নিউজবাংলাদেশ

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে হলে আওয়ামী লীগের পিঠে চামড়া থাকবে না: শহীদুল আলম

  • জনভীতি আছে বলেই আওয়ামী লীগ নিপীড়ক

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।

লণ্ডন, ২১ মার্চ- বিশ্বখ্যাত ফটোসাংবাদিক, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ড. শহীদুল আলম বলেছেন, ”অনেককেই বলতে দেখি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কী লাভ? কারণ পুলিশ ওদের হাতে, আদালত ওদের হাতে; সব ওদের হাতে। এদের বিরুদ্ধে কী করে লড়াই করবো? যে মুহূর্তে আমরা বলি “করে কী লাভ” তখনই কিন্তু তাদের জয় হয়ে গেল।” আমাদের শক্তি সততা, ন্যায্যতা আছে। তাদের মধ্যে আছে ভীতি (তৈরীর ক্ষমতা)। জনভীতির কারণেই তারা নিপীড়ক হয়ে দমনের চেষ্টা করছে।

গ্লোবাল বাংলাদেশি অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস (জিবিএএইচআর) আয়োজিত ‘ট্রাভেস্টি অব জাস্টিস: ড. মুহাম্মদ ইউনূস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

সোমবার (১৮ মার্চ) লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ‘সাপ্তাহিক সুরমা’ কার্যালয়ে জিবিএএইচআর আহ্বায়ক ও সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের সভাপতিত্ব এবং ব্যরিস্টার জাকির হাসানের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও লেখক শাহগীর বখত ফারুক।  অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের সদস্য সচিব মেজর (অব:) মোঃ জাকির হোসেন, জিবিএএইচআর সিনিয়র ফেলো ও সিনিয়র ড্যাটা ইন্জিনিয়ার রুপম রাজ্জাক আলোচনায় অংশ নেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব ও আলোচনায় অংশ নেন নিউহ্যাম কাউন্সিলের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র ওহিদ আহমেদ, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, সাংবাদিক শেখ মুহিতুর রহমান বাবলু, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই এর মুসলিম খান, সাংবাদিক ও লেখক রাকেশ রহমান, লন্ডন মিররের সম্পাদক হাসিনা আক্তার, মানবাধিকার কর্মী নওশিন মুস্তারি মিয়া, এ্যাডভোকেট সুফিয়া পারভীন এবং সাংবাদিক মিনহাজুল আলম মামুন। 

উক্ত সভায় অবৈধ সরকার পতনের আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. শহীদুল আলম বলেন, আমাকে গ্রেপ্তারের আগেও যা বলেছি এখনও তা বলি। আমাদের সম্মিলিত শক্তি প্রয়োগ করলে তারা (সরকার) উড়ে যাবে। আমাদের সেভাবে লড়াই করতে হবে। তাতে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হবে, এই দেশের মানুষ তো পাক আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রফেসর ইউনূসকে হয়রানি করলে সাধারণ মানুষের কোথায় যাওয়ার আছে! আমাদের আদালত এমনটা একটি ভূমিকা রাখে তাহলে সাধারণ মানুষের কোথায় জায়গা হবে! ১০ বছরের বেশি গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে মিথ্যাচার চলছে। নোবেল প্রাইজের পর লম্বা সময় ধরে পরিকল্পিতভাবে তাকে হয়রানি ও অসম্মান করার প্রক্রিয়া চলছে দেশে। মাঝে কিছুটা ঝিমানি থাকলেও ২০২২ সেটা আবার চাঙ্গা হয়। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ বন্ধের প্ররোচণায় ইউনূসের হাত আছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক বলেছে, অনিয়ম ও ঘুষের কারণে তারা অর্থায়ণ করেনি। কিছুদিন আগে প্রফেসর ইউনূস সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানে একজন সাংবাদিক পরিচয়ে রুঢ়ভাবে প্রশ্ন করেন- পদ্মা সেতুতে আপনি বিরোধিতা করেছেন কেন? তিনি (ইউনূস) জবাব দেন আমি বিরোধিতা করি নাই। পরে জানলাম সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ওই ব্যাক্তি পুলিশের একজন সহকারি কমিশনার। বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে। তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা কেমন প্রশ্ন করেন নির্যাতিত এই ফটোসাংবাদিক।

শহীদুল আলম বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ড. ইউনূসের কাছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৪৩ টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এক সপ্তাহের মধ্যে চায়। যদিও তিনি দিতে পেরেছেন। এতে খুব পরিস্কারভাবে প্রমাণিত দেশের আইন ও আন্তজার্তিক আইন তার বিরুদ্ধে কোনটাই টেকেনা। তার প্রতি সরকারের এক ধরণের হিংসা রয়েছে। মাঝখানে গ্রামীন ব্যাংক, টেলিকম দখল করে তালাবদ্ধ করে দেয়। তার প্রেস কনফারেন্সের দিন নারীদের ঝাড়ু নিয়ে এক ধরণের হুমকি দেয়া দেয়া হয়।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ১২ টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৮টি ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে এবং ৪টি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। নিরপেক্ষ নির্বাচনগুলোয় বিরোধীদল জিতেছে। সরকারের অধীনে নির্বাচনে সরকার জিতেছে। এ থেকে হিসাব সহজ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগ জিতবে না। তাদের পিঠে চামড়া থাকবে না। এটা বুঝতে পেরে তখনই (নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন) আইনটি বদলে ফেলে। অথচ এই সরকারই কিন্তু বিরোধীদলে থাকতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছিলেন।

সবশেষে তিনি বলেন, আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। লড়াই করে জেতার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। সকলে মিলে কাঁধে কাঁধ রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমাদের দেশ আমাদেরই উদ্ধার করতে হবে। আমাদের দেশ আমেরিকা বা কেউ উদ্ধার করবে না। প্রত্যেক দেশ তাদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে। ক্ষণিকের জন্য কারও ওপর নির্ভর হওয়া যাবে না। তাদের বোঝাতে হবে এই সরকারের সঙ্গে জনগণ নাই। তারা আমাদের সঙ্গে না থাকলে তাদের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যত নাই।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close