নিউজ

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত

।। সুরমা ডেস্ক রিপোর্ট ।।
লণ্ডন, ৮ জুলাই : জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নারা শহরে এক নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ৬৭ বছর বয়সী আবের বুকে এবং ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আবে শিনজো সংসদের উচ্চকক্ষের একটি আসনের জন্য নির্বাচনী প্রচারণার ভাষণ দেয়ার সময় নারা নামক স্থানে হামলার শিকার হন।

জাপানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা এনএইচকে জাপানি পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে বক্তৃতারত আবেকে একটি শটগান দিয়ে পিছন থেকে গুলি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং ঘটনাস্থলে এনএইচকে প্রতিবেদক “দুবার বন্দুকের গুলির মতো শব্দ” শুনেছেন।

স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১ টায় আবের উপর সন্ত্রাসী হামলার খবর শুনেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা রাজধানীর বাইরে ইয়ামাগাতার উত্তর প্রিফেকচারে তার নিজের প্রচারাভিযানসূচী সংক্ষিপ্ত করে হেলিকপ্টারে করে রাজধানী টোকিওতে ফিরে আসেন এবং”কঠোর ভাষায়” হামলার নিন্দা করে বলেন যে তিনি তার হৃদয়ের “গভীর থেকে” প্রার্থনা করছেন আবে বেঁচে থাকবেন। তবে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রার্থনা সফল হয়নি।

এনএইচকে কিছু ফুটেজ সম্প্রচার করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে আবে রাস্তায় পড়ে গেছেন, বেশ কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী তার দিকে ছুটে আসছেন। গুলিবিদ্ধ আবে পড়ে যাওয়ার সময় তাঁর বুক চেপে ধরেছিলেন আর তাঁর পরিহিত শর্ট রক্তে ভেসে যাচ্ছিল।

ইয়ামাগামি তেতসুয়া নামে ৪১ বছর বয়সী একজন পুরুষ সন্দেহভাজনকে হত্যার চেষ্টার সন্দেহে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে এনএইচকে জানিয়েছে। সন্দেহভাজন তেতসুয়ার কাছে একটি বন্দুক ছিল যা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে বাজেয়াপ্ত করেছে। যদিও হত্যার উদ্দেশ্য সম্পর্কে পুলিশ এখনো কিছুই বলতে পারেনি।

উল্লেখ্য একটি ধনী ও সমৃদ্ধশালী রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা আবে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা তাকে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী করে তোলে। পিতা ছিলেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর দাদা ছিলেন একসময় দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী। আবের করা অর্থনৈতিক সংস্কার তার পূর্বসূরীদের কাছ থেকে এতটাই ভিন্ন ছিল যে এটি একটি নতুন নামের পরিচিতি পায় যা হল “অ্যাবেনোমিক্স”। এটি ছিল সাহসী আর্থিক সহজীকরণ এবং আর্থিক ব্যয়ের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সমন্বয়ের বৈশিষ্ট্যযুক্ত। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বছরের পর বছর কম মনোযোগের ক্ষেত্র জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয়কেও বাড়িয়েছিলেন ষ এবং তার পূর্ব পর্যন্ত অনুসৃত বিদেশে জাপানের সামরিক কর্মে ভূমিকা না রাখার নীতি থেকে সরে এসেছিলেন ও জাপানি সামরিক ক্ষমতাকে প্রসারিত করেছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রমশই তার শক্তিশালী ভূমিকা তাকে অতি-জাতীয়তাবাদীর তকমা দেয় এবং কোরিয়া এবং চীনকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। তিনি একটি নতুন জাপানি সংবিধান রচনা করতে চেয়েছিলেন তবে যথেষ্ট জনসমর্থনের অভাবে তিনি সংবিধান পুনর্লিখনের লালিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হন। তবে জনপ্রিয়তা থাকা অবস্থাতেই একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা পুনরায় দেখা দেওয়ার পর তিনি আগস্ট ২০২০ এ পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করা সত্ত্বেও জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) উপর আবের প্রভাবশালী উপস্থিতি লক্ষ্য করা লক্ষ্য করা গেছে যারা তাকে আবারও সংসদের উচ্চ কক্ষে চাইছিল।

আবের উপর গুলি চালানোর খবরটি জাপান এবং বিশ্বব্যাপী অবাক বিস্ময় ও তীব্র নিন্দার জন্ম দিয়েছে। জাপানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ইমানুয়েল বলেছেন যে শুক্রবারের গুলির ঘটনায় তিনি “দুঃখিত ও মর্মাহত”। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “আবে-সান জাপানের একজন অসামান্য নেতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অটল মিত্র। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও এই খবরে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি টুইটারে বলেছেন, “আমাদের সকল ভাবনা এই সময়ে তাঁর পরিবার এবং জাপানের জনগণের সাথে।”

উল্লেখ্য যে জাপান বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ দেশ হওয়ায় সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপর গুলিবর্ষণ এর ঘটনাটি পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। জাপানে বন্দুক সংস্কৃতি এবং গোলাগুলির ঘটনা জনজীবনে একেবারে নেই বললেই চলে এবং সেখানে হত্যার হার পৃথিবীর সবচাইতে নিম্নতম দেশগুলোর একটি। সেজন্যেই এই ঘটনাটি সবার কাছে অত্যন্ত “দুঃখজনক এবং আশ্চর্যজনক” রুপে প্রতিভাত হচ্ছে। “এটি অবশ্যই এমন কিছু নয় যা আমরা টোকিওতে দেখতে অভ্যস্ত। আমরা কখনও এই ধরনের বন্দুক সহিংসতা দেখিনি” মিডিয়ার কাছে বলছিলেন একজন জাপানি প্রফেসর।

জাপানের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর রাজনীতিবিদদের মধ্যে সম্ভবত সবচাইতে সার্থক ও সুনামের অধিকারী আবে শিনজোর মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছেনা সে দেশের জনগণ।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close