যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোন গন্তব্য চায়… (১)
বিরোধী রাজনীতিবিদেরা মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যাকাণ্ড বা ক্রসফায়ার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে যেভাবে বগল দাবাচ্ছেন, তারা কি রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের গুম বা হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে একটা শব্দও উচ্চারন করাতে পেরেছিলেন? তাহলে কি এটা মাদক মাফিয়াদের সাফল্য? মাফিয়ারা কি লবিং ফার্ম নিয়োগ করে এই ফায়দা তুলে এনেছে? নাকি শেখ হাসিনার সরকারকে চাপ দিয়ে মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বন্দোবস্ত করার আয়োজনেই এটি করছে? এ বিষয়গুলো নিয়ে কিছু নির্মোহ আলোচনা করবো।
ইতোমধ্যেই চীনা পক্ষ থেকে বিবৃতি এবং সেই চীনা অবস্থানের বিপরীতে চীনের অকৃত্তিম বন্ধু জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপির ক্ষুব্ধ অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতির ভিন্ন মেরুকরণকেই নির্দেশ করছে। সেইসাথে ভারতের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের শীতলভাব এবং চীনের সাথে উষ্ণ লেনদেনের সম্পর্ক এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। সাথে পাকিস্তান কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলন বয়কটকে খালি চোখে দেখার কোন অবকাশ নেই।
উল্লেখ্য, মাদক কারবারিদের চেয়েও কয়েকগুন বেশী রাজনৈতিক নেতা কর্মী গুম, খুন বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে বাংলাদেশে। কোন সময়ই যুক্তরাষ্ট্র কোন পদক্ষেপ নেয়নি এমনতর। অথচ মাদক ব্যবসা বিরোধী অভিযানে র্যাব/পুলিশ কর্তৃক মাদক কারবারিদের হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে কিছু রাজ কর্মচারীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের অপমানজনক তালিকা প্রকাশ করার পর ভিন্ন এক বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন আন্তর্জাতিক অবমাননা ইতিপূর্বে কখনোই না ঘটলেও সরকার বা এই রাজকর্মচারী বা এদের সমর্থকদেরr কোন লজ্জাবোধ কোথাও দেখছি না। ইতিমধ্যেই সাবেক সেনাপ্রধানের মার্কিন ভিসা বাতিল এবং ইজ্জত বাঁচাতে রাষ্ট্রের সহায়তায় পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে কানাডায় প্রবেশ করতে না দেয়ায় অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে দ্বিতীয় আশ্রয় বানানো রাজনৈতিক ব্যক্তি ও রাজকর্মচারীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বৈশ্বিক সম্মেলনের মাধ্যমে অন্যান্য কিছু দেশের মতো বাংলাদেশের কিছু সরকারী কর্মচারীর কালো তালিকা ভুক্ত করা, ভিসা বাতিল করা হচ্ছে মূলত রাজনৈতিক সরকারকে বাগে আনাতে না পেরে প্রথম সতর্ক সংকেত দেয়া। এরপর সরকার তাদের লাইনে না গেলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে তালিকা প্রকাশ করবে। নিষেধাজ্ঞাও দেবে। সম্পদ জব্দ করবে। দেখা যাক সরকার কতক্ষন সহ্য করতে পারে। এনিয়ে একপ্রকার কূটনৈতিক যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থানে নেমেছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রদূতকে তলব করে হুশিয়ারি দিয়েছেন বৈদেশিক বিষয়ক রাজকর্মচারী। র্যাবও জানিয়ে দিয়েছে তারা যাই করুক তা মানবাধিকার রক্ষার জন্যই করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এই তালিকার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যাদের বিরুদ্ধে তারা এই ধরনের ব্যবস্থা নিতে উদ্যত হয়েছেন, এরা কেউই কিন্তু নিজেদের ইচ্ছাতে কাউকে নিপীড়ন, গুম বা হত্যা করার যোগ্যতাই রাখেন না। যারা রাজনৈতিক ইচ্ছার বাইরে কিছু করেছেন, সেই রাজকর্মচারী (বাহিনীর সদস্যরা) সবাই জেলেই থাকছে পরবর্তীতে। তাই এদের মালিক মোক্তার পুরোটাই কিন্তু রাজনৈতিক। সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা রাষ্ট্রে হোক বা রাজনীতিতে হোক তাদের স্পর্শ করার কোন পদক্ষেপ কিন্তু এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র নেয়নি। যদিও শোনা যাচ্ছে ১০৮ জনের তালিকা রয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বেসামরিক আমলাও রয়েছেন। (চলবে)
- লেখক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ,
প্রেসিডেন্ট, লিবারেল পার্টি বাংলাদেশ