খেলার পাতা

ব্যর্থতার দায়ভার কি শুধু খেলোয়াড়দের?

।। মুহাম্মাদ শরীফুজ্জামান।।

চলমান বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের এই ‘হাররথ’ কবে থামবে তা বলা মুশকিল। এমন হারের মিছিলে পুঁচকে নেদারল্যাণ্ডের বিপক্ষে যে বাংলাদেশ জিতবে তা এখন আর জোর করে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন হলো বাংলাদেশ দলের এই নাজুক অবস্থা? এই নাজুক পারফরম্যান্সের দায়ভার কি শুধু খেলোয়াড়দের? অবশ্যই না! দল ভাল করলে বিসিবিসহ দলের সাথে সম্পৃক্ত সবাই বাহবা নিতে ভুল করেন না। এমনকি সম্পৃক্ত না থেকেও দিকনির্দেশনার জন্য অনেককে বাহবা দেয়া হয়। আর খারাপ খেললে সব দায়ভার এসে পড়ে মাঠের এগারজন খেলোয়াড়ের উপর!

বিশ্বকাপের দল নির্বাচন নিয়ে অনেক নেতিবাচক সংবাদ আমরা পত্রপত্রিকায় পড়েছি। তামিমকে দলে না নেয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রিকেট প্রেমিরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের সাথে আমি ও মনে করি তামিমকে দলে না নিতে পারা নির্বাচক ও বিসিবির চরম ব্যর্থতা। তামিম-সাকিব যদি কোন ইস্যু থেকেই থাকে তাহলে তার সুষ্ঠ সমাধান না করতে পারা বিসিবির চরম ব্যর্থতা। তামিমের মত একজন অভিজ্ঞ ও ফর্মে থাকা ওপেনারকে দলে না নেয়ার কোন ব্যাখ্যাই ক্রিকেট প্রেমিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে দলের নাজুক পরিস্থিতিতে সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহর ও বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই না পাওয়া নিয়ে ছিল গুঞ্জন!

দলে বড় অঙ্ক বেতনের হেড কোচসহ আলাদা বোলিং ও ব্যাটিং কোচ আছেন, তারপরও দলে নিয়মিত ওপেনিং জুটি নেই। লোয়ার অর্ডার থেকে টেনে এনে ওপেন করানো হয়। সেই পুরনো দিনের মতো! যেভাবে মোহাম্মদ রফিককে দিয়ে বিশেষ সময় ওপেন করানো হতো। এখন মিরাজকে দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে।

দলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ও আছে আলোচনা-সমালোচনা। একটি টেস্ট দলের পাইপলাইনে জাতীয় দলে নেয়ার মতো পর্যাপ্ত  খেলোয়াড় না থাকার দায়ভার কি বিসিবি এড়াতে পারবে? দেশের ঘরোয়া লীগের দিকে নজর দিলে সহজেই অনুমেয় বিসিবি পাইপলাইনের খেলোয়াড় নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। তাদের অবশ্য চিন্তিত না হলেই চলবে। বিসিবির কর্তাব্যক্তিদের যে কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না! দল খারাপ করলে তো খেলোয়াড় অদলবদল হবে, তাদের আসনের অদলবদল হবে না। বছরের পর বছর তারা চেয়ার আঁকড়ে থাকতে পারবেন জবাবদিহিতা ছাড়া।

কারণ আমাদের ২০ কোটি মানুষের দেশে বেশ সহজে যে কোন খাবারের বিকল্প দেয়া গেলেও এসব চেয়ারের বিকল্প দেয়া যায় না। হোক না এই চেয়ারগুলোতে বসে থাকা মানুষগুলো চরম ব্যর্থ! অবশ্য এসব চেয়ারে যে রাজনৈতিক প্রভাব থাকে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা।  আর আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যেও অনেকে এখন সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত। মাশরাফি তো জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার আগেই হয়েছেন সংসদ সদস্য। ক্লাবের হয়ে এখন ও খেলছেন। পত্রপত্রিকা থেকে জানা গিয়েছিল দল নমিনেশন দিলে সাকিব ও সংসদ নির্বাচন করতে রাজি।

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একজন খেলোয়াড় অনেক নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চলার সাহস দেখাতে পারেন তা সাকিবকে দেখলেই বুঝা যায়।  সিরিজ চলাকালীন সময় শোরুম উদ্বোধন ও বিজ্ঞাপনের কাজে তার ব্যস্ত হয়ে পড়ার নজির রয়েছে। আর সাকিবের এইসব কর্মকান্ড নিয়ে বিসিবির কিছুটা হলেও আচানক নমনীয়তা পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বকাপচলাকালীন এই সময়ে বর্তমানেও তিনি দল ছেড়ে ঢাকায় আছেন।  একটি জাতীয় দৈনিকের খবর অনুযায়ী বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ঢাকায় নেমে দুপুরে এসেছেন মিরপুর শেরে-ই বাংলা স্টেডিয়ামে। দুপুরে মিরপুর স্টেডিয়ামের ইনডোরে জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে অনুশীলন করছেন তিনি।  দলের সঙ্গে যোগ দেবেন আগামী ২৭ অক্টোবর। এরপর ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে খেলবেন তিনি।

কথা হচ্ছে, সাকিবের মত বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন অলরাউন্ডারের যদি খারাপ সময়ে দেশে এসে জাতীয় দলের বাইরের একজন দেশীয় কোচের কাছে অনুশীলন করতে হয় তাহলে এত উচ্চ বেতনের বিদেশী কোচ রেখে লাভ কি! বিসিবি কেন বারবার বিদেশী কোচের পিছনে ছুঁটছে? দেশীয় কোচ রেখে কেন একবার পরীক্ষা করে দেখছে না। বিশ্বকাপকে সামেন রেখে হাতুরুকে নিয়োগ দিয়ে কতটা লাভবান হলো বিসিবি? আসলে বিসিবি বা জাতীয় দলের সমস্যা অনেক গভীরে। সমস্যার মূলে না গিয়ে সাময়িক উলটপালটে হয়তো সাময়িক কিছু ফলাফল দেখা যেতে পারে কিন্তু ‍নিকট ভবিষ্যতে আবার ফিরে যেতে হবে সেই পুরনো জায়গায়, আবার শোনতে হবে সেই পুরনো কাসুন্দি।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close