নিউজ

ওরা প্রতিবেশী দেশের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে: তারেক রহমান

আওয়ামীলীগ এখন সন্ত্রাসী ও লুটেরাদের দল”

সুরমা প্রতিবেদন।।
লন্ডন, ২৬মার্চ; স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অস্ত্রের জোরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। জনগণ দেখছে কিভাবে ওরা প্রতিবেশি দেশের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, সেদিনের অর্জিত স্বাধীনতা আমরা ধরে রাখতে পারছি কিনা সেটাই ৫৪তম বার্ষিকীতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারেক রহমান: “আ’লীগের নেতাদের বক্তব্যেই প্রমাণিত হয়েছে তারা প্রতিবেশী দেশের সহযোগীতায় ক্ষমতা দখল করে আছে”। স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতেও সীমান্তে দুই বাংলাদেশী নাগরিকের হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রতি আ’লীগের কোনো আস্থা না থাকায় জনগণের নিরাপত্তা নিয়েও তারা দায়িত্বহীন।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. হাসনাত এম হোসাইন এমবিই, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মাহিদুর রহমান, ব্যারিষ্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিষ্টার আব্দুস সালাম। পূর্ব লন্ডনের রয়েল রিজেন্সী হলে অনুষ্ঠিত সভা ও ইফতার মাহফিলে দেড় সহস্রাধিক দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন পেশাজীবী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অঙশ নেন।

তারেক রহমানের পুরো বক্তব্য

আমরা স্বাধীনতা দিবসটি এমন একটি সময়ে পালন করছি যখন বাংলাদেশের বহু মানুষের মনে প্রশ্ন আসছে যে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা রক্ষা করতে পারছি কীনা। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজকে হুমকির সম্মুখীন কীনা। কতটুকু অর্জন করেছি আমরা স্বাধীনতা।
জাতিসংঘ কয়েকদিন আগে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের ৪৩ শতাংশ মানুষ ঋণ করে সংসার চালাতে হয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০ কোটি হলে এটি ৯ কোটির কাছাকাছি। যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ৭ কোটি অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের চেয়েও বেশি সংখ্যক মানুষ বর্তমানে বাংলাদেশে ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। ৫৪ তম স্বাধীনতা দিবসে এটাই কী আমাদের অর্জ্ন। আমরা উন্নয়নের অনেক গল্প শুনি। ঋণ করা মানুষের উন্নয়নের কথা কে বিশ্বাস করবে?

জাতিসংঘের আরেকটি রিপোর্ট আছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে অবৈধভাবে অভিবাসী হয় বাংলাদেশ গত বছরে এটা তৃতীয় ছিল। বাংলাদেশের তরুণেরা-যুবকেরা যারা আগামীতে দেশ গড়বে তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। এসব যুবকেরা দেশের প্রাণ। কারণ দেশে তাদের কর্মসংস্থান নেই। আজকে ডামি বা ভোট ডাকাত সরকার যাই বলি এরা উন্নয়ন করেছে তথাকথিত। সেটা দেশের নয়, দেশের মানুষের নয়। তাহলে হাজার হাজার তরুণ-যুবকের দেশ ছেড়ে যেতে হতোনা। পথিমথ্যে শতশত হাজার তরুণ সাগরে ডুবে মারা যাচ্ছে। নেপাল, ভুটানের ক্ষেত্রে সাগরে ডুবে মারা যাওয়ার খবর কী পেয়েছেন?
আজকের ডামি সরকার দেশটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে প্রতিটি সেক্টর ধংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে সার্বিক অবস্থা জানলে জানতে পারেন কোটি কোটি মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। পত্রিকার পাতা খুললে দেখা যায় একটির পর একপি ব্যাংক রেড জোন, ইয়েলো জোনে চলে যাচ্ছে। অর্থা মানুষের সঞ্চয় রাখা ব্যাংকগুলোতে লাল বাতি জ্বলছে। এই ডামি সরকার, মাফিয়া সরকার, এদের লোকজনেরা-সাঙ্গাপাঙ্গরা মানুষের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। ডামি প্রার্থী হলফনামা পত্রিকায় এসেছিল। ২০১৪, ২০১৮ সালের তুলনা করা হয়ে অবাক হওয়ার মতো শতশত গুণ সম্পদ তাদের বেড়েছে। যুবকদের কর্মসংস্থান নাই। আজকে কোটি কোটি মানুষ জানেনা পরেরদিন তারা কী খাবে?

বাংলাদেশে বহু মানুষ পানি দিয়ে ইফতার করছে। এই অবস্থা তাদের লুটপাটের জন্য। বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাট করে যারা যুক্তরাজ্যে যারা নিয়ে এসেছে তাদের মধ্যে একজনের নাম উঠে এসেছে। হাসিনা নামক লুটপাটের দলের নেতাদের শতশত বাড়ি এই যুক্তরাজ্যে।
আজকে বিচার ব্যবস্থার দিকে তাকালে। প্রধান বিচারপ্রতি নিউইয়র্কে আছেন, তাদেরকে বিমানবন্দরে শুভেচ্ছা জানাতে এয়ারপোর্টে গিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তাহলে সেই দেশের মানুষ কতটুকু ন্যয়বিচার পাচ্ছে। আজকে বিচার ব্যবস্থাকে ধংস করে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন, অর্থনীতিকে ধংস করে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালে কারিকুলামে অভিভাবক, শিক্ষকেরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আগামীতে বাংলাদেশে মেরুদন্ডহীন একটি প্রজন্ম গড়ে তোলার্। আজকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের টর্চার সেল হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। বুয়েটে কিভাবে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখেছি আবাসিক হলে কিভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে।
অর্থনীতি, বিচার, প্রশাসন, শিক্ষা সবকিছু ধংস করে দেওয়া হচ্ছে। বাকি থাকলো স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব। আজ ২৬শা মার্চ প্রতিবেশি একটি দেশ দুটি লাশ উপহার দিয়েচে। লাশ দুটি তারা ফেরত দিয়েছে কিনা জানিনা।

আজকে বাংলাদেশে যারা ক্ষমতা দখল করে রেখেছে জনগণের ওপর এদের কোন রকম আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই। কারন ২০১৪, ১৮ এবং ২৪ সাল তার প্রমাণ। যদি এই আওয়ামী লীগ নামক সন্ত্রাসী দলটি, এই লুটপাটকারী দলটি এদের যদি বাংলাদেশের জনগণের ওপর আস্থা বিশ্বাসনাই। ১৪, ১৮ , ২০২৪ সালে তার প্রমাণ। যদি আওয়ামী লীগ নামক সন্ত্রাসী, লুটপাটকারী দলটি এদের যদি বাংলাদেশের জনগণের ওপর আস্থা বিশ্বাস থাকতো তাহলে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকারকে তারা কেড়ে নিতো না। যদি বাংলাদেশের মানুষের ওপর এদের আস্থা বা বিশ্বাস থাকতো তাহলে মানুষের কথা বলার অধিকার এরা কেড়ে নিতো না। যদি মানুষের ওপর যে তাদের আস্থা বিশ্বাস নেই তার সব থেকে বড় প্রমাণ আমারা দেখেিছি প্রহসনের যে নির্বাচন হয়েছে তার আগে বা পরে।

আওয়ামী লীগ নামক দলটির সাধারন সম্পাদক আছে, ওই ব্যক্তি কথা বললে সবাই একটা আশ্চর্যজনক শব্দ ব্যবহার করে। বাংলাদেশের মানুষ তার বাবা-মায়ের দেয়া নাম ধরে ডাকেনা। কয়েকদিন আগে তিনি প্রতিবেশি একটি দেশের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, সেই দেশ না হলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারতো না। সেই দেশের সাহায্যে ছিল সহযোগিতা ছিল বলেই তারা ক্ষমতায় এসেছে। এই ঘটনা একবার না। ৭ ই জানুয়ারি আগে এদের এক মন্ত্রী বলেছে সেই দেশটি থেকে এসে বলেছেন তারা আকুতি-মিনতি করে বলে এসেছে তাদের ক্ষমতায় রাখতে।

৭ই জানুয়ারির যে প্রহসনের নির্বাচন এই নির্বাচনের সময় কিছু লোককে গর্ব করে বলতে দেখেছি তাদের বলতে, তারা বাংলাদেশের প্রার্থী না। তারা অন্যকোন দেশের প্রার্থী। এই সবগুলো কথাগুলো থেকে প্রমাণিত হয় আর যাই হোক আওয়ামী লীগ নামক যে সন্ত্রাসী লুটপাটকারী দল এদের বাংলাদেশের জনগণের ওপর আস্থা-বিশ্বাস কোনটাই নাই।
বলেই তারা আরেকজনের আর্শিবাদ, সাহায্য-সহযোগিতা চায়। বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে তারা সাহায্য চায়না, সহযোগিতাও চায়না। বিএনপি সকল সময়ে বিশ্বাস করে আমাদের সকল শক্তির উস হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ এবং সে কারণেই এই কথা আমরা যেমন বলি জনগণও বিশ্বাস করে। জনগণ বিশ্বাস করে যে, জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরা মানুষের কাছে গিয়েছি। আমরা মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিলাম যেন ৭ তারিখের নির্বাচন তারা বর্জন করে। সকল বিরোধীদলের আহ্বানে মানুষ সেই ভোটে যায়নি। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস।

জাতীয়তাবাদী দল সহ সকল বিরোধী দলের আহ্বানে দেশের ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ মানুষ ৭ তারিখে ভোটে যায়নি। তারা মাফিয়ার দল, (জনগণ) তাদেরকে বয়কট করেছিল। আজকে স্বাধীনতার এই দিবসে দাঁড়িয়ে আমরা যদি মনে বাংলাদেশের মানুষ তো আমাদের সাথে সেই পরিতৃপ্ত হলে চলবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব কতুটুকু রক্ষিত হচ্ছে এইটি আজ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমরা দেখেছি কিভাবে আজকে যারা অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে কিভাবে (আওয়ামী লীগ) একটি প্রতিবেশি দেশের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে।

যে সকল কথাবার্তা আমরা তাদের কাছে শুনতে পাই দেশের মানুষকে অবজ্ঞা করে। তাতে বুঝতে পারি আওয়ামী লীগ নামক দলটি যাদের দালালি করছে, দালালির থেকেও তারা নিচে নেমে গিয়েছে। তারা নিজেদেরকে ক্রীতদাসের স্থানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে একজন কর্মী হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস। কিন্তু এই আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকলে আমাদের চলবে না। আজকে দেশ যে জায়গায় এসেছে। এই দায়িত্ব শুধু রাজনৈতিক নেতাদের নয়। আজকে কোন সম্মানিত ব্যক্তি সম্মান পাননা। সকল রকমের সম্মানিত ব্যক্তিকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে তারা দিতে কার্পণ্য করে। আমরা যে কারণে মাঠে আছি এটি শুধু একটি রাজনৈতিক দাবি নয়, এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের ব্যাপার। এটি বাংলাদেশের মানুষের অস্তিত্বের ব্যাপার। এটি শুধু দুইটি রাজনৈতিক দলের মধ্যকার সংগ্রাম-আন্দোলনের ব্যাপার নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম-আন্দোলনের ব্যাপার।
বাংলাদেশের চিত্র বদল করতে হলে, আমাদের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বকে যদি রক্ষা করতে হয় দলমত নির্বিশেষে সমাজের যে পেশা শ্রেণীর মানুষই হই না কেন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কোটি কোটি মানুষকে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে, যারা সাগরে ডুবে মারা যাচ্ছে তারা কী সকলেই বিরোধী দলের? আজকে বাংলাদেশে যে যুদ্ধ তা সকলের যুদ্ধ। ৫৪ তম স্বাধীনতা দিবসে এই হোক প্রতিজ্ঞা। যে বিচার ব্যবস্থা আজকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে, যে অর্থনীতি আজকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে যে শিক্ষা ব্যবস্থা আজকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন আজকে ধংসের সকল কিছুকে আবার গড়ে তুলতে হলে সমগ্র বাংলাদেশের সকল বিরোধী দল-মত নির্বিশেষে সুশীল সমাজের কবি, সাহিত্যিক শিক্ষক সকলকে আহ্বান করবো আসুন সবাই মিলে এদের রুখে দাঁড়াতে হবে, কারণ দেশ আমাদের সকলের।

নোট: আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তারেক রহমানের সম্পূর্ণ বক্তব্য মনিটর করেছেন সুরমার বিশেষ প্রতিনিধি হাসান জাভেদ।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close