নিউজ

সিএনএন’কে ড. ইউনূস- অনেক বিদেশি বন্ধুই আমাকে দেশত্যাগ করতে বলেছেন

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।

লণ্ডন, ০১ মার্চ- ১৯৭১ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনাকালে কেবলই নিজ দেশের মানুষকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং পরে ফিরে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সিএনএন-এর সাংবাদিক ক্রিস্টিয়ান আমানপোরকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।

প্রশ্ন পর্বের আগে সিএনএন এর খবরের শুরুতে বলা হয়, বাংলাদেশে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের সমর্থকরা বলছেন, তিনি ওই দেশের প্রধানমন্ত্রীর টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। যদিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটির সরকার। নিজের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করে তিনি সারা বিশ্বের হতদরিদ্র লাখ লাখ মানুষকে সাহায্য করেছেন।

এরপর আমানপোরের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনুস বলেন, এখন মারাত্মক সব ঘটনা ঘটছে। ৩৫ জনের একটা গ্রুপ আমাদের বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়ে যেখানে আমাদের সামাজিক ব্যবসার অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।অনেকগুলোই দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে সবাই উদ্বিগ্ন হয়, ভয় পেয়ে যায়।

নিজ প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোকজন এসে এসবের মালিকানা দাবি করার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, যেহেতু এগুলো আইনি বিষয়- তাদের কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে তারা আদালতে যেতে পারতো, সমঝোতার উদ্যোগ নিতে পারতো। কিন্তু, আপনি তো ভবনে ঢুকে এর মালিকানা দাবি করতে পারেন না। সংবাদ সম্মেলনের পর অনুপ্রবেশকারীরা আর ভবনে প্রবেশ করেনি বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

বারাক ওবামার মতো ডজন ডজন নোবেলজয়ী আপনার বিরুদ্ধে বিচারিক হয়রানি বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছেন। এসব মামলার পরিণতি কি হতে পারে? আপনি কি জেলে যেতে পারেন?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমাকে ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুতরাং, জামিনের মেয়াদ শেষ হলে আমাকে ফের জামিন দিতে পারে, নয়তো আমি সহ অন্য যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তারা সবাই জেলে যেতে পারি। ৩ মার্চে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা আরেকটি নতুন মামলা হচ্ছে। আমাদের দুর্নীতি, মানি লন্ডারিংসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। ওই মামলায় সাজার মেয়াদ আরও দীর্ঘ। আমরা জানিনা এসব কখন শেষ হবে।

আপনার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে? এগুলো কেন আনা হয়েছে? কারণটা কি? এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, শুধু আমি-ই যে এগুলো অস্বীকার করছি তা নয়, যত আইনজীবীর সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি, তা সে স্থানীয়-ই হোক, আর আন্তর্জাতিক-ই হোক, তারা সবাই এ বিষয়ে একমত যে- এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই। শ্রম আইন সংক্রান্ত মামলার ইতিহাসেও এসব অভিযোগে কারও বিচার হয়েছে বলে তারা শোনেননি। সুতরাং, এগুলো হয়রানির জন্যই করা হচ্ছে, যাতে আমি বা আমরা এই বার্তা পাই যে, তোমাদের সাদরে গ্রহণ করা হচ্ছে না।

অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর করা মন্তব্য উল্লেখ করে আমানপোর জানতে চান-শেখ হাসিনা কি আপনাকে তার রাজনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভেবে উদ্বিগ্ন হচ্ছেন? জবাবে ড. ইউনূস ‘তিনি কী ভাবেন আমি জানি না’- মন্তব্য করে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পষ্টভাবে ‘না’ করে দেন। ওয়ান ইলেভেনে সরকার প্রধান হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও সেটি গ্রহণ না করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আমার বলার দরকার ছিল না। তাও বলেছি যাতে কোনো দ্বিধার জন্ম না হয়।’

সম্প্রতি রাশিয়ার কারাগারে নিহত হয়েছেন দেশটির বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি। নাভালনির মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইউক্রেনে অবস্থানরত আমানপোর ড. ইউনূসের কাছে জানতে চান আপনি কি বিদেশে থাকার প্রস্তাব পেয়েছেন?

ড. ইউনূস বলেন, আমার অনেক বিদেশি বন্ধুই আমাকে দেশত্যাগ করতে বলেছেন। তাদের দেশে থাকার সকল সুযোগ সুবিধাসহ, সারা দুনিয়ায় আমার কাজগুলো চালিয়ে নেওয়ার নিশ্চয়তাসহ। আমি ১৯৭১ সালের শেষে (মিডল) টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করার সময়টায় দেশে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছিলাম এবং আমি দেশে ফিরেছিলাম। আমি শুধু মানুষকে সাহায্য করতেই ফিরেছিলাম।

সিএনএনের সাথে . ইউনুসের সাক্ষাতকারের লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=I36jzuJzyXE

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close