সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেভাবে ‘বিজয়ী’ হয়েছে …
।। শামসুল আলম লিটন ।।
লণ্ডন, ৬ ফেব্রুয়ারী – ভোটার শূন্য সিটি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সিটি নির্বাচনে সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকার কিভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছে? নির্বাচনের পূর্ব ও পরবর্তী পর্যায়ে বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে নিন্মোক্ত কয়েকটি কারণ — এই কথিত বিজয়ের নেপথ্য রয়েছে:
০১. আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রতিটি মহল্লার প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সরাসরি আওয়ামী লীগ করে না, এমন সকল লোককে বলে দিয়েছে আপনাদের ভোট কেন্দ্রে যাবার কোন দরকার নেই।
০২. ভোটের দিন সকাল থেকে নিজেদের দলীয় ক্যাডার দিয়ে ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিশাল লম্বা লাইন দাঁড় করিয়ে রেখেছে যাতে সাধারণ ভোটার দাঁড়াতে না পারে।
০৩. এর পরেও যেসব সাহসী ভোটার ভেতরে ঢুকতে পেরেছে তাদেরকে আগুলের ছাপ দেওয়ার পরে বলা হয়েছে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এটাকে জায়েজ করতে এমনকি ডঃ কামাল এবং খোদ সিইসির আংগুলের ছাপ পাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি ফলাও করে মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু মেশিনকে প্রোগ্রামিং কমাণ্ডের মাধ্যমে কিছুক্ষণের জন্য ডিএকটিভেট করে অপছন্দের ভোটারকে আগুলের ছাপ না পাওয়ার অজুহাতে বিদায় করে দেয়া হয়েছে।
০৪. যারা আগুলের ছাপ দেওয়ার পরে ভেতরে ঢুকতে পেরেছি তাদেরকে বলা হয়েছে আপনার ভোট দেওয়ার দরকার নেই বাড়ি চলে যান। কাউকে বলা হয়েছে তাদের সামনেই নৌকায় ভোট দিতে, নতুবা ভোট কেন্দ্র থেকে বের হবার পরপরই গুম হয়ে যাবে।
০৫. বিএনপি’র এজেন্টদেরকে একেবারে সাতসকালেই ৫ মিনিটের সময় বেঁধে দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। অথচ সিইসি বলেছেন, এজেন্টদেরকে বললেই তারা চলে যাবে কেন? কিন্তু আজরাইলরূপী চাপাতিলীগের সম্মুখে দাঁড়িয়ে রেব পুলিশের ভয় মাড়িয়ে ভেতরে থাকার মত সাহস দেখানো আর নিজ হাতে আম্ন হত্যা করে ছেলেমেয়েদেরকে এতিম করানো একই কথা।
০৬. সাধারণ মহিলাদেরকে ভোটকেন্দ্রের কাছে একেবারেই যেতে দেয়া হয়নি। বেশি ভোটার হলে বিএনপি জিতে যাবে এরকম একটা ভয় সারাক্ষণই কাজ করেছে। সেজন্য ভোটার উপস্থিতি ১৫ শতাংশের নীচে রেখেছে।
০৭. দুই কোটি লোকের শহরে মাত্র ৫/৬ লাখ ভোটে নির্বাচিত হয় এই থেকেই নির্বাচনের হাল হকিকত বুঝা যায়।
০৮. সরকার যথারীতি প্রশাসন পুলিশ ও রাষ্ট্রীয় সংস্থার আনুকূল্য নিয়ে নির্বাচনী নদী সাঁতরে পার হয়েছে ঠিকই কিন্তু লুঙ্গি হারিয়ে নেংটো হয়ে নদীর ওপারে উঠেছে। রাজার উইলি সবাই দেখতে পাচ্ছে কিন্তু আত“সম্মান বিবর্জিত বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতার দেশে কে রাজাকে কে বলবে আপনার লুঙ্গি হারিয়ে গেছে, উইলি দেখা যাচ্ছে, দয়া করে ইজ্জত সামলান বলে বঞ্চিত ভোটাররা রাজনীতিকদের সতর্ক করেছেন।
০৯. এই মুহূর্তে দেশের সবচাইতে খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডক্টর আলী রীয়াজ তার হাইব্রিড রেজিম গ্রন্থে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মানকে তুরস্কের কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্রের সাথে তুলনা করেছেন। অথচ এমনকি তুরস্কের ইচ্চাম্বুল শহর যেটি এরদোগানের ক্ষমতার উৎস সেখানকার মেয়র নির্বাচনেও এরদোগান বিরোধী দলের নেতা জয়লাভ করেছে যা বাংলাদেশ অসম্ভব বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
১০. যখন কোন কর্তৃত্ববাদী সরকারকে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে সরাতে পারেনা বা ব্যালটের মাধ্যমে সরানোর সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন ইতিহাস তাদেরকে বুলেটের মাধ্যমে বিদায় করে দেয়। বাংলাদেশ কি সেই রকম আরেকটি বিয়োগান্ত নাটকের পথে হাঁটছে কিনা সেটাই বোদ্ধামহল এর প্রশ্ন।