নিউজহোম

“বিডিআর ম্যাসাকার- ১৫তম বার্ষিকী: প্রেক্ষাপট দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র” শীর্ষক সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত

সুরমা ডেস্ক।। “গ্লোবাল বাংলাদেশীজ অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস (জিবিএএইচআর)” এর উদ্যোগে রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যর পূর্ব লন্ডনে হোয়াইট চ্যাপেল সেন্টারে “বিডিআর ম্যাসাকার ১৫ তম বার্ষিকী, প্রেক্ষাপট দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র” শীর্ষক সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গ্লোবাল বাংলাদেশীজ এলায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস’র যুগ্ম আহ্বায়ক মেজর (অব) জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে ও ব্যারিষ্টার মোঃ জাকির হোসেনের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. হাসনাত এম হোসাইন এমবিই। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান ও অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সাংবাদিক শামসুল আলম লিটন। সাবেক বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান ও মেজর (অব.) সাফায়েত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দেন।

বক্তারা বলেন, ২০০১ সালের ১৫, ১৬ ও ১৯ এপ্রিল সিলেট সীমান্তের ‘পদুয়ায়’ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সাথে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। এই তিনটি যুদ্ধেই বাংলাদেশের বিডিআরের জোয়ানরা সাহসিকতার সঙ্গে বিজয় অর্জন করে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার পুলিশ থেকে নিয়োগ করা হলেও বিডিআরের কমান্ডিং অফিসার সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে নিয়োগ করা হতো। যে কারনে বিডিআর ছিল একটি শক্তিশালী প্যারামিলিটারি। সেই পদুয়া থেকে বিডিআর হত্যাকান্ড মূলত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় সংগঠিত হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিডিআরের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত এবং শিক্ষা ও আইনবিদরা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র ক্রমান্বয়ে বিঘ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ইস্যুগুলোকে আলোচনার  জন্য কোনো আঞ্চলিক ফোরাম নেই। তারা বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তকে অরক্ষিত করে পুরো দেশকে প্রতিবেশী দেশের জিম্মি করা হয়েছে। যা দুই দেশের জন্যই বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা সুদূর পরাহত থাকবে।

বক্তারা দীর্ঘ ১৫ বছর পরেও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন না হওয়া এবং কারাগারে অন্তত ৫০ জন গুরুত্বপূর্ণ আসামি ও সাক্ষীর রহস্যজনক মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাবলিক ইনকোয়ারি কমিটি ও মিলিটারি এনকোয়ারি কমিটির রিপোর্ট কোনটাই প্রকাশ করা হয়নি বলে এই হত্যাকাণ্ডে অসংখ্য প্রভাবশালী মানুষের জড়িত থাকার অভিযোগ মানুষের মনে সংশয় দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে।

মূল প্রবন্ধে ব্যারিষ্টার মোঃ জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও নিরাপত্তা এবং সীমান্তকে নিরাপদ করতে সরকারের উচিত অবিলম্বে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে পূর্ণাঙ্গ পাবলিক ইনকয়ারি ও বিচার সম্পর্কে প্রকাশ করা। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে ভারত এবং অনির্বাচিত সরকারের ক্রীড়ানকে পরিণত করায় স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে দেশের জনসাধারনকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। তারা বলেন, পাকিস্তানে ইমরান খানকে নিশ্চিহ্ন করার সবধরণের অপচেষ্টা হলেও দেশটিতে বিচার বিভাগ শক্তিশালী থাকায় জনগণ তার অধিকার ফিরে পাবার সুযোগ তৈরী হয়েছ। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতিটি অঙ্গ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। জনগণই পারে দেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নিতে।
প্রবন্ধে মেজর (অব.) জাকির হোসেন বলেন, একদিনে এতো সামরিক কর্মকর্তার মৃত্যু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও ঘটেনি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এই রক্তাক্ত ঘটনার বিচার এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে যেমন আপোষ চলে না এই বিচার নিয়েও কোন আপোষ চলতে পারেনা। তিনি এ ব্যাপারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. হাসানাত এম হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন অধিকার ফিরে পাবে এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিচার তখনই সম্পন্ন হবে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ অফিসার ও পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ এই শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে দেবে না।

Tags
Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close