নিয়ে টুইট করেছেন।

ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইটারে বলেছেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারতীয় সেনাবাহিনী অদম্য সাহস এবং বীরত্বের সঙ্গে মানবাধিকারের সার্বজনীন মূল্যবোধ রক্ষা করে। এদিনই বিশ্ব মানচিত্রে একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটায় ভারতীয় সেনারা। ইতিহাসে সোনার অক্ষওে লেখা এই ঘটনা প্রতিটি ভারতীয় গর্বিত করবে। শুভ বিজয় দিবস। আর ভারতের প্র্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং টুইটে বলেছেন, আজকে বিজয় দিবস উপলক্ষে আমি ভারতীয় সেনাদের বীরত্ব এবং সাহসকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই। আমি আমাদেও সেনাদের বীরত্বের কথা স্মরণ করি, যারা একাত্তরের যুদ্ধে বীরত্বের নতুন কাহিনী লিখেছিলেন। তাদের ত্যাগ সব ভারতীয়ের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। জাতি সর্বদা তাদের শ্রদ্ধা করবে।

বাদ যাননি ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীও। তার শুভেচ্ছাবার্তায়ও কোথাও বাংলাদেশের কথা উল্লেখ নেই।

টুইটে এই কংগ্রেস নেতা বলেছেন, ৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয় উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও সেনাবাহিনীর বীরত্বকে সালাম জানাই। সেই সময় ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে লৌহমানব ভাবত এবং দেশের সীমানা লঙ্ঘন করতে ভয় পেত।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close