নিউজ

লকডাউনের কোনো শেষ তারিখ নেই : প্রধানমন্ত্রী

এবারও হচ্ছে না জিসিএসই ও এ লেভেল পরীক্ষা ।। দিনে হাজার ছাড়িয়ে মৃত্যু, ৬০ হাজারের অধিক আক্রান্ত ।। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে অনেক মসজিদ

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ৭ জানুয়ারী – বৃটেনে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন ৬০ সহস্রাধিক মানুষ। একই সাথে মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিলে দিনে সামিল হচ্ছেন সহস্রাধিক মানুষ। ৬ ফেব্রুয়ারী, বুধবার অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে একদিনে ১ হাজার ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৬২,৩২২ জন। যা করোনা প্রথম তরঙ্গেও ছাড়িয়ে গেছে। এমন ভয়াবহ অবস্থার প্রেক্ষিতে তৃতীয় বারের মতো ইংল্যাণ্ড ও স্কটল্যাণ্ডে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়েছে। প্রথমে মধ্য-ফেব্রুয়ারীতে লকডাউন সমাপ্তির ইঙ্গিত দিলেও বুধবার পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এবারের লকডাউনের শেষ কোনো তারিখ নেই।
গত ৪ জানুয়ারী, সোমবার মধ্যরাত থেকে মধ্য-ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জনগণকে সতর্ক দিয়ে বলেছেন, আগামী সপ্তাহগুলো হবে আরো কঠিন। জনগণকে বিধিনিষেধ মান্য করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যে করোনার নতুন ধরন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। তার মানে হলো সরকার আবারও আপনাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিচ্ছে। একই সাথে তিনি কী ওয়ার্কারদের সন্তান এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ছাড়া সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণাও প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রীর লকডাউন ঘোষণার পর পর এবছরের জিসিএসই ও এ লেভেল পরীক্ষাও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এক সরকারী ঘোষণায় বলা হয়, তৃতীয় লকডাউনে স্কুল বন্ধ হওয়ার প্রেক্ষিতে ইংল্যাণ্ডের শিক্ষার্থীদের এই গ্রীষ্মে জিসিএসই ও লেভেল পরীক্ষায় বসতে বলা হবে না। জিসিএসই ও লেভেল পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বলে এডুকেশন সেক্রেটারি গ্যাভিন উইলিয়ামসন তাঁর বক্তব্যে নিশ্চিত করেছেন। কোভিড-১৯ হার বেড়ে যাওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণের জন্য কমপক্ষে অর্ধেক মেয়াদ পর্যন্ত সারা দেশে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণার প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসে। সরকারের পক্ষ দেওয়া বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগজনক সময় স্বীকার করে বলা হয় যে, তারা পরীক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান হ’ল আমরা শিক্ষার্থীদের জিসিএসই ও এ-লেভেল পরীক্ষায় বসতে বলব না।

সরকারের শিক্ষা বিভাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকল কীভাবে শিক্ষার্থীদেরকে তাদের কঠোর পরিশ্রমের প্রতিফলনের ভিত্তিতে প্রাপ্য গ্রেড প্রদানের সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক আক্রান্ত ইউকের ব্যবসায়ীদের অর্থ সাহায্যার্থে ৪.৬ বিলিয়ন পাউণ্ডে নতুন আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। চ্যান্সেলর বলেছেন, ট্রেজারি থেকে প্রায় ৬ লক্ষ রিটেইল ব্যবসায়ী, হসপিটালিটি ও লেইজার খাতের সহায়তায় এককালীন ৪ বিলিয়ন পাউণ্ড বরাদ্দ দেওয়া হবে, যা প্রত্যেকে ৯ হাজার পাউণ্ড পর্যন্ত দাবি করতে পারে। এছাড়া বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য কাউন্সিলগুলোকে অতিরিক্ত আরো ৫৯৪ মিলিয়ন পাউণ্ড সহায়তা তহবিল দেওয়া হবে।

তদ্বসত্ত্বেও ব্যবসায়ী নেতারা উদ্বেগ উত্থাপন করেছেন যে, এই অতিরিক্ত সহায়তা হাজার হাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ধস থেকে বাঁচাতে যথেষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, বুধবার বৃটেনের ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে একটি বৈঠকের বসেন এবং তৃতীয় জাতীয় লকডাউনডে ক্ষতিগ্রসস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশী আর্থিক সহায়তা দেওয়ার উপর চাপ প্রদান করবেন বলে আশা করা হয়েছে।
এদিকে, তৃতীয় দফার লকডাউনে উপাসনালয় বন্ধের কোনো ঘোষণা না থাকলেও পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক মসজিদ দুয়ার সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রাণকেন্দ্র পূর্ব লণ্ডনে অবস্থিত ইউরোপের বৃহত্তম মসজিদ ইস্ট লণ্ডন মস্ক, বেথনাল গ্রীনের বায়তুল আমান জামে মসজিদসহ অনেকগুলো মসজিদ ২ থেকে ৩ সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এবারের লকডাউনেও প্রথমবারের মতো কড়াকড়ি নিয়মের মধ্য দিয়ে দেশবাসীকে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
তিনি বলেণ, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এবার আমাদের হাসপাতালগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশী চাপ পড়ছে। বিশ্বের অনেক দেশই সংক্রমণ রুখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই মিউট্যান্ট ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদেরও একসঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। এবার কড়া লকডাউন দেয়া হচ্ছে। যাতে এই নতুন ভাইরাস স্ট্রেইনটি নিয়ন্ত্রণে আসে।
লকডাউন অবস্থায় মানুষজনকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জরুরী কেনাকাটা, শরীরচর্চা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে বাইরে বের হওয়া যাবে। এছাড়া কোনো ঘরে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে সেক্ষেত্রে কেবল বাইরে বের হওয়া যাবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও লকডাউনের আওতায় থাকবে বলে তাঁর বক্তব্যে জানান বরিস জনসন। মার্চের আগে যে স্কুল খোলার কোনোরকম সম্ভাবনা নেই, তাও স্পষ্ট করেন তিনি। এমনকি মার্চেও যে স্কুল খুলবে তাও জোর দিয়ে বলতে পারেননি তিনি। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই স্কুল খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি দেখা যায় করোনায় মৃত্যু কমে এসেছে, ভ্যাকসিন ভালো কাজে দিয়েছে, তাহলেই ফেব্রুয়ারির পর স্কুল খুলতে পারে।
খেলাধুলার বিষয়ে তিনি বলেন, বাইরের মাঠগুলো বন্ধ থাকবে। আগের লকডাউনের মতো এবার ইনডোর খেলাধুলার কেন্দ্রগুলো বন্ধ হবে না। এছাড়া সম্ভ্রান্ত খেলাধুলা ও ধর্মীয় উপাসনালয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সাপেক্ষে খোলা রাখা যাবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছে বৃটেন। সম্প্রতি বিশ্বে প্রথম দ্বিতীয় ভ্যাকসিনেরও অনুমোদনকারী হিসেবে অক্সফোর্ড-আস্ট্রেজেনিকা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু নিউ মিউট্যান্ট তথা নতুন ধরণের করোনার সংক্রমণে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় বাধ্য হয়ে আবার লকডাউন করতে হয়েছে। তবু এতটুকুই যথেষ্ট মনে করছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরো বেশী কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close