মুক্তকথা

রিজার্ভের ক্রমাবনতিতে ভারতীয় রুপীতে বাণিজ্য কার স্বার্থে?

।। মাহফুজুর রহমান ।।

ক্রমেই রিজার্ভের পরিমাণ কমছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের রিজার্ভ কমেছে ১১ কোটি ডলার। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমে ২১ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে রিজার্ভের এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুসরণ করলে গত বুধবার ১৮ অক্টোবর ২০২৩ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৬ কোটি ডলার, যা এর এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ১১ অক্টোবর ছিল ২ হাজার ১০৭ কোটি ডলার।

রির্জাভের ধারবাহিক এমাবনতি ঢাকতে চুপিসারে আনেক সিদ্ধান্তই কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের সাথে ভারতীয় রুপীতে বানিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকার। এই বছর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই সেটি কার্যকর হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে এটি পাইলট প্রজেক্ট। কিন্তু হঠাৎ আন্তর্জাতিক বিনিময় মূদ্রা ডলার ছেড়ে রুপীতে লেনদেনে সিদ্ধান্ত কেনো নিলো সরকার?

সরকার বলছে রিজার্ভে থাকা ডলারের উপর চাপ কমবে। তারমানে দাড়ালো দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানি করার মতো পর্যাপ্ত ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মজুদ নেই। প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবীক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার যে এতো দিন বলে আসছিলো রিজাার্ভে আমাদের কারি কারি টাাকা আছে হঠাৎ সেই আস্ফালন কোথায় গেলো?

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, (১২ জুলাই ২০২৩) দেশের রিজার্ভ ২ হাজার ৯৯৭ কোটি ডলার ( ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন) ডলার। তবে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রকৃত রিজার্ভে ৬৪০ কোটি ডলার সরকারের দেয়া হিসাবে গড়মিল ছিলো যা বাদ দেওয়া হয়েছে। সে কারণে প্রকৃত রিজার্ভ নেমে দাঁড়িয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের । প্রতি মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সারে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ।

এই সরকার সব সময়ই দেশের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে ফুলিয়ে ফাপিয়ে প্রচার করে। যার কারণে দেশের জনগনের কাছে এই সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমারা যে শুনি চারিদিকে শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন এতো উন্নয়ন কার পকেটে গেলো? এখন প্রশ্ন হলো তড়িঘড়ি করেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেনো ভারতীয় রুপীতে ভারতের সাথে লেনদেন শুরু করতে চাচ্ছে। তারা বলছে আমেরিকান সেংশন আসলে যাতে বাংলাদেশকে বিপাকে পরতে না হয়। তারমানে সরকার এমন কাজ করতে যাচ্ছে যার কারণে আমেরিকা বাংলাদেশের উপর অর্থনৈতীক অবরোধ আরোপ করতে পারে।

যেকোন দেশের সরকার অবশ্যই যেকোন সিদ্ধান্ত নিবে তার দেশের কথা চিন্তা করে এটিই তো স্বাভাবিক তাই না। আসেন আমরা দেখি ভারতের রুপিতে বানিজ্য করলে কার লাভ কার ক্ষতি। বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রতিবছর পন্য আমদানি করে ১৪ বিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশ ভারতে রফতানি করে ২ বিলিয়ন ডলার। এই ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমান পন্য বাংলাদেশ থেকে ভারত কিনবে রুপীতে। অর্থাৎ কয়েকটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পন্য নিয়ে যাবে ভারত। এই রুপী ভারত থেকে আমদানীকৃত ১৪ বিলিয়ন ডলারে ব্যবহার করা যাবে কিন্তু বাকী ১২ বিলিয়ন ডলারের পন্য বাংলাদেশকে ডলারেই পে করতে হবে। সেই অর্থে ডলারের উপর চাপ তো কমছেই না। উল্টো ভারতে যে যৎসামান্য পন্য রফতানি করে বাংলাদেশ যে ডলার পেতো তাও পাবে না।

বাংলাদেশ থেকে ভারত ২ বিলিয়ন সমপরিমান পন্য মাগনা বা কয়েকটা অচল কাগজের টুকরা রুপী দিয়ে নিয়ে যাবে। এই রুপী দিয়ে বাংলাদেশ কি করবে? আবার ভরতকেই দিতে হবে। ফলে ভারতের কাছে বাংলাদেশ পন্য আমদানীর ক্ষেত্রে জিম্মি হয়ে রইল। কারণ এই রূপীতো অন্য কনো দেশ থেকে পন্য আমদানী করতে চাইলে ব্যবহার করা যাবে না।

সম্প্রতি ভারত রাশিয়া থেকে রুপিতে তেল কিনেছিলো এখন রাশিয়া বলছে এই রুপী তারা কনো কাজে লাগাতে পারছে না। সম্প্রতি ভারতের গোয়ায় সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে যোগ দিতে এসে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, ভারতীয় মুদ্রা তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজে লাগাতে পারছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রুপি পুরোপুরি সোনা বা অন্যান্য দেশের মুদ্রায় রূপান্তরযোগ্য নয়, আবার আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারে ভারতের হিস্যা মাত্র ২ শতাংশ। সে জন্য ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করতে তারা আগ্রহী নয়।

বড় প্রশ্ন হলো নিশ্চিত ক্ষতি জানা সত্যেও বাংলাদেশ কেনো একই দিকে যাচ্ছে।

মাহফুজুর রহমান- লেখক, সাংবাদিক

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close