ট্রাফালগার স্কোয়ারের সেই সাহসী কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদের ইন্তেকাল
মৃত্যুর আগেও মিলেনি সরকারি স্বীকৃতি
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লন্ডন, ২০ জুন। ট্রাফালগার স্কোয়ারে পাকিস্তানের পক্ষত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়া সেই সাহসী কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)।
বুধবার (২০ জুন) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ঢাকার উত্তরায় তার নিজ বাসভবন শিউলিতলায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। তিনি লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা এবং ডায়াবেটিস সহ নানা জটিলতায় গত কয়েক সপ্তাহ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিন সপ্তাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর চারদিন আগে মহিউদ্দিন আহমদকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানান তাঁর ছোটো ভাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও টাকশালের এমডি জিয়াউদ্দিন আহমদ।
মহিউদ্দিন আহমেদ বিলাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কূটনৈতিক লড়াইয়ে বলিষ্ঠ অবদানের জন্য দেশে বিদেশে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক উদ্যোগে সম্মানিত হয়েছেন। কিন্তু জীবিত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য কোনো সরকারী স্বীকৃতি পাননি। গতবছর যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে অবদানের জন্য যে ১২ জনকে সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলো সেই তালিকায় তাঁর নাম ছিলোনা। কিন্তু বেসরকারিভাবে প্রবাসে লন্ডনভিত্তিক বৈশ্বিক বাঙালী কমিউনিটি সংগঠন ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজ গত ২৬ মার্চ লন্ডনে হাউস অব কমন্সে মি. মহিউদ্দিন আহমেদসহ একশ’ সংগঠককে প্রথম পর্যায়ে স্বীকৃতিসূচক সম্মাননা প্রদান করে। অসুস্থতার কারণে তাঁর পক্ষ থেকে অরোরা মহিউদ্দিন সেই মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন।
সদ্যপ্রয়াত মরহুম আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীও জীবিত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি করে সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাজেট প্রকাশ করে তাঁর কফিনে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করা হয়।
একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে লণ্ডনে তৎকালীন পাকিস্তান হাইকমিশনে সেকেণ্ড সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত ছিলেন মহিউদ্দিন। ১ আগস্ট ট্রাফলগার স্কয়ারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক সমাবেশে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করার ঘোষণা দেন। ইউরোপের দেশগুলোতে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকদের মধ্যে তিনিই প্রথম পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের কাজে যোগ দেন। সেই উত্তাল সময়ে ২৩ অগাস্ট তার প্রথম সন্তান অরোরা’র জন্ম হয়।
আমাদের ঢাকা অফিস জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমদ’র মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোককার্তায় তিনি বলেছেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান জাতি সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।”
কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে মহিউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, স্বাধীন দেশের স্বপ্নে সেদিন তাদের যুদ্ধটা ছিল‘কূটনৈতিক ফ্রন্টে’। আর তাতে সফলও হয়েছিলেন।
মহিউদ্দিন আহমদ স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। ২১ জুন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর জামে মসজিদে তার জানাজা হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতেও আরেক দফা জানাজা হবে। তার কফিন নেওয়া হবে দীর্ঘদিনের কর্মস্থল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্ত্রী বিলকিস মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানাজা ও গার্ড অনার দেওয়ার পর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ফেনীর গ্রামের বাড়িতে। আসরের পর সেখানে জানাজা শেষে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় নূরপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।